পরিবেশ দূষণ কি পুরুষের যৌন জীবনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে?

ছবি- সংগৃহীত।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত অসুখবিসুখের কারণে। কিন্তু সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ।

এবার আরও ভয়ঙ্কর তথ্য উঠে এলো খ্যাতনামা দুই পরিবেশ বিজ্ঞানী ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বইতে। পরিবেশ দূষণ ও মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্যের মধ্যে যে নিবিড় যোগ রয়েছে ‘কাউন্ট ডাউন: হাউ আওয়ার মডার্ন ওয়ার্ল্ড ইজ থ্রেটেনিং স্পার্ম কাউন্টস, অল্টারিং মেল অ্যান্ড ফিমেল রিপ্রোডাক্টিভ ডেভেলপমেন্ট, অ্যান্ড ইমপেরিলিং দ্য ফিউচার অব দ্য হিউম্যান রেস’ শীর্ষক ওই বইতে সেটাই আলোচনা করা হয়েছে।

ওই বইতে সতর্ক করে বলা হয়েছে, ব্যাপক শিল্পায়ন থেকে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের কারণে দিনদিন ছোট হয়ে আসছে পুরুষাঙ্গ। কমছে প্রজনন ক্ষমতা ও যৌনতা। যে কারণে হুমকির মুখে পড়তে চলেছে মানব সভ্যতা। বইটির লেখক বিশ্বের অন্যতম সেরা পরিবেশ বিজ্ঞানী ও রোগতত্ত্ববিদ এবং নিউইয়র্কের আইকান স্কুল অব মেডিসিনে এনভায়রনমেন্টাল মেডিসিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ-এর অধ্যাপক শান্না এইচ. সোয়ান ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ স্টেসি কলিনো।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই বইতে পরিবেশ দূষণের নানা ক্ষতিকর দিক তুলে ধরেছেন এ ‍দুই বিজ্ঞানী। তারা বলেছেন, দূষণের সঙ্গে পুরুষাঙ্গের আকার ছোট হয়ে যাওয়ার একটা যোগ রয়েছে। সোয়ান ও কোলিনোর মতে, দূষণের ফলে দিন দিন মানুষের পুরুষাঙ্গ ক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে ও যৌনাঙ্গ দুর্বল হয়ে পড়ছে।

এ পুরুষাঙ্গ ছোট হওয়ার ঘটনার শুরু মায়ের পেটে থাকতেই। বিষয়টার ব্যাখ্যা দিয়ে সোয়ান বলেন, ফ্যালেটস নামে একটি রাসায়নিক পদার্থের ফলে এমনটা ঘটে। তিনি বলেন, ‘যখন একজন গর্ভবতী নারীর শরীরে ফ্যালেটসের মতো রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ বেশি থাকে, যা টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, তখন ছেলে শিশুর যৌনাঙ্গের বিকাশ ব্যাহত হয়।

সোয়ানের গবেষণা ছাড়াও আরেকটি গবেষণাতেও একই রকম ফলাফল পাওয়া গেছে। মূলত যেসব শিশু শরীরে বেশি পরিমাণ ফ্যালেটস নিয়ে জন্ম নেয়, তাদের পুরুষাঙ্গের আকার ছোট হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

আরো পড়ুন:
>চন্দনাইশে পথচারীর শ্যামলী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু
>একদিনেই রাশিয়ার ৫৫ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১১

ফ্যালেটস মানুষের তৈরি এমন একটি রাসায়নিক, যা খেলনা, ডিটারজেন্ট, নেইল পলিশ, সাবান ও আরও অনেক কিছুতে ব্যবহৃত হয়। এই রাসায়নিক প্লাস্টিক জাতীয় দ্রব্যকে নরম ও নমনীয় করতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানী সোয়ান দেখিয়েছেন, এ ফ্যালেটসের কারণে পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হচ্ছে, যা পরিণামে পুরুষ ও নারীর সন্তান জন্ম দেয়ার প্রক্রিয়াকে ক্ষতি করছে।

বিশ্বের ৫০ শতাংশ বন্ধ্যাত্ব পুরুষের নানা সমস্যার কারণে ঘটে। আর পুরুষের এ বন্ধ্যাত্ব বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন, শারীরিক টেস্টিকুলার সমস্যা, বংশগত, হরমোনের সমস্যা, শুক্রাণু নালি বন্ধ হয়ে যাওয়া, উচ্চমাত্রার জ্বর ও জীবনধারা বা পরিবেশগত কারণ।

পুরুষের বন্ধ্যাত্বের নানা কারণের মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বন্ধ্যাত্বের সঙ্গে দূষণের একটা প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। গবেষকরা দেখিয়েছেন, ফ্যালেটস রাসায়নিকের সংস্পর্শ বীর্যের পরিমাণ ও গুণগত মান, শুক্রাণুর ঘনত্ব ও সংখ্যায় প্রভাব ফেলে, যা সামগ্রিকভাবে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব ঘটাতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে পুরুষ মানুষের মধ্যে ‘স্পার্ম কাউন্ট’ তথা শুক্রাণুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে এসেছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

এক গবেষণায় উঠে এসেছে, গত ৫০ বছর ধরে ধীরে ধীরে এই ‘স্পার্ম কাউন্ট’ কমেছে। এ সময়কাল ধরে পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কমেছে ৬২ শতাংশ। একবিংশ শতাব্দীতে যে পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা ও সেই সঙ্গে তাদের স্বাস্থ্যও যে খারাপের দিকে যাচ্ছে, তা এ গবেষণা থেকে প্রমাণিত।

আরো পড়ুন:
>চন্দনাইশে পথচারীর শ্যামলী গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু
>একদিনেই রাশিয়ার ৫৫ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ১১

চিকিৎসা বিজ্ঞানে একজন পুরুষের স্পার্ম কাউন্টকে তার স্বাস্থ্যের সূচক হিসেবেই ধরা হয়ে থাকে। ফলে, যদি কোনো পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কম থাকে, তাহলে তার স্বাস্থ্যও খারাপের দিকে যাচ্ছে বলেই ধরে নেয়া হয়। এছাড়াও যদি কোনো পুরুষের স্পার্ম কাউন্ট কম থাকে, তবে বেশকিছু দীর্ঘস্থায়ী অসুখেও ভুগতে পারেন তিনি। এছাড়াও টেস্টিকুলার ক্যান্সার ও সেই পুরুষের জীবনের সময়কালও কমার আশঙ্কা থেকে যায়।

সূত্র- সময় নিউজ।

জানুয়ারি ২৭.২০২৩ at ১০:২৭:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর