কুবিতে চাকরি পাচ্ছে হত্যা মামলার আসামি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) মার্কেটিং বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও কাজী নজরুল ইসলাম হল ছাত্রলীগের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ সাইফুল্লাহকে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত আরেক আসামিকে কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে যাচ্ছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০১৯ সালে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে প্রায় চার বছর এ নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন প্রশাসন। এর আগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর ঐ প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে লিখিত পরীক্ষার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে পরে আর ভাইবা বোর্ড ডাকেনি প্রশাসন। তবে সোমবার (১৫ মে) মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

জানা যায়, চাকরির প্রার্থীর নাম রেজাউল ইসলাম মাজেদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে চাকরির দাবিতে গেল বছরের ৩১ মার্চ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্যের কক্ষে চাকরির জন্য উচ্চবাচ্য করেন রেজাউল ইসলাম মাজেদ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে উপাচার্যের সাথে একান্ত আলোচনা করতে চাইলে তখন দপ্তর থেকে বেরিয়ে আসেন উপাচার্য। পরে নিয়োগ ও টেন্ডারের দাবিতে উপাচার্যের গাড়ি আটক করে রাখেন তিনি। এসময় তাঁর সাথে সঙ্গ দেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিও। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে আরো উচ্চবাচ্য হলে উপাচার্যকে লক্ষ্য করে, ‘ষড়যন্ত্র করিস নারে, পিঠের চামড়া থাকবে না’, ‘জামাত-শিবিরের চামড়া, তুলে নেব আমরা,’ ‘বিএনপি-জামাতের প্রশাসন, হুঁশিয়ার সাবধান’ বলে ¯স্লোগান দেন তাঁর নেতাকর্মীরা।

চাকরি পাচ্ছে হত্যা মামলার আসামি

এদিকে গাড়ি আটকের পর গণমাধ্যমে দেওয়া এক বক্তব্যে রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, ‘দলের জন্য সবকিছু করেছি। এখন আমার বয়সও চলে যাচ্ছে। এ অবস্থায় চাকরি চাই। উপাচার্যের কাছে একাধিকবার গেছি। তিনি কোনো সাড়া দিচ্ছেন না।’

এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তাঁর হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মী থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর মারধরের শিকার হন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক স্বজন বরণ বিশ্বাস ও তার নেতাকর্মীরা। ২০২০ সালের ৯ মার্চ দুই ছাত্রলীগ নেতা মোবারক হোসাইন মাহী ও মমিন শুভ’কে মারধর ধরে হল থেকে বের করে দেন তিনি।

সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা থাকতেন শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের ৩০১ নং রুমে। এই কক্ষে বিভিন্ন সময়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের রাতভর নির্যাতন করতেন তিনি। এসময় তাদের থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদেরও ক্যাম্পাসে এনে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করতেন তিনি। ২০১৭ সালের ৫ জুন ক্যাম্পাস থেকে সাধারণ সম্পাদক মাজেদের কক্ষে ডেকে নিয়ে যায় মামুন চৌধুরী (গণিত ৭ম ব্যাচ) ও পরিসংখ্যান ৮ম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন তিনি। তাছাড়াও মাজেদ আতঙ্কে অনেকেই পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি।

এছাড়াও বিভিন্ন আঞ্চলিক কমিটি, বিভাগীয় সহায়ক কমিটিতে একক আধিপত্য ছিল মাজেদের। তার অনুসারী শিক্ষার্থীদের কমিটিতে আনতে বিভিন্ন সময়ে চাপ সৃষ্টি করতেন তিনি। এমনই এক ঘটনা ঘটে চট্টগ্রাম স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ তারেকুল ইসলামের সাথে। জোর করে স্বাক্ষর নিতে গেলে পরে আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়েন তরিকুল। পরে এ ঘটনায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে করা মাজেদের বিভিন্ন অপকর্ম তুলে ধরেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধর করলে তাদের মারধরকে যৌক্তিক বলে প্রতিষ্ঠা করতেন তিনি।

এদিকে খালেদ সাইফুল্লাহর মা ফাতেমা আক্তার কান্না স্বরে জানান, সবাই আমার ছেলের হত্যাকাণ্ডের বিচারের আশ্বাস দিলেও দিলেও কেউ কথা রাখেননি। তাদেরকে বারবার বলেছি আপনারা তাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দিবেন না। কিন্তু প্রশাসন বারবার তাদের চাকরি দিচ্ছে। নতুন করে ভর্তি নিচ্ছে (সান্ধ্যকালীন)। তারাই আবার ছাত্রলীগের নতুন পদপ্রার্থী। মাজেদকে চাকরি দেওয়া মানেই হলো আমাকে অপমান করা। একজন মাকে অপমান করা।
এদিকে রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি লিখিত পরীক্ষায় পাশ করার কারণে প্রশাসন আমাকে ভাইবার জন্য ডেকেছে। প্রশাসন যদি আমাকে যোগ্য মনে করে তাহলেই আমাকে চাকরি দিবে। এর আগেও খালেদ সাইফুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের কয়েকজন আসামি চাকরি পেয়েছে। আর ছাত্রলীগ হলে কি চাকরি করা যাবে না।

এর আগে চাকরির জন্য উপাচার্যের গাড়ি অবরোধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, গাড়ি অবরোধ চাকরি কোনো বিষয়ে করা হয়নি। আমাদের সাথে একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল, সেজন্য গাড়ি অবরোধ করেছিলাম।

ছাত্রলীগ নেতাকে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চেয়ে উপাচার্য এএফএম. আবদুল মঈনকে একাধিকবার কল দিয়েও পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পরীক্ষায় কে নির্বাচিত আমার জানা নাই। তাই এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে রাজি না।

মে  ১৫, ২০২৩ at ১৩:১৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/তুই/ইর