টানা ৭ দিন ধরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়

চৈত্রের শেষের দিকে এসে তেঁতে উঠেছে প্রকৃতি। ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকা মাঝারি ধরনের এই তাপপ্রবাহে পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা । এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। সোমবার ( ১০ এপ্রিল ) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
রোববার ( ৯ এপ্রিল ) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এটি চলতি মৌসুমের জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস। শনিবার ( ৮ এপ্রিল ) বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ।

আরো পড়ুন :
> বেআইনি শ্রমিক ছাঁটায়ের প্রতিবাদে যশোরে হোটেল শ্রমিকদের বিক্ষোভ মিছিল
> বেনাপোলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুরি যাওয়া মালামাল সহ চোর গ্রেফতার

এদিকে পবিত্র রমজান মাসে প্রচণ্ড গরম হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বের হচ্ছে না । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে লোকের আনাগোনাও কমে যাচ্ছে । অর্ধেক রমজান অতিবাহিত হলেও শহরের কাপড়ের মার্কেটগুলোতে তেমন ক্রেতা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা । সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত কিছু ক্রেতা আসলেও ঈদের বাজার পুরোপুরি জমে উঠেনি ।

চুয়াডাঙ্গা সমবায় নিউ মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী চুয়াডাঙ্গা ক্লথ স্টোরের মালিক ফয়সাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ১০ রমজান থেকে ঈদের কেনাকাটা জমে উঠতো । আজ ১৮ রমজান হলেও সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ক্রেতাদের তেমন দেখা মিলছে না ।  সন্ধ্যার পর শহরের কিছু ক্রেতা আসছেন। তাপদাহ কেটে গেলে ঈদ বাজার জমে উঠবে ।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান গণমাধ্যমে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা কর্কটক্রান্তি রেখার কাছাকাছি হওয়ায় মার্চ ও এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি থাকে ।  সাধারণত প্রতিবছর এ মৌসুমে কালবৈশাখীর সঙ্গে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে । এ বছর এখন পর্যন্ত সে ধরনের পরিস্থিতি হয়নি । এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মার্চে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে । এপ্রিলে তাপমাত্রা আরও বেড়েছে ।

এদিকে প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ জরুরি কাজ না থাকলে তেমন বাইরে বের হচ্ছেন না । এর প্রভাব পড়েছে পয়লা বৈশাখ ও ঈদের বাজারে । শহরের সমবায় নিউমার্কেটের তৈরি পোশাক বিক্রেতা নিউ সম্পা গার্মেন্টসের মালিক খন্দকার শামীম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে গরমের কারণে দিনের বেলায় তেমন ক্রেতার দেখা মিলছে না । সন্ধ্যার পর ক্রেতা কিছুটা বাড়ে ।

বেসরকারি চাকরিজীবী ইমদাদুল হক বলেন, কয়েকদিন ধরে চলাচল করা কঠিন হয়ে গেছে । ঘরের ভেতরে ফ্যান চললেও তাতে কাজ হচ্ছে না ।  বাইরে বের হলে তীব্র গরমে শরীর ঘামে ভিজে যাচ্ছে ।

কৃষকরা বলছেন, এখন ভুট্টা কাটা ও বোরো ধানের ভরা মৌসুমে তীব্র খরা ।  প্রতিদিন ধানে পানি দেওয়া লাগছে । বৃষ্টির দেখা নেই । আবার ভুট্টা কাটতে হচ্ছে । বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের প্রচণ্ড তাপে মাঠে কাজ করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে ।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দুই বছরের ছেলে সাদিককে ভর্তি করা হয়েছে । তার মা শারমিন আরা বলেন, গত দুদিন হাসপাতালে আছি ছেলেকে নিয়ে । ওয়ার্ডের সব ফ্যান চললেও আমার মাথায় ওপরের ফ্যানটা নষ্ট । এই গরমে ছোট বাচ্চা ছটফট করছে । বাধ্য হয়ে হাতপাখা কিনে বাতাস দিতে হচ্ছে । তবে রাতের বেলা কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসছে ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, সোমবার ( ১০ এপ্রিল ) সন্ধ্যা ৬টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। ধারাবাহিকভাবে টানা ৯ দিন দেশের মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে । চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে । তাপমাত্রা আরও বাড়বে ।

জানা গেছে, প্রখর তাপের পাশাপাশি অতিরিক্ত বাতাসের আর্দ্রতা থাকায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে । প্রখর রোদে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ । হাট বাজারে নেই তেমন জনসমাগম । বাজারে ক্রেতার সমাগম না থাকায় বেচা বিক্রিতেও দেখা দিয়েছে মন্দা । এই তাপদাহে কাজ না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন অনেক শ্রমজীবী মানুষ ।

দামুড়হুদা মালিক সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী শাহীন আলী জানান, এই প্রচণ্ড গরমে বাজারে আসছে না মানুষ । ঈদ উপলক্ষে বেচা বিক্রি তেমন শুরু হয়নি । এ সময় অন্য বছরগুলোতে বেশি বেচা-বিক্রি হতো । এবার ব্যবসায় মন্দাভাব ।

চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গায় গত কয়েক দিন ধরে মাঝারি তাপপ্রবাহ অব্যাহত রয়েছে । টানা সাত দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায়। তাপমাত্রা আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

এপ্রিল ১০, ২০২৩ at ২১:১৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/ আক/দেপ্র/ ইর