রোহিঙ্গাদের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের সমাধানে জাবির গবেষণা

কক্সবাজার জেলার উখিয়া-টেকনাফ এলাকার রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসের সমাধান করতে এল্যায়েন্স অফ ইন্টারন্যাশনাল সাইন্স অর্গানাইজেশন, চীন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছেন।

বুধবার (১১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম শাখাওয়াত হোসেন গবেষণার ফলাফল বর্ণনা করেন।

গবেষণা নিবন্ধে দেখা যায়, প্রতিবছর বর্ষাকালে ক্যাম্প এলাকায় বিশেষ করে টেকনাফ-উখিয়া অঞ্চলের পাহাড়ে অসংখ্য ভূমিধ্বস হয়ে নানা রকমের বিপর্যয় ঘটছে। ফলে অনেক মানুষের প্রাণ বিপন্ন হচ্ছে ও আর্থিক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের এ অঞ্চলে অস্থায়ী ক্যাম্পে বসবাসের ফলে এই ঝুঁকি আরো বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরী করছে। মৌসুমী বৃষ্টিপাতের সময় এবং উচ্চ শক্তি সম্পন্ন ৫ বা তার অধিক মাত্রার ভূমিকম্প জনিত মাটির তরলীকরণের কারণে ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি ঢালসমূহ ও দুর্যোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-প্রকৌশল (Geo-engineering) বিষয়ক গবেষক ও শিক্ষকগণ সাম্প্রতিক এ গবেষণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, পাহাড়ের শরনার্থী ক্যাম্প এলাকায় মাঝারি থেকে উচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ ভূ-প্রকৌশল (Geo-engineering) নিয়ামক নিরাপদ মাত্রার (Factor of Safety) মান এক (০১) এর কাছাকাছি অথবা এক (০১) এর থেকে কম।

এছাড়া গবেষকরা পাহাড়ের মাটির ভূ-প্রকৌশল, স্বচ্ছিদ্রতা (Porosity) ভূমির বৈশিষ্ট্য, ভূ অভ্যন্তরিণ পানির প্রবাহ ও স্থিতিশীলতা মডেলিং এর উপর ভিত্তি করে ক্যাম্প এলাকার টেকসই নিরাপত্তার জন্য একটি ঝুঁকি মানচিত্র (Risk Map) তৈরী করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক এ টি এম শাখাওয়াত হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশ সরকার, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বরাবরই সাহায্য করে যাচ্ছে। তাদেরকে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। অথচ তারা আমাদের দেশের প্রকৃতি ও সামাজিক অবস্থার উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু তারা প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে নিরাপদ নয়। তাদের নিরাপত্তা ও আমদের দেশীয় ভূমি ও প্রকৃতি রক্ষার একটা দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের লক্ষ্যে আমাদের এই গবেষণা কার্যক্রম।

আরো পড়ুন:
রেলে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতানো সেই প্রতারক মিলন গ্রেফতার
ফুলবাড়ীতে বাল্য বিবাহ, যৌন হয়রানি ও মাদকের সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত

তিনি আরো বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ের গবেষণা শেষ করেছি। পরবর্তিতে আরো গবেষণা কার্যক্রম চলবে। আমাদের গবেষক দলের আরও একটি পরিকল্পনা হলো ভবিষ্যতে ক্যাম্প এলাকায় টেকসই উদ্যোগ প্রণয়নে একটি ‘ভূমিধ্বস সংক্রান্ত সংকেত প্রদান (Early Warning System) ও তার ব্যবস্থাপনা/তদারকি’ বিষয়ক একটি সিস্টেম স্থাপন করা। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাগণ নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করতে পারবে এবং দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

উল্লেখ্য, এ গবেষণা প্রকল্পে একই বিভাগের পাঁচ জন শিক্ষক ও ছয় জন শিক্ষার্থী কাজ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হুসাইন মো. সায়েম, অধ্যাপক মো. এমদাদুল হক, সহযোগী অধ্যাপক মো. হাসান ইমাম, অধ্যাপক মাহমুদা খাতুন, গবেষক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

জানুয়ারি ১১.২০২২ at ১৭:৪৯:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/নউ/জআ