হতে চেয়েছিলেন অভিনেতা, নির্মাতা, কিন্তু হয়ে উঠেছেন গানের মানুষ!

ছবি- সংগৃহীত।

হতে চেয়েছিলেন অভিনেতা, নির্মাতা। কিন্তু তার প্রধান পরিচয় হয়ে উঠেছে গানের মানুষ। শ্রোতার কানে অন্যরকম গানের আবেশ তার গান। বলা চলে পাল্টে দিয়েছেন বাংলা গানের ধারা। গানের ভেতর পুরো চিত্রনাট্য নিয়ে হাজির হওয়া শিল্পী তিনি। কৈশোর আর যৌবনের অস্থিরতার মধ্যে যার গান বুঁদ করে রাখতে পারে তিনি অঞ্জন দত্ত।

আজ ১২ মে। দিনটা শুরু হলো কাকতালীয়ভাবে অঞ্জনের মালা গান শোনার মধ্য দিয়ে। ইউটিউবে ঢুকেই প্রথমে এলো গানটি। শোনা হলো। আবার সেই মালাকে চেনার আগ্রহ। কেন জীবন থেকে চলে গিয়েছিল; মালার জন্মদিন, তোড়া তোড়া ফুল, স্বামীর দেওয়া বিদেশি উপহার, অভিমান, শরীরের গন্ধ, সাঁতার শেখা- সবকিছুকেই একসঙ্গে তুলে ধরে অঞ্জন প্রশ্ন রেখেছেন সাজানো শরীরের ভেতরে আসলে মালা কে? যে ঘুমের ঘোরে প্রত্যেক রাতেই অন্য কোথাও চলে যায়!

মানুষের মন সহজাতভাবেই দ্বিচারি। হয়তো বাইরে এক আর ভেতরে ভেতরে তুমুল আলোড়ন। সেই স্বত্বাকে সামনে নিয়ে আসার কারণেই হয়তো অঞ্জন আস্ত একটা দিন তার একটা গানকে দিয়ে দখল করিয়েছেন। আজ সেই ১২ মে।

মালা নিয়ে মানুষের আগ্রহ আজকের নয়, বহুদিনের। সেইসব প্রশ্নের সরাসরি কোনো উত্তর দেননি অঞ্জন। তবে তিনি জানিয়েছিলেন মালা মৌলিক গান নয়।-

পিটার সারস্টেড নামের এক ভিনদেশি গায়কের “হোয়্যার ডু ইউ গো টু মাই লাভলি” গানকে উপমহাদেশীয় ভাষায় আর আবহে রূপ দিয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই গান যে শুধু পিটার সারস্টেডের থাকেনি তা বোঝা যায় এর জনপ্রিয়তা দেখে।

পিটার গেয়েছিলেন মেরি নামের এক তরুণীকে নিয়ে; যার বাস ছিল ইতালির কোনো এক বস্তিতে। দরিদ্র পরিবার থেকে আসা মেরির একদিন বনেদিপাড়ায় ঠাঁই হয়েছিল। সমাজের উঁচুতলায় যার যাতায়াত। তাকে ঘিরে রকমারি আয়োজন। কিন্তু এত শুভার্থীর ভিড়েও অবচেতনে মেরি ফিরে যায় তার অচ্ছুত অতীতে। কোনো এক পুরোনো প্রেমিকের স্মৃতি রোমন্থনে।

লোকমুখে শোনা যায়, পিটার অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সোনালি যুগের নায়িকা সোফিয়া লরেনের জীবন থেকে। সেই সোফিয়াই হয়তো মেরি রূপে গানে জায়গা করে নিয়েছে। তবে এসব প্রচলিত গল্পের কোনো প্রমাণ নেই।

গান অঞ্জনকে হারিয়ে যেতে দেয়নি। তাকে দিয়েছে সগৌরবের সিংহাসন। যেখানে তিনি রাজা হয়ে বসে আছেন। আর লাখ লাখ তরুণ-যুবা সেই রাজার সামনে বসে আছেন; তারা তাদের রাজার কাছে গান শুনতে চান। গানের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়কে শাসন করেন অঞ্জন। তবেু তার সিনেমার জন্য আক্ষেপ ফুরোয় না।

কয়েক বছর আগে ঢাকায় এক টিভি সাক্ষাৎকারে অঞ্জন বলেছিলেন, এখন গানই আমার পরিচয়। কিন্তু আমি আসলে অভিনেতা হতে চেয়েছি। বড় মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি বটে, কিন্তু বড় অভিনেতা হতে পারিনি। আমি এখন আর নতুন করে অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করি না। আমি মনে করি, একটা সময় যেভাবে অভিনেতা হওয়ার জন্য কাজ করেছি, তা এখন আর সম্ভব নয়। যদি বয়স কম হতো, তাহলে অভিনেতাই হতে চাইতাম। তবে গান না গাইলে হয়তো হারিয়েই যেতাম।

গান-সিনেমায় একাকার অঞ্জনের দখল করা দিন আজ। আজ মালার জন্মদিন।

মে  ১২, ২০২৩ at ১১:৪৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর