মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে গুচ্ছগ্রাম বিলীন

ভোলার দৌলতখানে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে বিলুপ্তির পথে শহীদ সিপাহী বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের জন্মভূমি উপজেলা মূল ভূখণ্ড থেকে ২০ কিলোমিটারেরও বেশি দূরত্বে বিচ্ছিন্ন ইউনিয়ন চর হাজিপুর। এই ভূমিতেই জন্মেছিলেন দেশের ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠের একজন। তিনি শহীদ সিপাহী বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। মহান এই বীরের আত্মত্যাগের বিনিময়েও এই ইউনিয়নে কোনো উন্নয়ন ও আধুনিকতার সুবিধা পায়নি এ চরের বাসিন্দারা।

গত দুই মাসে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙনে এ ইউনিয়নে গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) প্রকল্পে আওতায় ৪২০টি ঘর নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ফসলি জমি, বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে প্রায় ৬ শতাধিক পরিবার। ভাঙনকবলিত এসব পরিবারের মানুষ ভিটামাটি হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এছাড়া নদী গর্ভে চলে গেছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ণকেন্দ্র ও রাস্তাঘাট।

উপজেলার হাজিপুর ‘চরে’ মাননীয় প্রধনমন্ত্রীর কার্যলয়ের অর্থায়নে ২০১৭-২০১৮ গুচ্ছগ্রাম-২ (সিভিআরপি) প্রকল্পে ৪২০টি ছিন্নমূল পরিবারের স্থায়ী আবাসনের লক্ষ্যে দৌলতখান উপজেলার হাজিরপুর ইউনিয়নে মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে তোলা হয় গুচ্ছগ্রাম। যার প্রতিটি ঘরের ব্যয় ধরা হয় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এখানেই ভূমিহীন গৃহহীন অসহায় পরিবারগুলো বসবাস করছিলেন।

গত দুই মাসে অর্ধশতাধিক ঘরবাড়িসহ বহু স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের মুখে রয়েছে একটি তিনতলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ভাঙনকবলিত পরিবারগুলো মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। ভাঙনকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মেঘনার তীব্র স্রোতে ভাঙছে নদীর তীর। এতে ফসলি জমি, আবাসনের ঘরগুলো নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতায় চরের বাসিন্দারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। হুমকির মুখে পড়েছে পুরো ইউনিয়ন।

ভাঙনকবলিত ওই ইউনিয়নের বাসিন্দা ফারুক, জাহাঙ্গীর মাঝি ও শাহাবুদ্দিন জানায়, মেঘনার প্রবল ভাঙনে এ চরের আবাসনের ৪২০টি ঘরের মধ্যে ২টি ঘর ছাড়া বাকি ঘরগুলো নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভিটাছাড়া পরিবারগুলো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে, কেউবা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। যারা এখনো টিকে আছে, তাদেরও নির্ঘুম রাত কাটছে। যেকোনো মুহূর্তে মেঘনার গর্ভে বিলীন হতে পারে শেষ আশ্রয়স্থল।

হাজিপুর ইউপি সদস্য আবু তাহের দৈনিক আমাদের সময়কে জানান, ‘এ চরে অনেক পরিবার ভাঙনের ফলে বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। থামছেই না নদী ভাঙন, বাড়ছে সাধারণ মানুষের কান্না। নদীর ভাঙনে মসজিদ, মাদ্রাসা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

আরো পড়ুন :
দুই বিচারকের ব্যাখ্যা ও তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব হাইকোর্টে
কেশবপুরে মৎস্য চাষীদের মাঝে মৎস্য চাষের উপকরণ বিতরণ

পানি উন্নয়নের বোর্ডের ভোলা নির্বাহী প্রকৌশলী হাছানুজ্জামান দৈনিক আমাদের সময়কে বলেন, ‘ভাঙনের বিষয়টি আমাদেরকে কেউ জানায়নি। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

সেপ্টেম্বর  ০৩.২০২১ at ০৯:৪৩:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেডে/রারি