ম্যাডাম না ডাকায় সই দিতে নারাজ কর্মকর্তা, বললেন ‘আমার মতো চাকরি পেয়ে দেখাও’

ছবি- সংগৃহীত।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর বর্ষের দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে এমন আচরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কর্মকর্তাকে “ম্যাডাম” সম্বোধন না করায় দুই শিক্ষার্থীর স্নাতকের সনদ উত্তোলনের ফরমে সই না করার অভিযোগ উঠেছে।

সোমবার (১৫ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে এই ঘটনা ঘটে বলে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীর বরাতে জানিয়েছে অনলাইন গণমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউন। ভুক্তভোগী জারিফাহ তাসমিয়াহ প্রেরণা ও রিদওয়ানুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী।

তাদের অভিযোগ, স্নাতকের সনদ উত্তোলন কার্যক্রমের জন্য তারা সই নিতে অর্থ ও হিসাব দপ্তরে যান। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা না থাকায় তাদের অর্থ ও হিসাব দপ্তরের কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারের কাছে যেতে বলা হয়। তানিয়া আক্তারের কাছে পরপর দুইবার যেতে হয় তাদের।

দ্বিতীয়বার গেলে তানিয়া বলেন, “আপনাদের আমি সই দেবো না। আপনাদের সম্বোধন ঠিক নেই। আপনারা ম্যাডাম না ডেকে আপু কেন ডাকছেন?”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দুজন বলেন, “এ সময় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদের স্যার-ম্যাডাম ডাকার বিষয়ে কোথায় লেখা আছে জানতে চাইলে কথোপকথনের একপর্যায়ে তানিয়া আক্তার বলেন, ‘আপনারা কীভাবে সার্টিফিকেট নেন তা দেখে নেবো।’ এছাড়া তিনি আমাদের যোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলে তার মতো চাকরি পেয়ে দেখাতে বলেন।”

শেষ পর্যন্ত অর্থ ও হিসাব দপ্তরের হিসাব কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার উল্লিখিত দুই শিক্ষার্থীর ফরমে সই করেননি। তার পরিবর্তে অন্য এক কর্মকর্তা সই করেন।

এ বিষয়ে রিদওয়ানুল ইসলাম বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে এসে এ রকম ঘটনা অপ্রত্যাশিত। এর আগেও বিভিন্ন সহপাঠীদের কাছে প্রশাসনিক ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের কথা শুনেছি। আজ নিজের সঙ্গেই হলো। নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন আচরণের সম্মুখীন হওয়া লজ্জাজনক।”

এমন কোনো বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।

এ বিষয়ে হিসাব কর্মকর্তা তানিয়া আক্তারের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. আবু তাহের বলেন, “শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। তিনি (হিসাব কর্মকর্তা) চাকরিতে নতুন তাই হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারেননি। বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।”

“স্যার” ও “ম্যাডাম” ডাকা নিয়ে প্রায়ই হেনস্তার মুখে পড়তে হয় সেবাগ্রহীতাদের। গত মার্চে প্রায় চারটি এমন অভিযোগ আসে সংবাদমাধ্যমে। রংপুরের জেলা প্রশাসক ও রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের ঘটনায় ফেসবুকে তুমুল সমালোচনা তৈরি হয়।

তখন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, “সরকারি কর্মচারীরা জনগণের সেবক। তাদের স্যার বা ম্যাডাম ডাকার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ভদ্রতার খাতিরে অনেকে স্যার বা ম্যাডাম ডাকেন। কিন্তু এটি ডাকা বাধ্যতামূলক কিছু নয়। কেউ যদি আপা বা ভাই ডাকেন, তাতে দোষের কিছু নেই। এতে মাইন্ড করারও কিছুই নেই। সরকারি চাকরিজীবীরা জনগণের সেবক- এই চিন্তা থেকেই কাজ করতে হবে।”

এবার স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানেও এমন বিড়ম্বনা ও হেনস্তার অভিযোগ উঠলো।

মে  ১৬, ২০২৩ at ১৬:৩৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর