সেপ্টেম্বরে মাঠে নামছে আওয়ামী লীগ

দলের সাংগঠনিক পর্যায়ের থমকে থাকা সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পূর্ণোদ্যমে মাঠে নামার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আগামী মাস সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামছে দলটি। করোনা আর শোকাহত মাস আগস্টের কারণে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মসূচি স্থগিত ছিল। এবার পুরোদমে মাঠে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নেতারা।

ডিসেম্বরের মধ্যে চার হাজারের অধিক ইউনিয়ন পরিষদ, জেলা পরিষদ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) ও মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভার নির্বাচন শেষ হওয়ার কথা বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অনুষ্ঠেয় এই নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ।

তবে সব কিছুই হবে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শক্রমে। সভানেত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সেপ্টেম্বর মাসে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে বলে নেতারা জানান।

এদিকে স্থগিত থাকা সিলেট-৩ আসনে আগামী ৪ সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবরে কুমিল্লা-৭ আসনে উপনির্বাচন নিয়ে নেতা-কর্মীরা সক্রিয় রয়েছেন। শুধু নির্বাচনের মাঠে নয়, মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা, উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলন করে চূড়ান্ত কমিটিও গঠন করা হবে। একই সঙ্গে অনুষ্ঠেয় পুরো নির্বাচনী সময় মাঠে থাকবেন দলের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।

দলীয় সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারী করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের কর্মসূচি স্থগিত ছিল। করোনায় মৃত্যু সংখ্যা কমে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আবার নড়েচড়ে বসছেন। চলতি মাস শেষ হতে আর এক সপ্তাহ বাকি। এই মাসের পর সেপ্টেম্বর মাস থেকে ব্যাপকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু করা হবে।

সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রচারণা করতে সেপ্টেম্বরের প্রথমদিনই নির্বাচনী এলাকায় যাবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন, দলীয় দ্বন্দ্ব নিরসন, সম্মেলন হওয়া পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী নির্ধারণ করতে মাঠে নামবে ক্ষমতাসীন দলটির বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তরা।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান গতকাল মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব। অগ্রিম কিছু বলা আমাদের জন্য মুশকিল। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি সব সময় থাকে। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল, আন্দোলনমুখী দল, আমরা যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারি। সেই সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত থাকে, পরিস্থিতি সুস্থ থাকে আর সেক্ষেত্রে যদি নির্বাচন হয়, আমরা প্রতিযোগিতা করার জন্য সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত আছি।’

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, দলীয় কর্মসূচিগুলোর সফল বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত শিগগিরই দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে জানিয়ে দেয়া হবে। এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ড পর্যায় থেকে সম্মেলন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ফলে আগামী মাসেই পেন্ডিং ইস্যুগুলো নিয়ে ফের মাঠে নামছেন নেতা-কর্মীরা।

ইস্যুগুলোর অন্যতম হচ্ছে- তৃণমূল সম্মেলন, পুরনো সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান, বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে নেতাদের ঐক্যবদ্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত কার্যক্রম ইত্যাদি। রীতি অনুসারে জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল তথা ইউনিয়ন, থানা, জেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী সংগঠনগুলোরও সম্মেলন হয়। আগামীতে কেন্দ্রীয় সম্মেলনকে সামনে রেখেই তৃণমূলকে গোছানো হবে।

আরো পড়ুন:
ভালোবাসার টানে স্ত্রীর চিতায় ঝাঁপ দিলেন স্বামীও
বিদ্যুতের ৩৩ খুঁটি স্থানান্তর, দাবি কোটি টাকা

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আগস্ট মাসে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম থাকে শোক দিবসকে ঘিরেই। আমরা মানবিক কর্মসূচিগুলো করে থাকি। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে সেপ্টেম্বরে সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়বে কি না। এমন পরিস্থিতি থাকলে আমরা মানবিক পরিস্থিতিকে জোরদার করব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমরা আবারো উৎসবমুখর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম চালু করব। আর স্থানীয় সরকারের নির্বাচন যখনই হবে তার জন্য আমরা সব সময় প্রস্তুত রয়েছি। আওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনে জয় লাভের জন্য আমাদের প্রস্তুতি থাকে। আর প্রয়োজন হলে প্রার্থীদের জনপ্রিয়তাও যাচাই-বাছাই করা হবে।’

 

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনী দল, নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগ সব সময় প্রস্তুত। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিটিং হচ্ছে, উপজেলা মিটিং হচ্ছে, জেলায় মিটিং হচ্ছে, বিভিন্ন দিবস পালন করছেন, আমাদের কার্যক্রম বন্ধ নেই।

নির্বাচন কমিশন সচিব মো. হুমায়ুন কবির খোন্দকার জানান, সাড়ে চার হাজার ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র ২০৪টিতে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা গেছে। কমিশন সভায় আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, কমিল্লা-৭ শূন্য আসনে উপনির্বাচন, জেলা পরিষদসহ অন্যান্য নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কমিশন সভায় কোনটার নির্বাচন কবে দেয়া হবে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘সাংগঠনিক কার্যক্রম বন্ধ নয়, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। নেত্রীর সাথে আলাপ করে আগামী সেপ্টেম্বরে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও শুরু করা হবে।’

আগস্ট ২৬.২০২১ at ১১:৫৮:০০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাক/জআ