শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী রিফাত কুমিল্লার নৌকার কাণ্ডারি !!

মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে বর্তমান সরকার। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে জিরো টলারেন্সে। তার নির্দেশেই সারাদেশে তালিকা করা হয় শীর্ষ মাদক কারবারিদের। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে দেশে শুরু হয় মাদকবিরোধী অভিযান। ওই অভিযানে প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। গ্রেপ্তার শুরু করে মাদক কারবারি ও এর পৃষ্ঠপোষকদের।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহতও হন অনেক মাদক কারবারি। যা সব মহলের প্রশংসা কুড়িয়েছিল সেসময়। অবশ্য এর আগে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে মাদক কারবারি ও এর পৃষ্ঠপোষকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির নাম ছিল সেই তালিকায়। চট্টগ্রাম বিভাগের তালিকায় এমনই একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হলেন আরফানুল হক রিফাত।

তিনি কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন এই রিফাতই। শনিবার গণভবনে অনুষ্ঠিত দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে মেয়র পদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। রিফাত আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত নেতা হলেও শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে তার নাম থাকায় এ নিয়ে কুমিল্লায় চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদকবিরোধী অভিযানের পূর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শীর্ষ মাদক কারবারি ও এর পৃষ্ঠপোষকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়। ২০১৮ সালের ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ফরিদ আহাম্মদ স্বাক্ষরিত ওই তালিকাটি দেশদর্পণের কাছে সংরক্ষণে আছে। এতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সদ্য নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আরফানুল হক রিফাতের নাম প্রথমেই রয়েছে।

আরফানুল হক রিফাত মাদক কারবারির শীর্ষ তালিকায় তার নাম থাকার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, তালিকার বিষয়ে আমি কিছু জানি না, আমি কিছু দেখিওনি। আমার কাছে এরকম কোনো তথ্যও আসেনি। ছাত্রলীগ থেকে আমার রাজনীতিতে হাতে খড়ি। বহু জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। আমার ত্যাগ-তিতিক্ষা বিবেচনায় নিয়ে আমার নেত্রী ও আমার দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কুমিল্লার মানুষ আমাকে নিশ্চয়ই ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করবেন। সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, আপনারাও কুমিল্লায় আসেন, সবকিছুর খোঁজ নেন। আমি আপনাদেরও সহযোগিতা চাই।

কুমিল্লায় আওয়ামী লীগসহ বির্ভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের করা তালিকায় কুমিল্লায় মাদকের গড ফাদার হিসেবে রিফাতের নাম শীর্ষে আছে। রিফাতকে কুসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া ঠিক হয়নি। কুমিল্লা শহরে যত মাদক ব্যবসায়ী আছে, সবাই রিফাতের ছত্রছায়াতেই চলে। এমনকি তিনি নিজেও একজন চিহ্নিত মাদকসেবী। অতিমাত্রায় মাদক সেবন করে রিফাত কয়েক বছর যাবত শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য ও দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, আরফানুল হক রিফাত আওয়ামী লীগের একজন পরিক্ষিত নেতা। ছাত্রলীগের রাজনীতি করার সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। তাকে সুস্থ করে তুলতে বিদেশে চিকিৎসা করাতে হয়েছিল।

তিনি একজন মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। বর্তমানে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কুমিল্লার আপামর মানুষের কাছেও রিফাত গ্রহণযোগ্য। সব দিক বিবেচনা করে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, রিফাত জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েই বিজয়ী হয়ে আসবেন।

মে ১৫,২০২২ at ১১:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/ভোকা/রারি