পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশ উপেক্ষা করে কয়লা তৈরী, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে

পরিবেশ অধিদপ্তরের বন্ধের নির্দেশ উপেক্ষা করে সাতক্ষীরার তালা উপজেলায় অবৈধ চুল্লিতে দেদারছে কাঠ পুড়িয়ে বানানো হচ্ছে কয়লা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে এসব চুল্লিতে কাঠ সরবরাহ করা হয়। এসব চুল্লির নির্গত ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। কয়লা তৈরীতে নিধন করা হচ্ছে বৃক্ষ, অবৈধ চুল্লির ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ আর জমি হারাচ্ছে তার উর্বরতা শক্তি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের সানী ইট ভাটার পশ্চিম পাশে দলুয়া -পাটকেলঘাটা সড়কের কাদিকাটি গ্রামের হাজরা পাড়া এলাকার একটি জমিতে তৈরি করা হয়েছে বড় আকারের পাঁচটি চুল্লি। এই চুল্লিতেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। আর চুল্লি থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর কালো ধোঁয়া। ধোঁয়া ও গন্ধে চুল্লির আসে পাশে থাকা দায়।

চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেওয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেওয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২৫০/৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে বস্তায় ভরে ট্রাকে করে ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চালান করা হয়।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, খলিশখালি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কাদিকাটি গ্রামের মৃত হাজী নওশর আলীর ছেলে মো. কামাল হোসেন এই চুল্লির মালিক। তিনি কয়েক বছর ধরে এখানে কাঠ পুড়িয়ে আসছেন। কাঠ পোড়ানোর সময় প্রচুর কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। এই ধোঁয়া ও গন্ধে জমিতে কাজ করতে কষ্ট হয়। চুল্লি সংলগ্ন জমিগুলোতে ধানসহ অন্যান্য ফসল উৎপদন ব্যাহত হচ্ছে।

আরো পড়ুন :
জনতার উত্তাল ঢেউয়ে হাসিনার পতন অত্যাসন্ন- ঝিনাইদহে নিতাই রায় চৌধুরী
যশোরে ভাইপোর স্ত্রীকে বিয়ে নিয়ে বিরোধে হামলা, স্বর্ণালংকর ও টাকা লুটের ঘটনায় মামলা

আগে জমিতে যেভাবে ফসল ফলতো এখন এ চুল্লির ধোঁয়ায় তেমন ফসল ফলে না এমন অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের। এসময় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, অনেক সাংবাদিক এসে ছবি তুলে খবরের কাগজে ছাপিয়েছে কিন্তু কোন লাভ হয়নি। প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। আপনিও লিখুন, তবে আমাদের নাম দিবেন না। দেখুন প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নেয় কিনা।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, ‘চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, কাশি লাগে। ‘ইটভাটা ও কয়লার চুলার কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ সাধারণ মানুষ শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করার ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।’

এ বিষয়ে চুল্লি মালিক কামাল হোসেন বলেন, আমি খারাপ কোনও কাজ করছি না। বিকল্প জ্বালানি তৈরি করছি। এইদিকে তেমন বাড়িঘর নেই তাই মানুষের ক্ষতির সম্ভবনা কম। এক প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন একটি চিঠি দেখিয়ে বলেন, একমাস আগে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বন্ধের চিঠি পেয়েছি। যদি পরিবেশর হুমকি হয় তাহলে বন্ধ করে দেব।

এ বিষয়ে জানতে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের কাছে ফোন করলে তিনি জরুরী মিটিংএ আছেন বলে জানন।

ডিসেম্বর ৩০.২০২১ at ১৫:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোরোটি/রারি