ঈদের হাওয়ায় ডলারে স্বস্তি

ছবি- সংগৃহীত।

দেশে রপ্তানি বেড়েছে। বাড়ছে ঈদকেন্দ্রিক রেমিট্যান্সও। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রথম কিস্তির ঋণ বাবদ ডলারও দেশে এসেছে। ফলে ডলার সংকটে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভের বাইরে জানুয়ারির চেয়ে মার্চ মাসে দেশের সবগুলো ব্যাংকে ডলারের মজুত বেড়েছে। ব্যাংকগুলোও আগের তুলনায় ‘বেশি’ আমদানির চাহিদাপত্রের (এলসি) অনুমোদন দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ঈদের হাওয়ায় স্বস্তি ফিরছে ডলারে।

আবারও বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২০ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১০৭ টাকা হিসাবে)। অর্থাৎ প্রতিদিন এসেছে গড়ে ৬ কোটি ৩১ লাখ ডলারের বেশি। এর আগের মাস ডিসেম্বরে এসেছিল ১৬৯ কোটি ডলার।

একাধিক ব্যাংকের কর্মকর্তা জানান, এতদিন বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে তেমন ডলার দরকার হয় না। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানির জন্য এলসি খুলতে ‘তেমন সমস্যা’ হচ্ছে না।আমাদের সামনে দুটি ধর্মীয় উৎসব (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) আছে। এ দুই উৎসবকে কেন্দ্র করে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আরও বাড়বে। কারণ প্রবাসীরা নিজ পরিবারের কেনাকাটায় এ সময়ে বেশি অর্থ পাঠিয়ে থাকেন।

এতে আমাদের দেশের ডলার সংকটও কিছুটা কেটে যাবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও ইতিবাচক ধারায় আসবে।বাংলাদেশসহ আমদানিনির্ভর দেশগুলো সবচেয়ে বেকায়দায় পড়ে। আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রপ্তানিতে গতি না আসায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে হয় ৩৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আশানুরূপ রেমিট্যান্স না থাকায় চলতি হিসাবের ভারসাম্যেও দেখা দেয় বড় ধরনের ঘাটতি। বাজারে প্রকট হতে শুরু করে ডলারের সংকট। বারবার টাকার মান কমিয়েও যা সামাল দেয়া যায়নি।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ সময়ে আমদানি হয়েছে প্রায় ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্য। অন্যদিকে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ২৬ বিলিয়ন ডলার। আর রেমিট্যান্স ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। যা বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই ও আগস্ট) টানা দুই বিলিয়ন ডলার করে রেমিট্যান্স এসেছিল। এরপরের মাস সেপ্টেম্বর থেকে টানা পাঁচ মাস দেড় বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থেমে যায়।

আরো পড়ুন :
> ঝিকরগাছায় স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা, আটক এক
> কোটচাঁদপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের ইন্তেকাল, বিভিন্ন মহলের শোক

চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার, আগস্টে এসেছিল ২০৩ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপরই কমতে থাকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ। সেপ্টেম্বরে এসেছিল ১৫৩ কোটি ৯৬ লাখ ডলার, অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, নভেম্বরে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার, ডিসেম্বরে প্রায় ১৭০ কোটি ডলার বা ১৬৯ কোটি ৯৬ লাখ মার্কিন ডলার। আর সদ্য বিদায়ি জানুয়ারি মাসে এলো ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। এটি তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা বাংলাদেশিরা।

প্রতিটি ব্যাংককে রপ্তানি আয় দেশে আসার সর্বশেষ তারিখ ও নগদায়নের তারিখে থাকা ডলারের দাম অনলাইনে লিপিবদ্ধ রাখতে হবে। প্রতি মাস শেষে পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে তা বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। এসব তথ্য পাঠানোর বিষয়ে একটি নির্ধারিত ছকও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে রপ্তানির তারিখ, কত দিনের মধ্যে আয় দেশে আসার কথা, কবে এলো এসব তথ্য দিতে হবে। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের বিপরীতে প্রতি ডলারে ১০৪ টাকা করে দেয়া হয়। ১ মার্চ থেকে এই দর কার্যকর হয়েছে। এর আগে ছিল ১০৩ টাকা।

আরো পড়ুন :
> ঝিকরগাছায় স্কুলছাত্রী আত্মহত্যার ঘটনায় মামলা, আটক এক
> কোটচাঁদপুর উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদকের ভাইয়ের ইন্তেকাল, বিভিন্ন মহলের শোক

প্রসঙ্গত, ডলার সংকটে আমদানির চাহিদা মেটাতে চলতি অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। ফলে গত সোমবার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

মার্চ ৩০, ২০২৩ at ০৯:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/সুরা