সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) পড়ুয়া পাবনা জেলার শিক্ষার্থীরা আলাদা নামে সংগঠন খোলার পাশাপাশি পাল্টা কমিটি ঘোষণা করেছেন। পাবনা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতির ২০২৩ সেশনের কমিটি ঘোষনার পরেই সাবেক কমিটির বিরূদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তোলেন শিক্ষার্থীদের একাংশ। এরপর পাবনা জেলা সমিতি নামে আলাদা সংগঠন খুলে কমিটিও ঘোষণা করেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপদেষ্টা এবং সাবেক সিনিয়রদের কোনোরূপ অনুমোদন ছাড়াই সদ্য বিদায়ী সভাপতি জাহিদ হাসান ইমন ও সাধারণ সম্পাদক আশেক মাহমুদ সোহান নিজেরদের মতের ভিত্তিতে অর্থনীতি বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী জাফর ইমামকে সভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান সুমনকে সাধারণ সম্পাদক দিয়ে ১১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি ঘোষণা করে। তবে কমিটি ঘোষণার পূর্বে অনুষ্ঠিত নবীন বরণ প্রোগ্রামের পরপর একইসাথে দুইটি আইফোন ১৪ প্রো মেক্স (১ লাখ ৯০ হাজার টাকা) ক্রয় করেন ইমন ও সোহান। এর প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। তবে সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তারা।
আরো পড়ুন :
> ঢাকা-দিল্লিকে পানি নিয়ে নতুন বার্তা দিলেন মমতা
> লন্ডনে শেখ হাসিনা-ঋষি সুনাক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক
এদিকে কমিটি ঘোষণা করার পর, সংগঠনের উপদেষ্টা রসায়ন ২২ ব্যাচের মামুন মাহমুদ, গণিত ৩৫ ব্যাচের মো. শরিফুল ইসলাম, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ৪৪ ব্যাচের মো. শরিফুল ইসলাম, গণিত ৩৫ ব্যচের মো. আনোয়ার কবির জসিম, রসায়ন ৪২ ব্যাচের মো. মামুন হোসেন, অর্থনীতি ৩৮ ব্যাচের রুহুল আমিন সিদ্দীকের পরামর্শে রাসায়ন ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী সৌরভ মাযহারকে সভাপতি ও বাংলা ৪৮ ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মিশাদকে সাধারণ সম্পাদক করে পাল্টা কমিটি ঘোষণা করা হয়। যদিও সদ্য সাবেক কমিটি জানায়, এই উপদেষ্টা পরিচয় দেওয়া ব্যাক্তিরা কখনো জেলা সমিতির সর্বোচ্চ পদে ছিলেন না এবং উপদেষ্টা হিসেবে তাদের মনোনীত করা হয়নি।
পরের কমিটির সভাপতি সৌরভ মাযহার জানান, জাফর-সুমনকে কমিটি ঘোষণা করেছে সাবেক কমিটির ইমন ও সোহান। ইমন-সোহান ও তাদের করা কমিটি উপদেষ্টা শিক্ষদের সাথে অশোভন আচরন করায় শিক্ষকরাও উদ্ভুদ্ধ এই পরিস্থিতি সমাধান করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। এমনকি সাবেক কমিটি ইমন-সোহান এর আয়োজনে করা নবীন বরণ প্রোগ্রামের আয় ব্যায়ের হিসাব-নিকাশ প্রকাশ করা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, নবীন বরনকে কেন্দ্র করে ২০ লাখ টাকার মতো ফান্ডিং এসেছে শোনেছি কিন্তু এতো টাকা উক্ত অনুষ্ঠানে খরচ হয়নি। ইমন ভাই ও সোহান প্রোগ্রামের পরপর দুই জনে দুটি আইফোনও কিনেছে। এতো বড় অংকের টাকার কোনো হিসাব নিকাশ তারা কমিটির অন্যান্য সদস্য বা উপদেষ্টাদের কাছে প্রকাশ করেনি।
সাবেক কমিটির সাধারণ সম্পাদক নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা যে কমিটি দিয়েছি সেটাই মূলত আমাদের জেলার শিক্ষার্থীদের কল্যাণে প্রতিষ্ঠা করা কমিটি। আরেকটি কমিটি যেটা দেখা যাচ্ছে সেটা আমাদের জেলা সমিতি নয়।
অর্থিক হিসাব নিকাশের ব্যাপারে তিনি বলেন, আমাদের জেলার মধ্যে আমরাই এতো বড় একটা প্রোগ্রাম করেছি। বাজেটেরও বেশি বড় প্রোগ্রাম করেছি। আমাদের উপদেষ্টারা সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেছেন। সম্পূর্ণ হিসাব-নিকাশ আমরা ক্যাম্পাস খোলার পর উপদেষ্টাদের কাছে উপস্থাপন করবো।
সাবেক কমিটির সভাপতি জাহিদ হাসান ইমন বলেন, নবীনবরণ প্রোগ্রামে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে। আমরা আমাদের উপদেষ্টাদের আহ্বায়ক থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম কিন্তু তারা থাকতে নারাজ হয়েছেন। পরবর্তীতে আমরাই উদ্যোগ নিয়ে আয়োজন করেছি। যারা বলছে আমার কমিটি এই প্রোগ্রামের টাকায় আইফোন কিনেছি তারা মূলত নিজেদের অদক্ষতা ও অপরাধ ঢাকতে এমন করছে।
আরেকটি কমিটি গঠন হওয়ার ব্যপারে তিনি বলেন, ওই কমিটির সভাপতি সৌরভ মাযহারের বিরূদ্ধে পূর্বের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে এবং সে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছিলো। তার বিপরীতে অন্য স্বচ্ছ প্রার্থী থাকায় আমরা তাকে কমিটিতে রাখিনি। এই ক্ষোভে সে পাবনা জেলা সমিতি নামে আরেকটি কমিটি দিয়েছে, অথচ আমাদের সংগঠনের নাম পাবনা জেলা ছাত্রকল্যাণ সমিতি।
কমিটি বিভক্তির ব্যাপারে একাংশের কমিটির সভাপতি জাফর ইমাম বলেন, একটা সংগঠনের দায়িত্ব পালন করতে হলে অন্তত সংগঠনের বাকি মানুষদের সাথে যোগাযোগ থাকাটা সমীচীন। তাছাড়া যে আর্থিক বিষয়ের বরাত দিয়ে নতুন কমিটি দেওয়া হলো সেটাও ভিত্তিহীন। পুরো প্রোগ্রামে সৌরভ মাযহার দৃশ্যমান কোনো কাজ করেনি, অন্যদিকে আমি সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেছি সাবেক কমিটিকে। কোথায় কতো টাকা খরচ হয়েছে তার একটা খসড়া আমাকে কমিটি দেওয়ার সময় দেখানো হয়েছে এবং এর অনেক খরচ আমি থাকা অবস্থায়ই সংগঠিত হয়েছে। তাই লেনদেন নিয়ে সংশয়ের সুযোগ নেই। তাছাড়া সৌরভ মাযহারের বিরূদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হয়েছিলো।
মে ০৬, ২০২৩ at ১১:২৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নাই/ইর