সমালোচনা আর উপহাস করেই এ সমাজ অখাদ্যকে খাদ্যে পরিনত করে : মুরাদ নূর

চাঁদ-সুরুজ দেখে দিক নির্ধারন, জোয়ার-ভাটা দেখে সময় নির্ধারন, কবুতর দিয়ে চিঠি পৌঁছানো, হেঁটে কিংবা গুণটানা নৌকায় করে তীর্থস্থানে যাওয়ার অনুভূতি সবই যেনো এ-যুগে রুপকথার গল্প। মানুষের এমন অসংখ্য অভ্যাস পৃথিবীর বিনির্মানে বিলুপ্ত হয়েছে। সময়ের সাথে সাথে আরো প্রত্যাশিত অপ্রত্যাশিত বিষয় যুক্ত হবে।

পূর্বের ন্যায় অনেক নিয়ম হারিয়ে যাবে। অনেক নিয়ম তৈরি হবে। পৃথিবী বিনির্মানে মানুষের যতো সমস্যা হয়েছে তা সমাধানের জন্য মানুষকেই ব্যস্ত রেখেছে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা। জগতে সমস্যা যতো বড়। সমাধান আরো বড়। মানুষ একজীবনে কেবল সমস্যার সমাধান’ই খুঁজে বেড়ায়।

স্রষ্টার অনুগ্রহে আদিম যুগ থেকে আধুনিক যুগে পৃথিবীর বর্তমান অবস্থান। মানুষ তার প্রয়োজনে প্রকৃতির ভান্ডার থেকে প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে সভ্যতা ও সুখ তৈরি করে।

সমস্যা সমাধানে মানুষ আবেগি, হিংস্র, মানবিক হয়। লেনাদেনা, চাকা, ইঞ্জিন, আগুন, বিজ্ঞানের যতো আবিস্কার সহ মানুষের পৃথিবী এখন অনেক আধুনিক!

অনেক অপ্রত্যাশিত বিষয় মানুষের কাছে এখন খুব সহজ। রিমোটের কাছে পুরো পৃথিবী নিয়ন্ত্রণ করতে চায় মানুষ। তখনই প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরন হয়। পৃথিবী অস্থির হয়ে মহামারি সহ বহু বহু প্রাকৃতিক বিপর্যয় এ পৃথিবীর মানুষ অতীতে দেখেছে। দেখছে, হয়তো দেখবেও!

পৃথিবী এখন বেশ আধুনিক। পৃথিবী আধুনিকের সাথে আমাদের বাংলাদেশও বেশ এগিয়ে। তথ্য-প্রযুক্তির যুগে আমরাই বেশি প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। এতে তথ্যের সঠিকতা নাই বললেই চলে। গুজব যেনো আমাদের উপভোগের বিষয়। তথ্য বাদ দিয়ে প্রযুক্তি স্বামী হারা নববধূর মতো! আমরা নিজেদের সভ্য, শিক্ষিত দাবী করছি। সবাই সব বুঝি।

সকল প্রশ্নের উত্তর, সর্বরোগের ঔষধ কেবল প্রযুক্তির একটি পার্ট ফেসবুকেই পাওয়া যায়। সবাই কেমন জানি অস্থির। সবাই ভালো ও সেরাটা করতে চাই। এখন সমন্বয়, মূল্যায়ন শব্দ দুটি রুপকথার গল্পে হারিয়ে যাওয়ার পথে। অথচ, কেবল সমন্বয়, মূল্যায়নেই জগতের ভালো সম্ভব! আমরাও জানি, কিন্তু মানিনা।

ডিজিটাল প্রযুক্তিতে একটি দেশের ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি পৃথিবীতে অনায়াসেই পৌঁছে যায়। একটি জাতির সংস্কৃতি পড়লে দেখলেই বুঝা যায় সে জাতির অস্তিত্ব, ব্যক্তিত্ব। জাতি হিসেবে আমরা পৃথিবীতে অনন্য, উজ্জ্বল এবং সম্মানিত। পৃথিবীতে আমাদের বাংলা ভাষাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এ গৌরব আমাদের বাংলার। এই বাংলার সঠিক ইতিহাস ঐতিহ্য সঠিক ভাবে তুলে ধরাই আমাদের প্রধান কাজ। কিন্তু আমারা কি আসলেই তা করছি?

ডিজিটাল প্লাটফর্মের মধ্যে আমাদের দেশে গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক বেশ জনপ্রিয়। এখানে আমরা নিজেকে, দেশকে, এবং পৃথিবীকে প্রতিনিধিত্ব করি। বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, চলচ্চিত্রের ‘হিরো Hero’ লিখে সার্চ দিলে যে বা যাহারা আসে তারাই কি বাংলাদেশ!? এই উপস্থাপনই কি আমাদের ইতিহাস! আমাদের ঐতিহ্য! আমরা কি জাতি হিসেবে এতোটাই মানহীন?

যুগের সাথে তাল মেলানো অন্যান্য জাতির মানসম্পন্ন শৈল্পিক কনটেন্টের কাছে আমরা হই হাস্যকর! এ দোষ কার.? হিরোগংদের অশৈল্পিক মানহীন কনটেন্ট কি বাঙালি ছাড়া অন্য জাতি এসে দেখে! টিটকারি উপভোগ করে? বাঙালি অপরকে ছোট করতে ভীষণ পছন্দ করে। অপরকে ছোট করতে করতে নিজের সময় হারিয়ে ফেলি।

আমরাই কৌতূহলি দর্শক সেজে টিটকারি দিয়ে আগ বাড়িয়ে দেই বিশ্ব বাজারে। ভিউ নামক অস্থির প্রতিযোগিতায় মনের বিরুদ্ধে প্রকাশ করে দেই নিজেদের রুচিবোধ। মানহীন অশৈল্পিক কনটেন্ট যেনো এড়িয়ে যেতেই পারিনা। ভীষণ গুরুত্ব দেই। মজা আর টিটকারিতে একটি জাতির সংস্কৃতিতে রুচিহীনতায় আঁকড়ে ধরেছে।

একজন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মুক্ত বাজার ডিজিটাল প্লাটফর্মে সবাই যখন শিল্পী! আর শিল্পী চায় তাঁর পরিচিতি আর জনপ্রিয়তা। (শুধু শিল্পী নয় পৃথিবীর প্রতিটি মানুষই মূলত জনপ্রিয় হতে চায়।) অশিল্পীর কাজ আমরা টিটকারি করে উপহাস করে প্রচার করি। নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো আরকি। অশিল্পীরা পরিচতিকেই জনপ্রিয়তা ভাবে!

পরিচিতি আর জনপ্রিয়তা অনেকটা মীরজাফর আর সিরাজদৌলার মতো। তারা ভিউয়ের খেলায় নিজেকে সফল ভাবেন। আসলে তো তাই! যোগ্যতার বাহিরে অশিল্পীদের নিয়ে এতো আলোচনা, সমালোচনা। এতে তো তারাই শতভাগ সফল! কিন্তু, জাতি হিসেবে, ইতিহাস ঐতিহ্যের প্রকাশে আমারা কতোটা সফল!?

আমাদের সময় এসেছে তথ্য প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের। বাঙালি মেধাবী, সাহসী, শৈল্পিক। নিজের ব্যক্তিত্ব, রুচির সাথে যায় না এমন কিছু পোস্ট করা, মন্তব্য করা, শেয়ার করা থেকে বিরত থাকলেই অশিল্পীরা ভিউ নামক সফলতা পাবে না। ঐ টিটকারি উপহাসের জায়গায় একটি ভালো কিছু শেয়ার করুন। অপরকে করা উপহাস বাদ দিয়ে ঐ সময়টুকু নিজেকে দিন।

আরো পড়ুন :
বেনাপোলে স্থান সংকটে শত শত রফতানি পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে পড়েছে
যে কারণে বলিউডে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন মেহজাবিন

নিজেকে সময় দেওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো কাজ। আপনার শেয়ার, পোস্ট, কর্মকান্ড আমি সহ বাঙালি জাতির দৃষ্টি কাড়ে। আমি সহ পৃথিবীর সকল বাঙালির দৃষ্টি আপনার দিকে। এবার ভাবুন কি শুনবেন! দেখবেন! শেয়ার করবেন!

সেপ্টেম্বর  ১১.২০২১ at ১৪:১০:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেপ্র/রারি