আব্দুল জব্বার ভালো মানুষ, ভালো ইউএনও নয়

কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে এই মুহূর্তে বহুল আলোচিত একটি নাম আব্দুল জব্বার। তিনি এ উপজেলার ইউএনও। তার কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর আসায় তিনি আলোচনায় উঠে এসেছেন। তবে দৌলতপুরের মানুষকে এক বাক্যে শিকার করতে হবে, এখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার ব্যক্তি হিসাবে নিঃসন্দেহে একজন ভালো মানুষ। সাম্প্রতিককালে একমাত্র তিনিই হলেন এ উপজেলার সম্পূর্ণ ঘুষমুক্ত ইউএনও। কিন্তু উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তকর্তা বা ইউএনও হিসাবে মোটেও ভালো নয়, পারফেক্ট নয়। তিনি ঘুষমুক্ত থেকে নিজেকে স্বচ্ছ রাখতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে অনেকে তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে প্রশাসক হিসাবে আব্দুল জব্বারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। নিজে ঘুষ না খেয়েও অযথা দুর্নামের অংশীদার হওয়ার পাশাপাশি অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। কিছু ভুল কর্মকাণ্ডের কারণে অনেকের দৃষ্টিতে তিনি একজন আনাড়িমার্কা ইউএনও হিসাবে বিবেচিত হয়েছেন।

মাদকের ঘাঁটি ভারতীয় সীমান্তবর্তী বৃহৎ উপজেলা দৌলতপুরকে মাদকমুক্ত করা চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু একটি ‘মাদকমুক্ত’ উপজেলা গড়ার লক্ষে ইউএনও যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তা রীতিমতে হাস্যকর হয়ে উঠেছে। যেসব জায়গায় বড় বড় মাদকের আখড়া রয়েছে সেসব জায়গা নিরাপদ রেখে শুধুমাত্র লালন অনুসারীদের বিভিন্ন সাধুসঙ্গের আস্তানায় অভিযান চালিয়ে ‘মাদকমুক্ত সাধুসঙ্গ’ ঘোষণা করে ব্যানার টানিয়ে দিলেই সেগুলো মাদকমুক্ত হয়ে যাবে, বিষয়টা এত সহজ নয়। সাধুসঙ্গগুলোতে মূলত গাঁজার আসর বসে। যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। কয়েক বছর আগে কুষ্টিয়ায় লালনের আখড়া বাড়িতেও গাঁজার ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু তা কিছুতেই বন্ধ করা যায়নি। ২০১৭ সালে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো দৌলতপুরকেও ‘ভিক্ষুকমুক্ত উপজেলা’ ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ভিক্ষুকমুক্ত হওয়া তো দূরের কথা, বরং আরো বেড়েছে। ভিক্ষুক আর মাদক এক জিনিস না হলেও ইউএনওর মাদকবিরোধী দুর্বল অবস্থান প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে ভিক্ষুকের বিষয়টা মনে পড়ে গেল।

দৌলতপুরেও ইউএনওর শুধুমাত্র লালন অনুসারীদের গাঁজার আসরে অভিযান চালিয়ে, তথাকথিত ‘মাদকমুক্ত এলাকা’ ব্যানার টানিয়ে এর সুফল পাওয়ার সুযোগ আছে বলে একটুও মনে হয় না। আইনের হাত থেকে তাৎক্ষণিক বাঁচার জন্য গাঁজায় আসক্ত ব্যক্তিরা আর কোনো দিন মাদক গ্রহণ না করার অঙ্গীকার করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বাস্তবে কী তারা আদৌ গাঁজামুক্ত হতে পারবেন?। এক কথার জবাব, কখনোই পারবেন না। ইউএনও আব্দুল জব্বার আসলেই একজন সরল মানুষ। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সরল আর পেশাগতভাবে খুবই দুর্বল। তা না হলে অযথা এ ধরনের লোক হাসানোর কাজে সম্পৃক্ত হতেন না।

মাদকমুক্ত উপজেলা গড়ার সদিচ্ছার জায়গা থেকে ইউএনও আব্দুল জব্বার পুলিশ ও বিজিবির সহায়তা নিয়ে মাদকের উৎসমুখ বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি মাদকের আখড়াগুলোয় অভিযান চালাতে পারতেন। তাতে কিছুটা হলেও মাদকের বিস্তার রোধ করা যেত। তা না করে সাধুসঙ্গে উপস্থিত হয়ে উপদেশ-নির্দেশ দিয়ে ব্যানার টানিয়ে ইউএনও ‘মাদকমুক্ত সাধুসঙ্গ’ করার যে প্রয়াস চালিয়েছেন তা হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, দেশে ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর’ নামে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটাকে কিন্তু ‘মাদকদ্রব্য নির্মূল অধিদপ্তর’ বলা হয়নি। কারণ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়, কখনোই নির্মূল করা যায় না। অথচ ইউএনও আব্দুল জব্বার লালন ভক্তদের আস্তানাকে মাদকমুক্ত করতে চেয়েছেন খুব ভালো কথা। কিন্তু নিশ্চিত করেই বলে দেয়া যায়, এই কাজটি এত সহজ নয়। যদি তাকে বদলি না করে দৌলতপুরেই বহাল রাখা হতো তবু তিনি এই কাজটি করতে পারতেন না, কোনোভাবেই না।

ইউএনও আব্দুল জব্বার ইতোমধ্যে উপজেলার দুয়েকটি স্পটকে ‘মাদকমুক্ত সাধুসঙ্গ’ উল্লেখ করেছেন। কোন মাদক তা উল্লেখ করেননি। সাধুসঙ্গে মূলত গাঁজার ব্যবহার হয়, তাই ধরে নিলাম তিনি মাদক বলতে গাঁজাকেই বোঝাতে চেয়েছেন। তাহলে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলের মতো ভয়ানক মাদক কী তিনি অনুমোদন করেছেন?। নিশ্চয় করেননি। সুতরাং এসব সাধুসঙ্গটঙ্গ নিয়ে ব্যস্ত না থেকে সবার আগে বড় বড় মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া দরকার ছিল। তাহলেই আমরা বুঝতাম মাদকের ব্যাপারে তার অবস্থান সত্যি খুব কঠোর, তিনি আসলেই একজন বীর পুরুষ। কিন্তু তা তিনি ইচ্ছা থাকলেও করতে পারতেন না। ইউএনও আব্দুল জব্বার এ উপজেলায় যোগ দেয়ার কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা বাজারের বহু পুরনো হাট স্থানান্তর করে পাশের চিপা গলিতে বসিয়েছিলেন। আগের জায়গায় আর হাট বসতে দেয়া হবে না বলে বাজার কমিটিকে ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ দিয়েছিলেন। কিন্তু ইউএনও সেই হাট ঠেকিয়ে রাখতে পারেননি। মাত্র কয়েকদিনের মধ্যে পুনরায় আগের জায়গাতেই হাটটি বসানো হয়। তার ‘হুশিয়ারি’ শেষ পর্যন্ত বজ্র আঁটুনি ফসকা গেরোতে পরিণত হয়। তিনি কোন পরামর্শকের কথায় হাট স্থানান্তরের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে আবার পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন সেই প্রশ্ন আজো রয়ে গেছে।

আব্দুল জব্বার ইউএনও হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছর তার মেয়াদে প্রথম ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে প্রথা ভেঙে বিরানির পরিবর্তে মুক্তিযোদ্ধাদের বিস্কুট-পাউরুটি দিয়ে আপ্যায়ন করিয়েছিলেন। কারণ তিনি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছিলেন, ‘চাঁদাবাজির টাকায় ভালো খাবার দিয়ে আপ্যায়ন করে মুক্তিযোদ্ধাদের খাটো করবো না। সরকারি বাজেটে সাধ্যের মধ্যে যেটা সম্ভব হয়েছে সেটাই করেছি।’ তার এই উদ্যোগটি খুবই ভালো ছিল। এ ঘটনায় অনেকে প্রশংসা করলেও কতিপয় সুবিধাভোগী সাংবাদিক এটা নিয়ে ইউএনওকে বিষোদগার করে খবর প্রকাশ করেছিলেন। আমি ওই খবরের সমালোচনা এবং একইসঙ্গে ইউএনওর সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বিবেচনা করে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে ছোট একটি কলাম লিখেছিলাম। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল, ইউএনও আব্দুল জব্বার তার নীতিগত অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছেন। তিনিও নিজের নীতির সঙ্গে আপস করে স্রোতে গা ভাসিয়েছেন অথবা অন্যদের প্রভাবে বাধ্য হয়েছেন। যার পরনাই আবার আগের মতোই চলতে থাকে স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও অন্যান্য জাতীয় দিবসসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান। ইউএনওর দুর্বল ব্যবস্থাপনায় সবকিছুতেই লেজেগোবরে অবস্থা দেখা দেয়। এ অবস্থায় সবকিছু নিজেদের মনের মতো হওয়ায় আর কোনো সাংবাদিকের মুখে টু শব্দও শোনা যায়নি।

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার

কারো কারো হয়তো মনে হতে পারে আজকের এই লেখাটি অনেকটা ইউটার্নের মতো। না, মোটেও ইউটার্ন নয়। যখন যেটা দেখি সেটাই বলি। অর্থাৎ সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালোই বলি। রং বদলানোর ইচ্ছা জাগে না, সেই অভ্যাসও নাই। এ উপজেলায় শামীমুল হক পাভেল নামে একজন ‘মারদাঙ্গা’ ইউএনও ছিলেন। ওই ইউএনও প্রথমের দিকে কিছু ভালো কাজ করায় সেগুলো যেমন লিখেছিলাম পরবর্তীতে কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় সেগুলোও লিখেছিলাম। সুতরাং ভালো করলে ভালো বলবো আর খারাপ করলে খারাপই বলবো। ইউএনও আব্দুল জব্বারের বিপক্ষে সোমবার বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে এবং মঙ্গলবার সংবাদপত্রে খবর বেরিয়েছে। আমিও সেই খবর অনলাইনে কভার করেছি। এই খবর প্রকাশের পর সুবিধাভোগী কতিপয় তেলবাজ ‘সাংবাদিক’ ইউএনওর পক্ষ নিয়ে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়েছেন। ভুল বানানের মনগড়া ও অগোছালো বাক্যের কথাবার্তা লিখে কাউন্টার দেয়ার চেষ্টা করেছেন। পরে বিভিন্ন ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে ‘মিনিপার্ক’ তৈরির জন্য গ্রহণ করা ইটের দাম পরিশোধ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা নগদ টাকা ফিরিয়ে দেয়ার কথা জানানোয় সেই খবরও বুধবার আমরা ফলোঅাপ করেছি। এতে প্রমাণিত হয়েছে, ইউএনওর নামে আসা খবরটি মিথ্যা কিংবা উদ্দেশ্যমূলক ছিল না। তবে এও ঠিক, এখান থেকে বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হিসাবে পদায়নের আদেশ পাওয়া ইউএনও আব্দুল জব্বার নিজের স্বার্থে এগুলো করেননি। অন্যের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে নিজের বদনাম নিজেই ডেকে এনেছেন এই সহজ সরল ইউএনও।

যাই হোক কোনো খবরে, প্রতিবেদনে প্রতিবেদকের নিজস্ব মতামত উল্লেখ করবার সুযোগ থাকে না। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে খবর অথবা প্রতিবেদনে নানা তথ্য তুলে ধরা হয়। যদিও সূত্রগুলোর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে ফিল্টারিং করে তার ভেতর থেকে সত্য তথ্য বের করে আনতে হয়। তবে সংবাদ মাধ্যমে কলাম লেখার ক্ষেত্রে অন্যদের রেফারেন্স ব্যবহার ছাড়াও নিজের মুক্তমত প্রকাশের সুযোগ রয়েছে। তাই বলে আবার স্বাধীন কিংবা মুক্তমতের নামে যা ইচ্ছা তাই লিখে দেয়ার সুযোগ নাই। খবরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা ধরনের ছবি ব্যবহার করা হয়। আর কলামে নিজের ছবি ব্যবহার করা যায়, তাও আবার একেবারে মাথায়। একইসঙ্গে জুড়ে দেয়া যায় প্রাসঙ্গিক ছবিও। এটাকে ব্যক্তিগত মূল্যায়ন কিংবা নির্মোহ বিশ্লেষণই বলবো, কেউ না মানলে কিছু বলার নাই। এই লেখাটির পরেও কতিপয় সাংবাদিক ও উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির লোকজন মায়ের চেয়ে মাসির দরদের মতো ইউএনওর হয়ে আমার ওপর গোস্যা করবেন। হয়তো তারা আমার বিরুদ্ধে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হবেন। তারা ইউএনওকে প্রভাবিত করবার চেষ্টা করবেন, আমাকে বেকায়দায় ফেলতে চাইবেন। ভাইসকল আপনারা চেষ্টা করতে থাকেন তাতে আমার কিছু আসে যায় না। নানামুখী চক্রান্তের শিকার হয়েই সাংবাদিকতা চালিয়ে যাচ্ছি। বলা দরকার, বেশ কয়েক বছর ধরে সাংবাদিকরাই সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। তারা কেউ কারো ভালো সহ্য করতে পারেন না। আবার সত্যি কথা বলায় ব্যক্তিস্বার্থে অাঘাত লাগলেই অমনি চরিত্র হরণসহ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েন। সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি, খোঁচাখুঁচিতে ব্যস্ত থাকায় রাজনীতিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বগল বাজান। নিজেদের সুবিধার জন্য তারাও চান সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি বা বিভাজন।

উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বসার জন্য ‘মিনিপার্ক’ তৈরির যে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছেন ইউএনও, তা সত্যিকার অর্থে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে এতে যা সরকারি বরাদ্দ রয়েছে তা দিয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাহলে কী করা উচিত?। অনুদানের নামে চাঁদাবাজি ছাড়া বিকল্প উপায় নাই। সেই পুরনো ধারার মতোই ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে আপস করা ছাড়া তিনি আর কোনো গত্যন্তর খুঁজে পাননি, পাওয়ার কথাও না। তাই সরকারি বরাদ্দের সঙ্গে চাঁদার টাকা যোগ দিয়ে তৈরি করা হচ্ছিল মিনিপার্ক। কিন্তু খবর প্রকাশের পর ইউএনও আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে মনস্থির করেন। তিনি ইটভাটা মালিকদের ইটের মূল্য পরিশোধ ও ব্যবসায়ীদের টাকা ফেরত দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ করেছেন। তবে এটাও আমাদের বিশ্বাস করতে হবে, ইউএনও আব্দুল জব্বার এখন পর্যন্ত একটি টাকাও ঘুষ কিংবা অনৈতিক উপায়ে নিজের পকেট ভারি করেননি। তিনি সরল মনের মানুষ। কিন্তু অন্যের প্রভাবে কিছু বিষয়ে আপস করে অযথাই তিনি সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নাম কুড়িয়েছেন। অর্থাৎ তিনি একজন ভালো মনের মানুষ। তবে ভালো মানের ইউএনও হতে পারেননি।

মূলত দুর্বল ও অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণেই ইউএনও আব্দুল জব্বারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ায় তিনি বিতর্কের মুখে পড়েছেন। ফলে কেউ কেউ বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, আব্দুল জব্বারও আগের ইউএনওদের মতো ঘুষ খাইছেন। তবে ব্যাপক অনুসন্ধান করেও তার বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি। যদিও ঘুষ না খাওয়া, সৎ ও ধার্মিক হওয়াটাই একজন ইউএনওর প্রকৃত মানদণ্ড হতে পারে না। সেই সঙ্গে দরকার, কর্মক্ষেত্রে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে দায়িত্ব পালন। তবে ইউএনওর ‘হট চেয়ারে’ বসে অবারিত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ঘুষ গ্রহণ থেকে পুরোপুরি বিরত থাকার বিষয়টি বর্তমান যুগে অনেকটাই বিরল। তিনি সরল মনের মানুষ বলেই সুবিধাবাদীরা তার ঘাড়ে চেপে বসেছেন, প্রভাবিত করে নিজেদের ফায়দা লুটে নিয়েছেন। ইউএনও আব্দুল জব্বারের সঙ্গে খবরের প্রয়োজনে মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলায় ইউএনওর প্রায় সোয়া এক বছর মেয়াদকালে সুবিধাগ্রহণ তো দূরের কথা একটি বারের জন্যেও তার সঙ্গে সরাসরি দেখা করার প্রয়োজন মনে করিনি। চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি দৌলতপুর সাংবাদিক ফোরামের এক অনুষ্ঠানে ইউএনও আব্দুল জব্বারের সঙ্গে প্রথম দেখা হয়। ব্যক্তিগতভাবে তাকে আমি পছন্দ করি। তবে তার দুর্বল প্রশাসনিক ভূমিকা পছন্দ করার মতো নয়। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইউএনওকে তার পরবর্তী কর্মস্থলে যোগ দেয়ার জন্য কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন থেকে বিদায় জানানো হয়েছে। তিনি দুয়েকদিনের মধ্যে দৌলতপুর ত্যাগ করবেন।

যা বলছিলাম, অনেকে আব্দুল জব্বারকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নিলেও ইউএনও হিসাবে সঙ্গত কারণেই পারফেক্ট মনে করছেন না, তাকে আনাড়িমার্কা ইউএনওই বলছেন। তিনি নিজে দুর্নীতি না করলেও কার্যত দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছেন। সরকারি বিজ্ঞাপন প্রদানে শুরু থেকেই তার স্বেচ্ছাচারিতায় এখানকার সাংবাদিকদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ ছাড়া সম্প্রতি সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করে আরেকটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন ইউএনও জব্বার। তিনি পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সরকারি গাড়ি নিয়ে তিনদিন ধরে সাতক্ষীরায় গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেছেন।

মিস্টার ইউএনও, আপনার মাদকবিরোধী অভিযানের বিষয়টি খুব ‘ইন্টারেস্টিং’ মনে হয়েছে। তাই এই বিষয়টিই পুনর্ব্যক্ত করে শেষ করব। যেখানেই কর্মরত থাকুন এখানকার মতো শুধুমাত্র বাউলদের সাধুসঙ্গগুলোয় অভিযান চালিয়ে নিজেকে আর হাস্যকর করে তুলবেন না। যেসব জায়গায় সাধুসঙ্গের আস্তানা রয়েছে সেসব জায়গাতেই থাকবে। তারা কোথাও পালিয়ে যাবে না। পরেও এগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। তার আগে একটু মাদকের মূল অাখড়াগুলোর দিকে নজর দেবেন। মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত রাঘব বোয়ালদের না ধরতে পারেন দুয়েকটি ইয়াবা, হেরোইন, মদ ও ফেনসডিলের আখড়ায় অভিযান চালাবেন। বন্ধ করে দেবেন। আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে চাই, মাদক নিয়ন্ত্রণ ও বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে আপনার যথেষ্ট আন্তরিকতা রয়েছে। সবার জন্য বাসযোগ্য সুন্দর একটি সমাজ বিনির্মাণে আপনি ভীষণ আগ্রহী। কিন্তু আপনার বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় বেশ গলদ রয়েছে। এটা আসলে সঠিক ও গঠনমূলক পলিসি নয়। অগোছালো ও দুর্বলমানের এই পলিসি বাস্তবে রূপ দেয়া খুব কঠিন। প্রশাসনে সরলতার চেয়ে কঠোরতার গুরুত্বই বেশি।

❑ লেখক : এস আর সেলিম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক।

ফেব্রুয়ারি ২৩.২০২৩ at ২১:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মেইস/এসআর