রেফারিং ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলো, এই ভয়ই পেয়েছিলেন জয়া চাকমা!

ভারতের বেনারসে ফিজিকাল এডুকেশনের ওপর উচ্চতর পড়াশোনা করছেন বাংলাদেশের প্রথম নারী রেফারি জয়া চাকমা। এরই মধ্যে আগস্টে এএফসির এলিট রেফারিদের প্যানেলে ঢুকতে জামশেদপুরে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। সেখানে পাস করলেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ পেতে সহজ হতো। কিন্তু সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। ভেঙে পড়া জয়ার মনের কোণে ভয় জমে যায়- এই বুঝি রেফারিং ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেলো!

এরই মাঝে ঢাকায় এসে অনেকটা ভয়ে ভয়ে ২০২২ সালের জন্য নতুন করে ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষায় বসলেন। পরীক্ষায় পাস না করলে যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা হারাবেন, ক্যারিয়ার হুমকির মুখে পড়ে যাবে। আশার কথা দিনকয়েক আগের সেই পরীক্ষায় সফল হয়েছেন। এরই সঙ্গে ফিরে পেয়েছেন নতুন করে পথচলার আত্মবিশ্বাস।

এ যেন একই সঙ্গে মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ দেখা। পথচলায় নতুন করে রসদ পেয়ে রাঙামাটি থেকে উঠে আসা জাতীয় দলের সাবেক এই ফুটবলার বাংলা ট্রিবিউন বললেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে খেলা কম থাকায় নিজের ফিটনেস সেভাবে মেইনটেইন করা হয়নি। জামশেদপুরে খারাপ করে ভয় ঢুকে গিয়েছিল। আমার রেফারিংয়ের ক্যারিয়ার এই বুঝি সব শেষ হয়ে গেলো! আশা অনেকটা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তবে ঢাকায় ভালো করে এখন স্বস্তি ফিরে এসেছে।’

ফিফা-এএফসির নিজস্ব ম্যাচ পরিচালনা করতে শুধু ফিফা রেফারি হলেই চলবে না, জায়গা করে নিতে হবে এএফসির এলিট প্যানেলেও। এবারই অনেকদিন পর এএফসি থেকে এলিট প্যানেলে ঢোকার সুযোগ এসেছিল। কিন্তু জয়া পারেননি সেখানে জায়গা করে নিতে। এছাড়া প্রতি বছর ফিফা স্বীকৃত রেফারি হতে পরীক্ষা দিতে হয়। যা গেলো দুই বছর দিয়ে এসে পাসও করেছেন।

আরো পড়ুন:
চৌগাছায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওয়ার্ড কমিটি গঠন
হাতীবান্ধায় সমতলে চা চাষে সফল আ.লীগ নেতা বিপুল

একই সঙ্গে সফলতা ও ব্যর্থতা দেখেছেন ২৯ বছর বয়সী জয়া, ‘ভারতের জামশেদপুরের পরীক্ষাতে এলিট রেফারি হতে পারেনি। ফেল করে আত্মবিশ্বাস কমে গিয়েছিল। চাপে পড়ে যাই। মনে হচ্ছিল ঢাকার ফিফা রেফারি হওয়ার পরীক্ষাতেও বুঝি আর পারবো না। ক্যারিয়ার বুঝি শেষ হয়ে যাচ্ছে। বয়স হয়ে যাচ্ছে! এখন পাস করে স্বস্তি লাগছে। অন্তত আরও এক বছরের জন্য ফিফা রেফারি হতে পেরেছি।’

ফিফা রেফারি জয়া চাকমা

যদিও এখন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিষেক হয়নি জয়ার। ১১ বছরের ক্যারিয়ারে এএফসির বয়সভিত্তিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন। কিন্তু সিনিয়রদের ম্যাচ যে এখন অধরা হয়ে আছে। এ নিয়ে আক্ষেপ কম নয় জয়ার, ‘কষ্ট তো দেয়। আক্ষেপও আছে কিছুটা। তবে বৈশ্বিক দিক চিন্তা করলে দেখা যাচ্ছে আমি তো একা এর ভুক্তভোগী নই। অনেকেই ভুক্তভোগী। করোনাভাইরাসের সময়ে টিকে থাকার লড়াই চলছে। তবে রেফারিং না করতে পেরে একটু খারাপ লাগছে।’

একই সঙ্গে জয়া রেফারিং, বিকেএসপিতে মেয়েদের ফুটবল কোচিং ও পড়াশোনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক কষ্ট হলেও রুটিন করে সবকিছুই চালাতে হচ্ছে তাকে। জয়া নিজেই বলেছেন, ‘সবকিছু একসঙ্গে করতে কষ্ট তো হয়ই। ভারসাম্য করে করতে হয়। রেফারিং করে তো জীবন নির্বাহ করা যায় না। কোচিং হলো দিনশেষে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়। বলতে পারেন কোচিংয়ের টাকা দিয়ে রেফারিং চালিয়ে যাচ্ছি। রেফারিংয়ের প্রতি আলাদা প্রেম আছে। আর পড়াশোনার তো বিকল্প নেই।’

সেপ্টেম্বর ১১.২০২১ at ২১:৩০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/বাট্রি/জআ