ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থেকে ইসি সরতে চায় কেন

ছবি- সংগৃহীত

ভোটকেন্দ্রে ক্যামেরা স্থাপনের দাবি ছিল আগেই। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সে দাবি অগ্রাহ্য করে ভোটারের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কথা জানিয়ে, তবে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের চিন্তা ভিন্ন। তারা গত জুন থেকে হওয়া সব ভোট পর্যবেক্ষণে ক্যামেরা বসানোর কথা বলেছে ঘটা করেই।

ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ঘোষণা দিয়েও দৃশ্যত তা থেকে সরে আসছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্বভার পাওয়ার পর থেকে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনের প্রায় প্রতিটিতেই কেন্দ্রে ক্যামেরা বসিয়ে ঢাকা থেকে ভোট পর্যবেক্ষণ করে কমিশন। গাইবান্ধায় সংসদীয় আসনের একটি উপনির্বাচনে গোপন কক্ষে ‘ডাকাত’ দেখে বাতিল হয় ভোটও।

বিএনপির ছেড়ে দেয়া সংসদীয় আসনে উপনির্বাচনে কেন্দ্রে ক্যামেরা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না কমিশন। যে পদ্ধতি ভোটে স্বচ্ছতা আনছিল, তা থেকে কেন সরছে কমিশন, এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আর্থিক সংকটের কারণে সিসি ক্যামেরা থেকে সরে এসেছি। অর্থ বরাদ্দের সম্ভাবনা কম।

আরো পড়ুন :
>আন্দোলনের কৌশলে ভাঙল বিএনপির ২০ দলীয় জোট
>ঢাকায় আসবে বিশ্বকাপজয়ী মেসি!
>যশোর জেলার সর্বোচ্চ তরুণ করদাতা মনোনীত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা হাজী সুমন

দ্বাদশ ভোটের কর্মপরিকল্পনায় যে রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে, সেখানে চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের কথা বলেছে আউয়াল কমিশন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এ কমিশনার বলেন, ‘৩০০ আসনে উত্তরণের উপায় হিসেবে আমরা দেখেছি। আমরা বলি নাই ৩০০ আসনের সবগুলোই সিসি ক্যামেরা দেব।কোনো ধরনের চাপের কারণে নয়, আর্থিক বিবেচনায় সিসি ক্যামেরা থেকে পেছাতে হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চাপ ছিল না, কোনো চাপ নাই৷

কর্মপরিকল্পনায় যা আছে, তা আমরা করব। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক বিবেচনা মাথায় নিতে হবে। ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিতে হবে। ইউরোপ, ফ্রান্স, জার্মানিও আর্থিক সংকটে হিমশিম খাচ্ছে।’

সিসি ক্যামেরার কী সুবিধা

ভোটকেন্দ্রে ক্যামেরা স্থাপনের দাবি ছিল আগেই। কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন সে দাবি অগ্রাহ্য করে ভোটারের গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কথা জানিয়ে, তবে হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশনের চিন্তা ভিন্ন। তারা গত জুন থেকে হওয়া সব ভোট পর্যবেক্ষণে ক্যামেরা বসানোর কথা বলেছে ঘটা করেই।

এর সুফল দেখা গেছে গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটে।

সেদিন সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকে। ভোটকেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থেকে ইসি সরতে চায় কেন? ঢাকায় সিসিটিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ে গাইবান্ধা-৫ আসনের ভোটে বিভিন্ন অনিয়ম। ফাইল ছবি

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোটারের পরিচয় শনাক্তের পর গোপন কক্ষে থাকা ব্যক্তি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে দেয়ার অভিযোগ আসতে থাকে। নির্বাচন কমিশন একাধিকবার এই ব্যক্তিদের ‘ডাকাত’ উল্লেখ করে বলেছে, ডাকাত ঠেকানোই তাদের চ্যালেঞ্জ, তবে এই ডাকাত ঠেকানো যায়নি। ১৪৫টি কেন্দ্রে স্থাপন করা এক হাজারের বেশি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ ঢাকায় বসেই পর্যবেক্ষণ করে নির্বাচন কমিশন। এরপর একে একে ৫১টি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত করা হয়।

আরো পড়ুন :
>আন্দোলনের কৌশলে ভাঙল বিএনপির ২০ দলীয় জোট
>ঢাকায় আসবে বিশ্বকাপজয়ী মেসি!
>যশোর জেলার সর্বোচ্চ তরুণ করদাতা মনোনীত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা হাজী সুমন

পরে দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে সিইসি বলেন, ‘আমরা পরিশেষে এ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সমগ্র কন্সটিটিউয়েন্সি…পুরো নির্বাচন… গাইবান্ধা-৫ নির্বাচনী এলাকার ভোট কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে (রিটার্নিং কর্মকর্তাকে)।’

গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তই হবে

আরেক নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ব্যাপারে এখনও কমিশন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য ইভিএমে ভোট গ্রহণ ও সিসি ক্যামেরা স্থাপনের সদিচ্ছা সর্বদাই কমিশনের আছে, তবে বাস্তবতা অন্যরকম।’

তিনি বলেন, ‘গাইবান্ধা উপনির্বাচনে ১৪৫টি কেন্দ্রের মধ্যে ৫০টি কেন্দ্র আগারগাঁও থেকে পর্যবেক্ষণ করে বন্ধ করা হয়েছিল। তারপর থেকেই কীভাবে সর্বাধিক সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়, সে ব্যাপারে কমিশন গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করছে।

‘এ ছাড়াও বিশাল অঙ্কের বাজেট প্রাপ্তির বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। মাঠ পর্যায় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ ও অতি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান নেয়ার পর কমিশনে আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’

নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ফেমার প্রেসিডেন্ট মুনিরা খানম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘কমিশনের যদি সদিচ্ছা থাকে, তাহলে সিসি ক্যামেরা ছাড়াই ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। আগে কি ইলেকশন হয় নাই? বৈশ্বিক মন্দার মধ্যেই সিসি ক্যামেরার জন্য এত কোটি কোটি টাকা খরচ সমীচীন হবে না।

আরো পড়ুন :
>আন্দোলনের কৌশলে ভাঙল বিএনপির ২০ দলীয় জোট
>ঢাকায় আসবে বিশ্বকাপজয়ী মেসি!
>যশোর জেলার সর্বোচ্চ তরুণ করদাতা মনোনীত বিশিষ্ট ব্যবসায়ী যুবলীগ নেতা হাজী সুমন

‘আমাদের যদি আর্থিক মন্দা না হতো, পৃথিবীতে যদি আর্থিক সংকট না দেখা দিত, তাহলে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা যেত।’ সিসিটিভি ছাড়াও প্রশাসনের লোক আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পোলিং এজেন্ট রয়েছে। তাদের ট্রেনিং দিতে পারে।’ সরকারের চাপে পড়ে এমন হয়েছে বলে মনে করেন না এই নির্বাচন পযবেক্ষক। তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি তারা সরকারের চাপে এমন করেছে, তাহলে মানুষ কমিশনের ওপর থেকে আস্থা হারাবে।

ডিসেম্বর ২৩.২০২২ at ১০:৪৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর