২০২২-এ ৩৯ সংখ্যলঘুকে ধর্ষণ, হত্যা ১৫৪

ছবি- সংগৃহীত।

নিরপত্তাহীনতায় দেড় লাখ পরিবার

২০২২-এ আদিবাসী ও হিন্দু সম্পদ্রায়সহ দেশের সংখ্যালঘুরা ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৩৯ জন। তার মধ্যে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার ২৭ জন। ধর্ষণের পর ১৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ১৫৪ জন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নিরাপত্তাহীনাতা আছে এক লাখ ৯৫ হাজার ৯৯১টি পরিবার।

রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত এক বছরে দেশের সংখ্যালুদের ৪২৪ জনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ৬২ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৮৪৯ জনকে হত্যা হুমকি দেয়া হয় এবং জখম ও আহত হয়েছে ৩৬০ জন। সংঘবদ্ধ হামলা ৯৫৩টি। অপহরণ হয়েছে ১২৭ জন এবং অপহরণের চেষ্টা করা হয় ২৭ জনকে।

৪৪৫টি পরিবারকে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮৯ হাজার ৯৯০ একর জমি দখল করা হয়েছে। বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে ৫৭২টি পরিবার, উচ্ছেদের চেষ্টা হয়েছে ৩ হাজার ৬ শ ৯৪ টি পরিবার, উচ্ছেদের হুমকি পেয়েছে ৩৫ হাজার ৮শ পরিবার। ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা, সাঁওতাল ও ত্রিপুরা পাহাড়ী আদিবাসীদের ৬ হাজার ৫৫০ একর এবং সমতলের হিন্দুদের ২ হাজার ৪ শ ৪০ একর ভূমিদখল দখল করা হয়েছে। দেশত্যাগে হুমকির শিকার ১৫ হাজার ১১৫টি পরিবার। ৫১ টি মন্দিরের ভূমি দখল করা হয়েছে। মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে ১২৮টি, প্রতিমা ভাঙচুর ৪৮১টি, প্রতিমা চুরি ৭২টি। ২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৩৩ হাজার টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে। মোট ক্ষতি হয়েছে ২২০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য ও সারা দেশে থাকা সংগঠনের কর্মীদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে জানান গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক। তিনি বলেন, ৫৫ জনকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ১৫২ জনকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ধর্মান্তরকরণের চেষ্টা করা হয়েছে ৪০ জনকে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অপবিত্রকরণের ঘটনা ঘটেছে ১৭৯টি এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনে বাধা দেয়ার ঘটনা ১২৯টি। ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ গরুর মাংস খাইয়ে ৩৩৩ জনকে অপবিত্রকরণসহ একটি পরিবারের ওপর গোমাংস নিক্ষেপ করা হয়েছে।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, ভিন্নমত দমন ও সহনশীলতা চর্চার অভাবে দেশে অসহিষ্ণু ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে মনে করে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট। সংগঠনটি দাবি করেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনা ঘটেছে ১২৭টি। মিথ্যা মামলায় আসামি গ্রেপ্তার, বরখাস্ত, চাকরিচ্যুত করা এবং জেল-জরিমানার শিকার হয়েছেন ৭৯১ জন। ১ হাজার ৬৫৭ টি পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

আরো পড়ুন :
>মিয়ানমারে জান্তা বাহিনীর ওপর হামলায় নিহত ১১০
>সিলেটে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০
>ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য চলাকালে মঞ্চ ভেঙে আহত ৫

হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে কিন্তু দেশের হিন্দু সম্প্রদায় কখনোই স্বাধীনতার স্বাদ লাভ করেনি। তাই সংখ্যালঘুদের উপর সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধে এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব সুনিশ্চিত করতে জাতীয় সংসদে ৬০টি সংরক্ষিত আসন ও পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা, সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং একটি উপরাষ্ট্রপতি ও উপপ্রধানমন্ত্রীর পদ সৃষ্টি করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত রাখার দাবি জানান তিনি। সূত্র- ভোরের কাগজ।

জানুয়ারি ০৬.২০২৩ at ১৮:৩৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর