লক্ষ মাত্রা চেয়ে ১০০ হেক্টর বেশী জমিতে সরিষার আবাদ

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল।এ যেন সবুজের বুকে কাঁচা হলুদের আলপনা। মাঠে মাঠে হলুদ ফুলের সমারোহ। সরিষা হলুদ ফুল দেখে চোখ ঝলসে উঠে। প্রতিটি মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো। চারদিকে সরিষা ফুলের মৌ-মৌ গন্ধ।

সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে পুরো মাঠ লক্ষ লক্ষ মৌমাছির গুঞ্জনে মহিত করে তুলেছে। সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণে মহাব্যস্ত মৌমাছিরা । সরিষার আবাদ করে যেমন লাভবান হচ্ছে কৃষক তেমনি এ মৌসুমে লাভবান হচ্ছে মৌচাষীরা। সরিষার ফুল থেকে শত শত টন মধু সংগ্রহ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তালা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলায় সরিষা চাষে লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৬০ হেক্টর।তবে লক্ষ মাত্রা চেয়ে ১’শ হেক্টর বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে চলতি মৌসুমে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ,সার ও নগদ অর্থ সহয়াতা প্রদান করা হয়েছে।এছাড়াও কম খরচে বেশি লাভের আশায় শতকরা ৯০ ভাগ কৃষক এ বছর অধিক ফলনশীল টরি-৭, বারি-১৪ ও ১৫ জাতের সরিষা চাষ করেছেন।

বাকি ১০ ভাগ কৃষক চাষ করেছেন দেশীসহ অন্যান্য জাতের সরিষা।অসময়ের বৃষ্টিপাতে চাষীদের কিছুটা ক্ষতিসাধন হলেও বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছেন চাষিরা। তালা উপজেলা কৃষি অফিসারসহ মাঠ পর্যায়ের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি অফিস।

উপজেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি মাঠে সরিষার আবাদ হয়েছে চোখে পড়ার মতো ।মাঠের পর মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণ ব্যস্ত আর প্রকৃতি প্রেমি ছেলে-মেয়েরা সরিষা ফুলের ক্ষেতে বসে তুলছে ছবি। তবে অনেক জমিতেই ফুল শেষ হয়ে ফল দেখা গেছে। ফলগুলো বেশ তরতাজা, যা ভালো ফলনের জানান দিচ্ছে।

আরো পড়ুন :
ঠাকুরগাঁওয়ে ২০টি দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ যুবক আটক
উপকূলের শিশুদের জীবনমান ও করণীয় শীর্ষক সংলাপ

এক বিঘা জমিতে এক কেজি সরিষার বীজ বপন করতে হয় সার বীজ কীটনাশকসহ সকল খরচ মিলে প্রায় চার,পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়। বিঘা প্রতি জমিতে পাঁচ থেকে ছয় মণ সরিষা হয়। সরিষা চাষ করতে প্রধানত ৪টি জিনিস প্রয়োজন হয়। এরমধ্যে রয়েছে ভালো বীজ, সার, সেচ ও যত।

তালা সদর ইউনিয়নের সরিষা চাষী আজিজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছেন। বিঘা প্রতি জমিতে ১৪ কেজি ইউরিয়া সার, ৮.৫ কেজি পটাশ, ১৮ কেজি টিএসপি, ১২.৫ কেজি জিপসাম, ২ কেজি ম্যাগনেসিয়াম সালফেট, ৩.৭৫ কেজি জিংক সালফেট, ৭.৭৩ কেজি বরিক এসিড ও প্রয়োজন মত গোবর সার মিশিয়ে জমিতে ছড়িয়ে দিয়ে সরিষার বীজ বপন করেন। পরে আরেকবার প্রয়োজন মতো সার ওষুধ ও সেচ দিয়েছেন। এতে তিনি ভাল ফলনের আশা করছেন।

জালালপুর ইউনিয়নের সরিষা চাষী অলোকা হালদার কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ,সার ও নগদ অর্থ সহয়াতা পেয়ে ১বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছেন। নিন্মচাপে বৃষ্টির কারনে সরিষা ফুল ঝরে সামান্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে আর বৃষ্টি না হলে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হবে বলে জানান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হাজিরা খাতুন কালের কণ্ঠকে বলেন, গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ১শ’ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশী হয়েছে। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা চাষে খরচ ও শ্রম দুটিই কম লাগে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে কৃষকদের মাঝে সরকারি ভাবে সরিষা বীজ,সার ও নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে।বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ফলে সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। উপজেলা বিভিন্ন ক্ষেত পরিদর্শন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিক ফলন পেতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে সরিষার বাম্পার ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন তিনি।

ডিসেম্বর ২৪.২০২১ at ১৪:৫০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মোরোটি/রারি