সড়কে বাড়বে গতি বাঁচবে সময়, থাকবে না ভোগান্তি

পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় আধুনিকতা ও বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে। সড়কে গতি বাড়বে। যাত্রী ও চালকদের সময় যেমন বাঁচবে, তেমনি দীর্ঘ ভোগান্তির অবসান হবে। যাত্রী-চালকদের আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন ফেরিঘাটে বসে থাকতে হবে না। আন্তঃদেশীয় সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও সুদিন ফিরবে। আসছে কুরবানির ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের আর দুর্ভোগে পড়তে হবে না।

শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের এমডি শুভংকর ঘোষ রাকেশ বলেন, পদ্মা সেতু খুলে যাওয়ার পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে সড়ক পথে দূরত্ব অনেক কমে যাবে। ঢাকার সঙ্গে কলকাতার দূরত্বও অনেক কমবে। এতে সময় বাঁচবে। পথে ভোগান্তি থাকবে না। যোগাযোগ খরচও কমবে। পরিবহন সেক্টরে একদিকে বিনিয়োগ বাড়বে, অন্যদিকে এই সেক্টর আরো গতিশীল হবে।

খ্যাতনামা পরিবহন কোম্পানি গ্রিনলাইন পরিবহনের এমডি মো. আব্দুস সাত্তার বলেন, ফেরিঘাটে গত ৩০ বছরের সীমাহীন ভোগান্তি ও চরম দুর্ভোগ থেকে যাত্রী ও পরিবহন কোম্পানিগুলো মুক্তি পাবে। পথের দূরত্ব কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাসের ভাড়াও কমবে। গ্রিনলাইন পরিবহনসহ বিভিন্ন কোম্পানির ৪০০ থেকে ৫০০ নতুন বাস ২১ জেলায় এবং ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করবে। গ্রিনলাইন পরিবহন ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস সার্ভিস চালু করবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয়ে থাকে। বছরের পর বছর এসব পণ্যবাহী যানবাহনকে পদ্মা নদী পাড়ি দিতে

ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়েছে। ট্রাকচালকরা দিনের পর দিন ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় ভোগান্তি পার করেছেন। পদ্মা সেতু হওয়ায় সেই ভোগান্তির অবসান হবে। আগামী ২৬ জুন থেকে এই চালকরাই দিনের মধ্যে মালামাল পৌঁছে দিয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। পদ্মা সেতু ব্যবহারের কারণে উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি আরো গতিশীল হবে। ব্যবসা, চিকিৎসা, ভ্রমণসহ নানা কাজে যারা ভারতে যাবেন তারাও এখন থেকে অনেক কম সময়ে ভারতে যাতায়াত করতে পারবেন।

বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচলরত বাসগুলো এখন পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে চলাচল করে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হলে এই বাসগুলো রুট পরিবর্তন করে এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করবে। এতে অনেক সময় বাঁচবে। আবহাওয়া খারাপ, পদ্মা নদী উত্তাল থাকলেও নদী পাড়ে আর ফেরির অপেক্ষায় বসে থাকতে হবে না। সবার সব ভোগান্তির অবসান হবে।

রেলপথে ঢাকা থেকে কলকাতার দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার। কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেনটি কলকাতা রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে নদীয়া হয়ে গেদে এবং বাংলাদেশের দর্শনা স্টেশন হয়ে ঢাকায় পৌঁছতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে। পদ্মা সেতুর রেলপথ চালু হলে ১৫০ কিলোমিটার দূরত্ব কমে যাবে।

তখন কলকাতা থেকে বনগাঁ, হরিদাসপুর বাংলাদেশের বেনাপোল, যশোর, নড়াইল, ফরিদপুরের ভাঙ্গা হয়ে ২৫১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে। পদ্মা সেতুর রেললাইন হয়ে ৬ থেকে সাড়ে ৬ ঘণ্টার মধ্যে কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। ঢাকা থেকে অল্প সময়ের মধ্যেই ভ্রমণপিপাসু মানুষ ৪ ঘণ্টায় বরিশাল, ৫ ঘণ্টায় পটুয়াখালী এবং সাড়ে ৬ ঘণ্টায় কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে পৌঁছতে পারবেন। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, ফরিদপুর জেলার দূরত্ব কমে যাবে।

ঢাকার একেবারে কাছের শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার বাসিন্দারা পথের কষ্ট নিয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। রাতে লঞ্চে রওয়ানা হয়ে মাঝরাতে পদ্মা পাড়ি দিয়ে সকালে ঢাকায় ফিরতেন। নদী উত্তাল থাকলে সেই যাত্রাও বাতিল হয়ে যেত। কিন্তু পদ্মা সেতু হওয়ায় এই দুই জেলার বাসিন্দারা এখন নিজেদের পৈতৃক ভিটায় থেকে সকালে ঢাকায় এসে অফিস করার পরিকল্পনা করছেন।

প্রতিদিন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এই দুই জেলার ৩ শতাধিক বাস ঢাকায় যাতায়াত করবে। আগে এই অঞ্চলের কৃষিপণ্য ফেরি পার হতে না পেরে রাস্তায়ই পচে যেত। এখন সহজেই ২ ঘণ্টার মধ্যে সব ধরনের পণ্য ঢাকা পৌঁছবে। পদ্মা সেতু চালু হলে ফেরিঘাটে বাস-ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে ঘাট সিরিয়ালের নামে স্থানীয় প্রভাবশালী গোষ্ঠী, পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিসির লোকজনের চাঁদাবাজি পুরোপুরি বন্ধ হবে বলে ভুক্তভোগীদের প্রত্যাশা।

জুন ১৫,২০২২ at ০৬:০৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/রারি