রেলে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতানো সেই প্রতারক মিলন গ্রেফতার

রাজশাহীতে রেলে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতানো মো. নূরে-ইসলাম মিলন (৩৮) নামের সেই প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৫, এর সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারী) বেলা ১১টায় নগরীর বোয়ালিয়া থানাধিন ঘোড়ামারা এলাকার (দিলদায়ার বাগ) নামে একটি ভাড়া করা বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৫, রাজশাহীর সিপিএসসি, মোল্লাপাড়া ক্যাম্পের একটি অভিযানিক দল।

প্রতারক মো. নূরে-ইসলাম মিলন বোয়ালিয়া থানাধিন মিয়াপাড়া এলাকার মৃত ডাবলুর ছেলে। তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-৫, এর উপ-অধিনায়ক মেজর মোর্শেদ।

জানা যায়, মো. রায়হান আলী (৩৫) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে রাজশাহী রেলওয়েতে বুকিং সহকারী পদে চাকরী দেয়ার নামে ২১ লাখ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণ করে প্রতারক মো. নূরে-ইসলাম মিলন। পরে তাকে চাকরি না দিয়ে পুরো টাকাই আত্মসাৎ করে সে।

মামলার বাদী মো. রায়হান আলী চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার বাবুপুর বিশ্বাস পাড়া গ্রামের মো. শামসুল হকের ছেলে।

রায়হান আলী জানায়, গত ২০১৫ সালে তার এক নিকট পরিচিতজনের মাধ্যমে প্রতারক মিলনের সাথে পরিচয় হয় তার। ওই সময় রায়হান অনার্স পাশ করে রেলে চাকরি পওয়ার জন্য মাধ্যম খুঁজছিলো। বিষয়টি মিলন জানতে পেরে তাকে বলে তার হাতে বড় দরবারের লোক আছে। চাহিদা মোতাবেক টাকা দিলেই চাকরি পাওয়া সম্ভব। কথা বলার ভঙ্গিটা এমন ছিলো যে, চাকরি কোন ব্যপারইনা। তাই রায়হান তাকে বিশ্বাস করে বড় দরবারের লোকের সাথে কথা বলার দায়িত্ব দেন।

এরপর প্রতারক মিলন রায়হানকে বলে চাকরি পেতে হলে ২২ লাখ টাকা দিতে হবে। সরল বিশ্বাসে ভুক্তভোগী রায়হান তাকে দুইবারে ১৯ লাখ ৯০হাজার টাকা প্রদান করেন। তবে মিলনের কাছে সমপরিমান টাকার চেক নেয় রায়হান। এরপর বছর পেরিয়ে গেলেও রায়হানের চাকরি হয়নি। বিভিন্ন রকম তালবাহানা আর চিট বাটপারি কথা বলে রায়হানকে ঘুরাতে থাকে মিলন। পরে ২০১৮ সালে রায়হান বাদী হয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ কোর্টে চেকের মামলা করেন।

সেই মামলায় গত ইং ০৪/১০/২০২১ তারিখে এন,আই/এসিটি এর ১৩৮ ধারায় দোষি সাব্যস্ত করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও চেক বর্নিত অর্থদন্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। সেই থেকে পলাতক ছিলো প্রতারক মো. নূরে-ইসলাম মিলন।

অবশেষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় তাকে র‌্যাব-৫ এর সদস্যরা তার ভাড়া করা বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে।
উল্লেখ্য, গত অনুমানিক দেড় বছর আগে উপ-শহর পানি ট্যাংকি এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ীর পাওনা টাকা উঠিয়ে দেয়ার নাম করে ৫ লাখ টাকা চিট করে।

মো. আব্দুল গফুর সাংবাদিকদের জানান, জমি ক্রয়ের জন্য এক ব্যক্তিকে মোটা অংকের টাকা বায়না করেছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি টাকা না দিয়ে তাকে ভোগান্তি করছিলেন। লোক মারফত প্রতারক মিলন খবর পেয়ে আমার কাছে এসে বলে, বোয়ালিয়া থানার ওসি, ডিসিকে আমি যা বলবো তাই হবে।

তার কথায় বিশ্বাস করে তিনি তার উপকারের মূল্য জানতে চান। মিলন প্রশাসন ও তার খরচসহ মোট ৫ লাখ টাকা চায়। এরপর আব্দুল গফুর নিজে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় এসে প্রথমে ২ লাখ টাকা দেন। এরপর দুইবারে দেড় লাখ করে ৩ লাখ টাকা মিলনকে দেন।

আরো পড়ুন :
বীরগঞ্জের সাজেদুরের স্বপ্ন পূরণে পাশে দাড়ালেন মানবিক পুলিশ
ফেব্রুয়ারিতে জানা যাবে এইচএসসির ফল

পরে মিলন গফুর সাহেবের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে টাকা ফেরত দেয়া তো দূরের কথা ফোনও ধরে না বলে জানান ভুক্তভোগী গফুর। তবে তিনি বলেন টাকা দেয়ার কোন প্রমান পত্র না থাকায় অভিযোগ বা মামলা করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

এছাড়াও ২০০৮ সালে ২০৭ বোতল আমদানী নিষিদ্ধ ভারতীয় ফেনসিডিলসহ মিলনের সহযোগীদের গ্রেফতার করে মহানগর গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি দল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এশাধিক স্থানীয়রা জানায়, আয় রোজগারের কোন প্রতিষ্ঠান নাই মিলনের। প্রাইভেটকার নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায়। থাকে ভাড়া বাড়িতে। এত টাকা পায় কোথায় ? তারা আরও বলেন, পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে মিলন। বিভিন্ন ভাবে মানুষকে ফাঁসিয়ে টাকা উপার্জন করে বলেও জানান তারা।

মিলনের এক নিকট আত্বীয় জানান, ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ুয়া মিলন। সে আবার দৈনিক উপচার পত্রিকার যুগ্ন সম্পাদক। তবে পত্রিকাটি প্রিন্ট হয় হটাৎ, হটাৎ। এ নিয়েও সাংবাদিক মহলে আছে নানা ধরনের গুঞ্জন।

জানুয়ারি ১১.২০২১ at ১৬:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মারারা/রারি