আফগানিস্তানে পরিবারের সদস্যসহ ২৯ নারী আটক

আফগানিস্তানের কাবুলে ২৯ নারী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের আটক করেছে তালেবান, এমন অভিযোগ করেছেন একজন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কূটনীতিক।

স্থানীয় সময় গতকাল শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) যুক্তরাষ্ট্রের ওই কর্মকর্তা আফগানিস্তানে আটক ও অনির্দিষ্টকালের জন্য আটকে রাখা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

আফগান নারী ও মানবাধিকারবিষয়ক মার্কিন বিশেষ দূত রিনা আমিরি বলেছেন, শুক্রবার আটক করা ৪০ জনের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেন, তাদের অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত।

পরে তিনি টুইটারের মন্তব্য মুছে ফেলেন। কেন এটি অপসারণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করেনি মার্কিন কর্তৃপক্ষ। তবে অন্যান্য সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কাবুলে একাধিক নারীকে আটক করা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার, সমালোচনার মুখে তালেবান দুই বিদেশিসহ একদল সাংবাদিককে মুক্তি দিয়েছে বলে জানা গেছে। নারী অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলনের পরে নিখোঁজ হওয়া একজন কর্মীকেও মুক্তি দিয়েছে তারা।

স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস এক টুইট বার্তায় আফগানিস্তানে নিখোঁজ নারী কর্মীদের সুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাদেরকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু আরও বেশ কয়েকজন নারীকে মধ্যরাতে তাদের বাড়ি থেকে অপহরণ করার অভিযোগ উঠেছে। তবে তাদেরকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করেছে তালেবান সরকারের পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আলিয়া আজিজির নিখোঁজ হওয়ার বিষয়েও উদ্বিগ্ন তার স্বজনরা। তিনি একজন শীর্ষ কারা কর্মকর্তা যিনি চার মাসেরও বেশি সময় ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। তালেবান ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিগত সরকারের অধীনে নিরাপত্তা বাহিনীর জন্য কাজ করা বেশ কয়েকজন নারীর ওপর হামলা ও হত্যা করার অভিযোগও রয়েছে।

আরো পড়ুন :
অভয়নগরে অস্ত্রসহ যুবক আটক
অবশেষে মৃত্যু কাছে হার মানলেন সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার রাঙ্গুনিয়ার ইউসুফ

১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদার নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট সেখানে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।

এরপর টানা ২০ বছর ধরে যুদ্ধ চলে তালেবান এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের সঙ্গে। তালেবানের শাসনামলে নারীদের স্বাধীনতা খর্ব করা, প্রকাশ্যে বিচার ব্যবস্থার মতো নিয়ম কানুন মেনে নেয়নি আফগানিস্তানের মানুষ।

সেকারণে তালেবানের পতনের পর আফগানরা ভেবেছিল সময় হয়তো বদলেছে। কিন্তু তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্রদের ২০ বছর ধরে চলা যুদ্ধের কারণে স্বাভাবিক হতে পারেনি তাদের জীবনযাপন। যুদ্ধ চলাকালে প্রাণ গেছে বহু বেসামরিক আফগান নাগরিকের।

আবারও তালেবান ক্ষমতায় আসায় সেই ১৯৯৬ সালের শঙ্কা ভর করেছে দেশটির সাধারণ মানুষের মনে। এরই মধ্যে তালেবান সরকার নারীদের ব্যাপারে নানা বিধিনিষেধ জারি করেছে। এর আগে তালেবান নারীবিষয়ক মন্ত্রণালয়ও বন্ধ করে দেয়।

শান্তিবিষয়ক ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু তাই নয় ভেঙে দেওয়া হয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনও। ফলে একদিকে যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা অন্যদিকে অর্থনীতির চরম বিপর্যয়। আর এসবের প্রভাব পড়ছে আফগানিস্তানের খেটে খাওয়া মানুষের ওপর।

ফেব্রুয়ারী ১৩.২০২১ at ১২:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দ্যগা/রারি