পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন; কম দামে চাষী হতাশ

চলতি মৌসুমে পাইকগাছায় কাগজি লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাহিদা ও কম মূল্যে বাগান মালিক হতাশ আর বাজারে চাহিদা কম থাকায় ব্যবসায়ীদের লেবুর ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। করোনার প্রভাব কম থাকায় লেবুর চাহিদা নেই দামও কম। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ছড়ানো ছিটানো ভাবে প্রায় ২২ হেক্টর জমিতে কাগুজি লেবুর চাষ হয়। সব মিলিয়ে উপজেলায় ৫ হাজারের উপরে লেবুর গাছ আছে। উপজেলার গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি ও রাড়ুলী ইউনিয়নে আংশিক এলাকায় লেবুর বাগান রয়েছে।

আরো পড়ুন :
পবিত্র আশুরার শোক পালন, নিরাপত্তা জোরদার
বার্সেলোনায় আবারও গুঞ্জন শুরু মেসিকে ফেরানোর চেষ্টা

গদাইপুর ইউনিয়নের মটবাটী, হিতামপুর,গদাইপুর ও গোপালপুর গ্রামে বাণিজ্যিক ভাবে লেবুর বাগান গড়ে উঠছে। বিশেষ করে বাগান মালিকরা বাগানের বেড়া দিতে প্রয়োজনীয় বাঁশের মূল্য বেশি হওয়ায় তারা বাগানের চারপাশে সীমানা দিয়ে লেবু গাছ লাগিয়ে বাগান সুরক্ষা করছে। লেবু গাছে ছোট ছোট কাঁটা থাকায় গরু, ছাগল, ভেড়া প্রবেশ করতে পারে না। একদিকে বেড়া দেয়ার খরচ বাঁচে ও অন্যদিকে আইলে লেবু গাছ লাগিয়ে বাগান মালিকরা লাভবান হচ্ছে। ঔষধী গুণেভরা কাগজি লেবু সকলের প্রিয়। প্রতিদিনের খাবার তালিকায় কাগজি লেবু না হলেই নয়। এপ্রিল মাসে লেবু গাছে ফুল ধরে। জুন ও জুলাই মাস লেবুর ভরা মৌসুম থাকে।

এক একটি লেবু গাছে ৫শ থেকে ১ হাজার লেবুর ফলন হয়। উপজেলার চেচুয়া গ্রামের লেবু ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, আব্দুর রহিম জানান, এ বছর লেবুর ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। তারা লেবু বাগানে মালিকের কাছ থেকে প্রতিটি লেবু ৫০-৭৫ পয়সা দরে ক্রয় করেছে। এ বছর স্থানীয় বাজরেও চাহিদা নেই লেবুর। এলাকার হাট-বাজারে ছোট লেবু ১ টাকা ও বড় লেবু ২টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। মটবাটি গ্রামের লেবু বাগান মালিক আব্দুল করিম বলেন, এ বছর লেবুর চাহিদা নেই, দামও কম। গাছের লেবু হলুদ হয়ে ঝরে পড়ছে।তা ছাড়া এ বছর বারোমাসি লেবুও প্রচুর পরিমানে ধরেছে। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জাহাঙ্গীর আলম জানান, পাইকগাছা উপকূলের এ এলাকা লবণাক্ত হওয়ায় ৩/৪টি ইউনিয়নে কাগুজি লেবু আবাদ হয়। কাগজি লেবু লাভ জনক হওয়ায় ক্ষেতের আইলের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিকে লেবু বাগান তৈরী শুরু হয়েছে।

লেবু বাগান লাগাতে তেমন কোন খরচ হয় না, সামান্য পরিচর্যা করলে লেবু বাগান থেকে প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কৃষি অফিস থেকে লেবু বাগান তৈরী করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপেও পাইকগাছায় বেড়েছে ভেনামী চিংড়ির উৎপাদন; অচিরেই বাণিজ্যিক চাষের প্রত্যাশা ইমদাদুল হক,পাইকগাছা,খুলনা।। পরীক্ষামূলক ভেনামী চিংড়ি চাষে এক বছরে বেড়েছে উৎপাদন। গতকাল শুক্রবার পাইকগাছা বিএফআরআইয়ের লোনা পানি কেন্দ্রে এক একরের একটি পুকুরে ৮৮ দিন বয়সী ভেনামী চিংড়ি হারভেস্ট করা হয়। এবার এক একর জমিতে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। যা গতবছরের তুলনায় ৩৪৪ কেজি বেশি।

উৎপাদন বেশি হওয়ায় খুশি চাষীরা। তারা দ্রুত ভেনামী চিংড়ির বাণিজ্যিক চাষের দাবি জানিয়েছেন। প্রত্যাশা করছেন অচিরেই চাষের সরকারি অনুমতি মিলবে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড্স এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, ২০২২ সালের ৯ মে ব্যাংকক থেকে আনা ১০ লাখ পোনা ছাড়া হয় ৫টি পুকুরে। পোনা ছাড়ার ৫০ তম দিনে এই একটি চিংড়ির গড় ওজন ছিল ১৮ গ্রাম। সবশেষ শুক্রবার ৮৮ তম দিনে গড় ওজন দাড়ায় ৩২ গ্রামে। যা গত বছর ২৫ গ্রাম গড় ওজন ছিল। তিনি আরও বলেন, ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো ভেনামী চিংড়ির পরীক্ষামূলক চাষ করা হয়। ওই বছর ১০৯ দিনে ১ একর জলাশয়ে ভেনামী চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল ৪ হাজার ১০১ কেজি। গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রায় ৩৫০ কেজি ভেনামী চিংড়ির উৎপাদন বেশি পেয়েছি।

এবার ৮৮ দিনে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি এক একরে।তিনি জানান, গত বছর আমরা ১০ লাখ পোনা ছেড়েছিলাম। সেখানে ৭ লাখ পিস চিংড়ি মাছ পেয়েছিলাম। এ বছর ১০ লাখ পোনা ছেড়েছি, আমরা আশা করছি ৯ লাখ ২৫ হাজার পিস চিংড়ি পাবো। এখানে মৃত্যুর হার কমে গেছে আমাদের অভিজ্ঞতার কারণে। এবার চিংড়ির ওজন বেড়েছে, কমেছে ২০ দিন সময়। ফলে ব্যয়ও কমেছে। আমরা আশা করছি গতবছরের তুলনায় এ বছর হেক্টর প্রতি গড়ে ২ টন চিংড়ি বেশি পাবো। গত বছর আমরা হেক্টর প্রতি ১০ টন চিংড়ি পেয়েছিলাম, এবার ১২ টন চিংড়ি পাবো। সরকার যে সফলতার কথা চিন্তা করছে, সেটা যদি বাস্তবে সত্যতায় রূপ নেয় তাহলে আগামী বছর সরকার ভনামী চিংড়ি চাষের বাণিজ্যিক অনুমোদন দিবে ইনশাআল­াহ।

যশোর এমইউসি ফুডস্ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ভেনামী চিংড়ি চাষি শ্যামল দাস বলেন, এবার গতবারের চেয়ে ভেনামী চিংড়ির উৎপাদন ভালো হয়েছে। এক একর পুকুরে ৪ হাজার ৪৪৫ কেজি ভেনামী চিংড়ি উৎপাদন হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রতি হেক্টরে ১১ হাজার ১০০ কেজি ভেনামী চিংড়ি হবে। ভেনামির বাণিজ্যিক চাষের জন্য চিংড়ি উৎপাদনকারীদের দাবির বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মুহাম্মদ ইয়ামিন চৌধুরী বলেন, দাবি বিষয় নয়, পরিবেশ-প্রতিবেশ সবকিছু মিলে কি আমাদের পারমিট করে সেটা দেখার বিষয়। সেটার জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি আছে।

তারা বসে এর প্রডাকশন, রোগ-বালাই কি হয়েছে, না হয়েছে সবকিছু বিবেচনা করে তারা সিদ্ধান্ত নিবে। এবার ভেনামী চিংড়ির উৎপাদনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রডাকশন আসলে কমপ্লিট এখনও হয়নি। আমরা একটু জাস্ট তাদের শুরুটা দেখেছি। তবে যারা এটা ফার্মিং করেছেন, তারা বলেছেন ভালো প্রডাকশন হয়েছে। পরে মেজারমেন্ট করে কতটুকু প্রডাকশন হয়েছে, তা বোঝা যাবে।

প্রডাকশনে যাবো কি যাবো না সেটি এখনও স্থির রয়েছে। আমরা এটার পজেটিভ-নেগেটিভ বিষয়ে এখনও যায়নি। আমরা এটা বিশ্লেষণ করে তারপর সেটার বিষয়ে যাবো। কারণ আমাদের যেমন আর্থিক বিষয় আছে, এর সাথে তেমন পরিবেশের বিষয়ও আছে। দুইটারই সেখানে বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে। শুধু আর্থিক বিষয় দেখলে হবে না, আমাদের পরিবেশের বিষয়টিও দেখতে হবে। সেটা দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো

আগষ্ট ০৯,২০২২ at ১৩:৫৪:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ ইদা/শই