ইফতারের নিয়ত-দোয়া এবং প্রস্তুতি

বছরঘুরে মুসলিম উম্মাহর দ্বারপ্রান্তে আবারও পবিত্র মাস রমজান। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে রোববার শুরু প্রথম রোজা। রোজায় ইফতার খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইফতারের সময় দোয়া এবং ইফতারের আগে-পরেও রয়েছে তাসবিহ এবং দোয়া। তাই ইফতার শুরুর আগ মুহূর্তে ইফতারের সময়ের দোয়াগুলো শিখে নেওয়া এখুনিই জরুরি।

ইফতার রোজার বরকতময় এবং কল্যাণের অনুসঙ্গ। দোয়া কবুলের অন্যতম সময়। বরকতে ভরপুর সুন্নাতের অনুসরণ ও অনুকরণ। তাই আল্লাহর ফরজ বিধান রোজা পালনের শুরুতে ইফতারের মুহূর্তের দোয়াগুলো জেনে নেওয়া এবং আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য তুলে ধরা হলো।

রোজা পালন ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর সিয়াম বা রোজা ফরজ করা হয়েছে; যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আত্মশুদ্ধি) অর্জনে করতে পার। (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৩)

ইফতারের দোয়া
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দোয়া পড়ে ইফতার করা
بِسْمِ اللهِ – اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
উচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি – আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা আফতারতু
অর্থ : ‘আল্লাহর নামে (শুরু করছি); হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিযিক্বের মাধ্যমে ইফতার করছি।’

ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বেশি ইসতেগফার পড়া
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الْعَظِيْم – اَلَّذِىْ لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ اَلْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِىِّ الْعَظِيْم
উচ্চারণ : ‘আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম, আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহু আল-হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।’

ইফতারের পর আল্লাহর শোকরিয়া আদায়ের দোয়া
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন ইফতার করতেন তখন বলতেন-
ذَهَبَ الظَّمَاءُ وَابْتَلَتِ الْعُرُوْقُ وَ ثَبَتَ الْأَجْرُ اِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : ‘জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতালাতিল উ’রুকু; ওয়া ছাবাতাল আঝরূ ইনশাআল্লাহ।’
অর্থ : ‘ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো ‘ (আবু দাউদ, মিশকাত)

ইফতারের সুন্নাত পদ্ধতি
যথাসময়ে ইফতার করাও সুন্নাত। ইফতারের ক্ষেত্রেও রয়েছে কিছু করণীয় এবং দিকনির্দেশনা। যা পালন করা সুন্নাত ও উত্তম। তাহলো-

দ্রুত ইফতার করা
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা সুন্নাত। এ সময় সাংসারিক কাজ বা অন্য কোনো কাজে ব্যস্ত থাকা সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (দেরি না করে) দ্রুত ইফতারকারী কল্যাণ লাভ করতে থাকে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার
মাগরিবের আজানের সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা। ইফতার করার জন্য আজান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা ঠিক নয়। আর আজান শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষার কথাও কোথাও বলা হয়নি। বরং আল্লাহ তাআলা বান্দার জন্য রমজানের রোজায় কল্যাণকর বিষয়গুলো সহজ করতে চান। আল্লাহ বলেন-
‘আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান। কঠোরতা চান না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)

আজানের উত্তর দেওয়া
ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য আজানের উত্তর দেয়া আবশ্যক নয়। বরং হাদিসের নির্দেশনা হলো- রোজাদার ও রোজা নয় এমন সব ব্যক্তির প্রতি নির্দেশনা হলো-
‘তোমরা যখন আজান শুনবে, মুয়াজ্জিন যেমন বলে তেমন বলবে।’ (মুসলিম)

ইফতারে বেশি সময় ব্যয় না করা
ইফতারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করা, নামাজ আদায়ে দেরি করা কিংবা জামাআতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা মারাত্মক নিন্দনীয় কাজ। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামান্য ইফতার গ্রহণ করে দ্রুত নামাজ আদায় করে নিতেন।’

ইফতারের সময় দোয়া করা
দোয়া কবুলের মুহূর্তগুলোর মধ্যে ইফতারের সময়ও একটি। অনেকেই গল্প-গুজবের মধ্য দিয়ে ইফতার করে থাকেন। তাই এ সময় গল্প না করে দোয়া করার মাধ্যমে সুন্নাতের আমল করা। আবার ঘরের নারীরা এ সময় বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাদের উচিত, এ সময় দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। পিতামাতার দোয়া, রোজাদারের দোয়া ও মুসাফিরের দোয়া।’ (মুসনাদে আহমদ)

ইফতার অপচয় না করা
অপচয় সুন্নাত পরিপন্থী কাজ। চাই তা ইফতার হোক কিংবা অন্য খাবার। আর সংযমের মাসে ইফতারের বাড়াবাড়ি ও জৌলুস করাও ঠিক নয়। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
‘তোমরা খাও ও পান করো। অপচয় কোরো না।’ (সুরা আরাফ : আয়াত : ৩১)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত সেহরি ও ইফতারে সুন্নাত বিষয়গুলো মেনে চলা। হাদিসের ওপর আমল করা। সেহরি ইফতারের কুসংস্কার ও মন্দ বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকা। সেহরির পর নিয়ত করা, ইফতারের আগে তাওবা-ইসতেগফার করা, ইফতারের সময় দোয়া পড়া এবং ইফতারের পর শোকরিয়া আদায় করে দোয়া পড়া।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেহরি ও ইফতারের সুন্নাতের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এপ্রিল ০৩.২০২২ at ১৪:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/জানি/জআ