পূর্ণাঙ্গ হচ্ছে দর্শনা স্থলবন্দর, পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার চেহারা

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কার্যক্রম। ছবি- সংগৃহীত।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ইতিবাচক অবস্থান তৈরি হয়েছে। এর ফলে দুই দেশে আমদানি-রফতানির দ্বার উন্মোচনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এই বন্দর এ জেলার ব্যবসার প্রধান কেন্দ্রে পরিণত হবে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলৎগঞ্জ ও ভারতের মাঝদিয়া দিয়ে ১৯৫৪ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত সড়ক পথে ল্যান্ড কাস্টম স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রফতানি চালু ছিল।

দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর বাস্তবায়ন কার্যক্রম। এরই মধ্যে বন্দর এলাকায় ট্রাক টার্মিনাল, রেল ইয়ার্ড, শেড, ওয়্যার হাউজ, আবাসিকসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে চারশ বিঘা জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সম্ভাব্যতা যাচাই, দাগসূচি প্রণয়ন, প্রস্তাবিত দাগ মৌজা ম্যাপে চিহ্নিতকরণের কাজ শেষ হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দর্শনায় পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালু হলে ব্যবসার ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা জাগ্রত হবে। এতে পাল্টে যাবে চুয়াডাঙ্গার অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সহজ হবে যোগাযোগ। দর্শনা রেলপথ দিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম চলমান রয়েছে ১৯৬২ সাল থেকে। দর্শনায় আগে থেকেই রয়েছে কাস্টম শুল্ক স্টেশন, আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি, অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ও বিজিবির ছয়টি ক্যাম্প।

এখন শুধু এসআরও (প্রজ্ঞাপন) সংশোধন ও দু’দেশের মাত্র এক কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা গেলেই দর্শনা-গেদে স্থল শুল্ক স্টেশন দিয়ে শুরু হবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। এটি চালু হলে পার্শ্ববর্তী বেনাপোল বন্দরে পণ্যজট ও চাপ কমবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যবসায়ী সংগঠন চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দর্শনা বন্দর দিয়ে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করতে এসআরও সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।

টার্মিনাল, রেল ইয়ার্ড, শেড, ওয়্যার হাউজ, আবাসিকসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সাড়ে চারশ বিঘা জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেছে। ছবি- সংগৃহীত।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া ২০১৮ সালের নভেম্বরে এ-সংক্রান্ত পত্র ভারতের দিল্লিতে পাঠান। এতে ভারতেরও আগ্রহ রয়েছে। এজন্য গত ১৩ ডিসেম্বর গেদে-দর্শনা বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন ইন্ডিয়া ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির চেয়ারম্যান ও বর্ডার ম্যানেজমেন্ট সেক্রেটারি এন এন সিনহা। এর আগে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী বন্দর এলাকা পরিদর্শন করেন। এরপর পরিদর্শন করেন চেয়ারম্যান কেএম তারিকুল আলম।

পরে একই বছরের ২৬-৩০ ডিসেম্বর দিল্লিতে দু’দেশের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সাব গ্রুপের সভা হয়। সেখানে দ্রুত গেদে-দর্শনা স্থলবন্দর দিয়ে সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চালুকরণে একমত পোষণ করে দু’দেশের চলমান কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

আরো পড়ুন:
>বিএনপিকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ বললেন সুবর্ণা মুস্তাফা
>কলকাতায় ‘পাঠান’ সিনেমা ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে

রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনকে ২০০২ সালের ১২ জানুয়ারি ‘স্থলবন্দর’ ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য এ সীমান্ত দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও সহজীকরণ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত অংশে শুধু ৮০০ মিটার রাস্তা প্রশস্ত করলেই দর্শনা-গেদে শুল্ক স্টেশন দিয়ে মুহূর্তেই সড়কপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু করা সম্ভব।

স্থলবন্দর ঘিরে যত সুযোগ-সুবিধা

শুল্ক স্টেশনে চালু করা হয়েছে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড। ছবি- সংগৃহীত।

দর্শনা স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানির সব পদ্ধতি ডিজিটাল সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। শুল্ক স্টেশনে চালু করা হয়েছে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড। এতে দেশের যে কোনো বন্দর থেকে মুহূর্তেই দর্শনা বন্দরের আমদানি-রপ্তানির সব পণ্যের এসএম কর্ড ও মূল্য নির্ধারণ সুবিধা পাবেন ব্যবসায়ীরা। চট্টগ্রাম, টেকনাফ, মোংলা, বেনাপোল বন্দরের পর দর্শনা বন্দরে চালু হয়েছে এ সার্ভারটি।

পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর প্রতিষ্ঠায় অবকাঠামো সুবিধার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক রেলস্টেশন, একটি অভ্যন্তরীণ রেলস্টেশন, ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট, বিজিবির ছয়টি বিওপি ক্যাম্প সম্বলিত একটি কোম্পানি সদর। দর্শনায় রয়েছে ৪৫ বিঘা জায়গার ওপর কাস্টম শুল্ক স্টেশনের সব দপ্তর, যেখান থেকে স্থল শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আছে আধুনিকমানের কোয়ারেন্টাইন ল্যাবরেটরি। এগুলোতে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবলও রয়েছে। শতাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের অফিসের পাশাপাশি রয়েছে একাধিক সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের শাখা।

শুধু তাই নয়, স্থলপথে সংযোগের মাধ্যমে ট্রাকযোগে পণ্য আমদানি-রপ্তানি হলে পরিবহন টার্মিনাল এবং বন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জয়নগর চেকপোস্টের অদূরে বাংলাদেশ অংশে অধিগ্রহণ করার মতো পর্যাপ্ত জমি আছে। দর্শনা জয়নগরে প্রস্তাবিত বন্দর টার্মিনাল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।

দর্শনা থেকে দৈনিক ৪০টি যাত্রীবাহী কোচ হাইওয়ে রোড দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করছে। চিত্রা, সুন্দরবন, বেনাপোল এক্সপ্রেসসহ রেলপথে ঢাকা, রাজশাহী, সৈয়দপুরে দৈনিক যাতায়াত করছে ১০টি ট্রেন। ঢাকা-কলকাতার মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘মৈত্রী এক্সপ্রেস’ চলাচল করে দশর্না-গেদে রুটে। ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল থেকে এ রুটে সপ্তাহে ছয় দিন চলছে ‘মৈত্রী ট্রেন’।

আরো পড়ুন:
>বিএনপিকে ‘বিশ্ব বেহায়া’ বললেন সুবর্ণা মুস্তাফা
>কলকাতায় ‘পাঠান’ সিনেমা ঘিরে উন্মাদনা তুঙ্গে

দর্শনা স্থল শুল্ক স্টেশনের রেভিনিউ অফিসার (আরও) মাজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর চালুর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। কিছুদিন আগে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। জমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান। দুই দেশের প্রশাসনিক কার্যক্রম শেষ হলে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরু হবে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে।

জানুয়ারি ২৬.২০২৩ at ১৪:০৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএইচ