এক ঘণ্টা কল চাপলেও এক বালতি পানি ওঠে না!

ছবি- সংগৃহীত।

আমরা পানি বেগোরে (ছাড়া) এতটাই কষ্টে আছি বলে বোঝাতে পারব না। এক মগ জল বের করতে এতো চাপতে হয়, চাপতে চাপতে আমাদের গাও হাপশিয়া (ক্লান্ত হওয়া) যায়। এক ঘণ্টা কল চাপলেও এক বালতি পানি ওঠে না। জলের প্রয়োজন আমরা কোনোভাবেই মেটাতে পারছি না।’ কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রামপুরা গ্রামের সাথী রানী।

তিনি বলেন, এই গ্রামের প্রত্যেকটা বাড়িতে নলকূপ দিয়ে ঠিকমতো পানি ওঠে না। এক মগ পানি তুলতে দশ থেকে বারো বার চাপ দিতে হয়। আমরা খুবই কষ্টের মধ্যে আছি। এই গ্রাম থেকে হাফ মাইল দূরে একটা ডিপ মেশিন (গভীর সেচ পাম্প) আছে সেখান থেকে আমরা পানি নিয়ে এসে আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম করি। কিন্তু ওই পানি পান করা যায় না। যাদের বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প আছে, সেই বাড়ি থেকে পানি এনে আমরা খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার করি।

আরো পড়ুন :
> জাবিতে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে পাবনা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির পাল্টাপাল্টি কমিটি
> ঢাকা-দিল্লিকে পানি নিয়ে নতুন বার্তা দিলেন মমতা

শুধু সাথী রানী নয়, এই গ্রামের সূর্য বালা, অতসী রানী, সুজন কুমারসহ শত শত মানুষের বাড়িতেও একই অবস্থা। সুপেয় খাবার পানির সংকটে পুরো গ্রাম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের রামপুরা গ্রাম ছাড়াও চকরহিমাপুর, খামারপাড়া, সাহেবগঞ্জ, মেরী, তরফকামালসহ অন্তত ১০ গ্রামে দেখা দিয়েছে খাবার পানির সংকট। এছাড়াও কাটাবাড়ী ইউনিয়নের মাহমুদবাগ, বাগদা, বেলতলা, গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের তরফমনু, কাইয়াগঞ্জ, গুমানীগঞ্জ, ফুলপুকুরিয়াসহ উপজেলার কামদিয়া, রাজাহার,শাখাহার ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে খাবার পানির সংকট রয়েছে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, র্দীঘদিন ধরে বৃষ্টি না হওয়া, পুকুর ও নদীতে পানি না থাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নলকূপ ও পানির পাম্প বসিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। সংকট মোকাবেলা করতে সামর্থবানরা অনকেই বাসা-বাড়িতে সাবমারসিবল পাম্প বসিয়ে পানি সংগ্রহ করলেও স্বল্প আয়ের মানুষ ও শ্রমজীবীরা পরেছেন বিপাকে।

উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের সন্তোষ কুমার মোহন্ত বলেন, আমার বাড়ির পাশে করতোয়া নদী, তবুও নলকূপ থেকে পানি উঠছে না। গোসলসহ ধোয়া মোছার কাজ নদীর পানি দিয়ে করলেও খাবার পানির জন্য বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে অন্যের বাড়িতে কিংবা সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের বড় সেচ পাম্পে।

একই গ্রামের গনেশ চন্দ্র মোহন্ত বলেন, সকালের দিকে নলকূপে কোনো পানি থাকে না। ঘণ্টা খানেক চাপার পর বালতিতে কিছুটা পানি ওঠে। যে পানি দিয়ে আমাদের পরিবারের কোনো কাজই হয় না। বাড়ির অসূরে সেচ পাম্পের পানি দিয়ে আমরা প্রয়োজন মেটাই। সরকার যদি আমাদের দিকে একটু নজর দিতো তাহলে খুব উপকার হতো।

কাটাবাড়ি ইউনিয়নের কাটাবাড়ি গ্রামের বাদশা মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহে তিন দফায় নলকূপ ঠিক করেও কোনো কাজ হয়নি। রাতে সামান্য পানি উঠলেও সারাদিন কোনো পানি ওঠে না। দীর্ঘ দেড় মাস যাবৎ রান্নাবান্না ও দৈনন্দিন কাজে পানির অভাব হারে হারে টের পাচ্ছি। বিশেষ করে খাবার পানির সংকট আমাদের বেশি কষ্ট দিচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাহা আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর পানির স্তর আরও বেশি নেমে গেছে। যে কারণে এখন সাধারণ দূরত্বের তুলনায় ইউনিয়নের আরও গভীরে নলকূপ স্থাপন করতে হচ্ছে। এজন্য বিশেষ ব্যবস্থায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পানি সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোতে পাম্প বসানো হচ্ছে। তাছাড়া আশা করা হচ্ছে খরা মৌসুম কেটে গেলে বৃষ্টিপাত শুরু হলে টিউবওয়েলগুলোতে স্বাভাবিকভাবে পানি উঠবে।

এ ব্যাপারে সাপমারা ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সাপমারা ইউনিয়নের অন্তত ১০/১২টি গ্রামে খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে দিনের বেলা নলকূপ থেকে পানিই ওঠে না। ভূগর্ভস্থ পানির লেয়ার নিচে দেবে গেছে। বিষয়টি আমি উপজেলা প্রশাসনসহ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে জানানো হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে কয়েকটি গ্রামে ৪০/৫০ টি পরিবারের জন্য ডিপ-টিউবওয়েল থেকে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। পর্যায়ক্রমে বেশি সংকটপূর্ণ এলাকাগুলোতে পানি সরবরাহের কথা জানিয়েছে।

মে  ০৬, ২০২৩ at ১১:৪০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/ইর