সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দামে অস্থিরতা

ছবি- সংগৃহীত

সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশের প্রকাশনা শিল্প। কাগজের কাঁচামাল আমদানি বন্ধ থাকায় ঘনীভূত হচ্ছে সংকট। হুমকির মুখে সৃজনশীল বই প্রকাশ। দেশের শিক্ষাক্ষেত্রেও পড়া শুরু করেছে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব। সহায়ক ও অন্যান্য বই, ম্যাগাজিনের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। খাতা-কলমসহ অন্য শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি সব ধরনের পাঠ্য সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের কিনতে হবে বাড়তি দামে। তবে সার্বিক বিষয় চিন্তা করে আপাতত বইয়ের দাম সর্বোচ্চ ২৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি।

বইয়ের দামে আগুন :

করোনা পরিস্থিতির পর সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২৩ সালেই প্রথম স্বাভাবিক সময়ে বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। মেলা উপলক্ষে দেশীয় প্রকাশনীগুলোর তোড়জোড় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কাগজ ও প্রকাশনা সামগ্রী সংকটে তা সম্ভব হয়নি। দেশে বই বিক্রির সবচেয়ে বড় এই মৌসুমে বাড়তি দামে বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে এখনই চিন্তার ভাঁজ প্রকাশকদের কপালে। খাতা-কলমের পাশাপাশি দাম বেড়েছে সব ধরনের পাঠ্য সহায়ক বইয়ের। নোটবুক কিংবা টেস্ট পেপারের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

আরো পড়ুন:
>৪০ বছর জেল হতে পারে ট্রাম্পের, অংশ নিতে পারবেন না আগামী নির্বাচনে
>ফের পেছালো প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা
>দৃষ্টিনন্দন ঘর সাজাবেন যেভাবে?

নতুন বছরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খরচ বাড়বে আরও। এরই মধ্যে বই বিক্রি কমে গেছে বলে জানান বিক্রেতারা। বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে ঝামেলা হচ্ছে বলেও জানান তারা। রাজধানীর একাধিক লাইব্রেরি ঘুরে দেখা যায়, আগামী বছরের নতুন বই আসার আগে দোকানিরা বইয়ের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। বেড়েছে কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, বিভিন্ন ধরনের ম্যাগাজিন ও চাকরির প্রস্তুতির বইয়ের দামও।

কাগজের দামে আগুন :

কাগজের আগুন দামে বিপাকে রয়েছেন যশোরের ছাপাখানা মালিকরা। দিন দিন কমছে প্রকাশনা কাজ। প্রেসগুলো আগে স্কুল-কলেজের খাতা তৈরির পাশাপাশি নিজস্ব খাতা তৈরি করে বিক্রি করতো। এখন তা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। গত ছয় মাসের ব্যবধানে কাগজের দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। যশোরের কাগজের দোকানগুলো এবং ছাপাখানা ঘুরে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

কাগজের দোকান ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কোম্পানির প্রতি ৫শ পিস ৬৫ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ থেকে ৩৬০ টাকায়। ছয় মাস আগে এর দাম ছিল ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। একইভাবে ৭০ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ থেকে ৩৮০ টাকা; যার দাম ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৩০ টাকা; যার দাম আগে ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। ১০০ গ্রাম অফসেট কাগজের দাম আগে ছিল ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা; যার দাম এখন ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা।

আরো পড়ুন:
>৪০ বছর জেল হতে পারে ট্রাম্পের, অংশ নিতে পারবেন না আগামী নির্বাচনে
>ফের পেছালো প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা
>দৃষ্টিনন্দন ঘর সাজাবেন যেভাবে?

এছাড়া ডিমাই ২১/৩৪ সাইজের ৪২ গ্রাম কাগজের প্রতি ৫শ পিস বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। আগে এর দাম ছিল ২৫০ থেকে ২৫০ টাকা। একইভাবে ডিমাই ২৩/৩৬ সাইজের ৫৫ গ্রাম কাগজের প্রতি ৫শ পিস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬২০ টাকা। আগে যার দাম ছিল ৩৫০ টাকা। যশোরের বাজারে বসুন্ধরা, আম্বার, পেপারটেক, ডাবল এ, ফ্রেশ ও পারটেক্স কোম্পানির কাগজ বিক্রি হচ্ছে।

পাশাপাশি একইহারে বিভিন্ন প্রকার খাতার দামও বেড়েছে। ১২৪ পৃষ্ঠার ডিমাই সাইজের খাতা আগে ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া ১২৪ পৃষ্ঠার স্কুল-কলেজের ছোট সাইজের খাতা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা। আগে এর দাম ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত ছয় মাসে বিভিন্ন কাগজের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ছোট ব্যবসায়ী ও ছাপাখানা মালিকরা। তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে তারা আর স্কুল-কলেজের খাতা তৈরি করে ব্যবসা করতে পারছেন না।

শহরের জামে মসজিদ লেনের রয়েল স্টেশনারির স্বত্বাধিকারী সাঈদ হাসান জানান, প্রায় প্রতিদিনই কাগজের দাম বাড়ছে। আগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা কাগজ বাকিতে দিতেন। ছোট ব্যবসায়ীর বিক্রি করে টাকা পরিশোধ করতেন। এখন আর তা দিচ্ছেন না। তাদের বক্তব্য কাগজ নিজের ঘরে থাকলে তো দাম বাড়ছে। আবার দাম বাড়ার কারণে দ্বিগুণ টাকা বিনিয়োগ করে সীমিত লাভ থাকছে। ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।

আরো পড়ুন:
>৪০ বছর জেল হতে পারে ট্রাম্পের, অংশ নিতে পারবেন না আগামী নির্বাচনে
>ফের পেছালো প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষা
>দৃষ্টিনন্দন ঘর সাজাবেন যেভাবে?

রয়েল স্টেশনারি নিজস্ব খাতা তৈরি করে বিক্রি করে উল্লেখ করে তিনি জানান, আগে খাতা তৈরি করে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা ডজন বিক্রি করতেন। খুচরা ২০ টাকা বিক্রি হতো। এখন সেই খাতা খুচরা ৩০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে। একই দামে বিভিন্ন কোম্পানির খাতা বিক্রি হচ্ছে। ফলে স্থানীয়ভাবে খাতা তৈরি করে ব্যবসা করা যাচ্ছে না।

মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের স্বত্বাধিকারী আবু জাফর বাচ্চু জানান, আগে তারা খাতা তৈরি করে বিক্রি করতেন। এখন অর্ডার ছাড়া আর খাতা তৈরি করছেন না। আর সেই অর্ডারও মিলছে না। কারণ বড় বড় কোম্পানিই এখন অর্ডার নিয়ে খাতা তৈরি করে দিচ্ছে। ক্রেতারা এখন সেদিকে ঝুঁকছেন। পাশাপাশি কাগজের দামের কারণে অন্যান্য প্রকাশনাও সংকুচিত হয়ে আসছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ছাপার দিকে যাচ্ছেন না। হ্যান্ডবিল, পোস্টারসহ বিভিন্ন প্রকাশনার ক্ষেত্রে যত কম সংখ্যক ছেপে পারা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি সবার।

ডিসেম্বর ২০.২০২২ at ১১:০৫:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসএমডি/এসআর