তথ্য পেতে ভোগান্তিতে জনসাধারণ

জেলার পলাশ উপজেলার সরকারি অফিসগুলোতে ওয়েবসাইটে আপডেট তথ্য না থাকায় সঠিক তথ্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে উপজেলার মানুষ। ফলে একদিকে নাগরিকরা ভুল তথ্য পাচ্ছেন। যার ফলে অনেকটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সরকারের এ মহতি উদ্যোগ।

পলাশ উপজেলার সরকারী ওয়েব পোর্টালে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তথ্য সংশোধনী না থাকায় বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বিভ্রান্তিতে পড়তে হচ্ছে মানুষকে। ওয়েবসাইটটি নিয়মিত আপডেট না হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরাও সঠিক তথ্য পেতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে অফিসগুলোকে ওয়েবসাইট খোলার নির্দেশনা দিলে বাধ্যতামূলক ওয়েবসাইট খোলা হয়। সেইসাথে এসব ওয়েবসাইটে প্রথমে কিছু তথ্য সন্নিবেশন করা হয়। পরে আর নিয়মিত হালনাগাদ তথ্য সংযোজন করেননি অধিকাংশ অফিস।

ওয়েব পোর্টালের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভুলের মধ্যে পলাশ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের অফিস সহকারী রফিকুল ইসলাম, রাজকুমার চন্দ্র দাস, সার্বেয়ার মো: আমীর হোসেন দীর্ঘদিন আগে বদলী হয়ে গেলেও তাদের নাম এখনো রয়েছে। এছাড়া জারী কারক আবুল কালম দীর্ঘদিন আগে মারা গেলেও তার নাম বাদ যায়নি।

উপজেলার বর্তমান পরিসংখ্যান কর্মকর্তা মো: শাহজালাল তালুকদার ২০১৭ সাল থেকে কর্মরত থাকলেও ওয়েব পোর্টালে রয়েছে মো: আল আমীন নামে এক ব্যক্তির নাম।

এছাড়া উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস এম খায়রুল আমিন, উপজেলা বন কর্মকর্তা মো: আমীরুল হাসান, নির্বাচন অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো: মাসুদুর রহমান, পল্লী জীবিকায়ন প্রকল্পের উপজেলা কর্মকর্তা নাজনীন নাহার শীলা, এলজিইডি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর সম্ভু চন্দ্র কর, হিসাব সহকারী সৈয়দ সফিউল আলম, বিআরডিবি’র অফিস সহকারী আ: ছাত্তার দীর্ঘদিন ধরে কর্মস্থলে না থাকলেও ওয়েব পোর্টালে তারা এখনো কর্মরত।

ওয়েব পোর্টালে পলাশ থানার কর্মকর্তাদের নামের তালিকায় বিপ্লব কুমার চৌধুরী দত্ত, মোহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা, মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম, এএসআই কবির হোসেন ও মনির হোসেন দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় আগে বদলী হয়ে গেলেও তাদের নামই এখনো রয়েছে। উপজেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায়ও রয়েছে সংখ্যা ও তালিকায় ভুলে ভরা। সঠিক নেই স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার সংখ্যাও।

পলাশে সাবেক মন্ত্রী, বিচারপতি, সাহিত্যিক, কবি, থাকলেও জ্ঞ্যাণী গুনিদের নামের তালিকায় নেই তাদের নাম। এছাড়া পলাশ উপজেলা থেকে দেশ সন্দেশ নামে একটি পত্রিকা বের করার কথা লেখা থাকলেও পাশের লাইনেই লেখা রয়েছে পলাশ থেকে কোন পত্রিকা প্রকাশ হয়না।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বা তার অফিসের যেকোন কর্মকর্তা-কর্মচারী হওয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে কৃষি কর্মকর্তার নাম।

ওয়েব পোর্টালে চরসিন্দুর ইউনিয়নে প্রকল্পের তালিকায় ২০১৪ সালের পর কোন প্রকল্পের নাম নেই। নেই অগ্রগতি বা বর্তমান হাল অবস্থাও। এছাড়া ভিজিএফ ও ভিজিডির তালিকায় সকলেই রয়েছে ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কোন উচ্চ মাধ্যমিক, সরকারী প্রাথমিক ও মাদ্রাসার তালিকা, সংখ্যা ও নাম কোনটাই নেই।

জিনারদী ইউনিয়নে একাধিক আশ্রয়ন প্রকল্প থাকলেও তালিকায় নাম নেই একটিরও। ক্রীড়া সংগনের তালিকায় রয়েছে পেশাজীবী সংগঠনের নাম। ওয়েব পোর্টালের তালিকায় ৬টি হাট বাজরের নাম থাকলেও সংখ্যায় রয়েছে দুটি বাজারের নাম। এছাড়া প্রবাসীর দিক দিয়ে এই ইউনিয়নে কয়েকশ ব্যক্তি থাকলেও এখানে রয়েছে মাত্র ১৪ জনের নাম।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিক দিয়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০ টি থাকলেও তালিকায় রয়েছে মাত্র ৪টি বিদ্যালয়েল নাম। এছাড়া একাধিক মাদ্রাসা থাকলেও তালিকায় নাম নেই মাদ্রাসার। বিধাব ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী শিক্ষা ভাতা প্রাপ্তদের নামের তালিকা নেই। আর ভিজিডি প্রাপ্ত অধিক হলেও নাম রয়েছে মাত্র ৯ জনের। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১৩-২০১৪ অর্থ বছরে ‘‘অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান’’ কর্মসূচীর আওতায় (২য় পর্যায়) গৃহীত প্রকল্প তালিকা এই লেখার পর এপর্যন্ত কোন প্রকল্পের নাম নেই।

ডাংগা ইউনিয়নে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বা তালিকা নাই। একাধিক এনজিও কাজ করলেও তাদের নাম নেই। নেই প্রকল্পের নামও। এছাড়া সামাজিক সুরক্ষার ভিজিডি, ভিজিএফ প্রাপ্তদের নামের তালিকাও নেই।

গজারিয়া ইউনিয়নের ওয়েব পোর্টালে ২০১৪ সালের পর কোন প্রকল্পের নাম নেই। ভিজিএফ, বিধাবা, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ভাতা প্রাপ্তদের নামের তালিকা নেই। নেই মাধ্যমিক, প্রাথমিক বা কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বা তালিকাও। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় শুন্য দেখানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:
বিধিনিষেধের মেয়াদ বাড়ল ১৫ জুলাই মধ্যে রাত পর্যন্ত

এ বিষয়ে পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিনের অফিসে একাধিকবার গিয়ে তাঁর সাক্ষাতকার আনতে গেলে তিনি অফিসের কাজে ব্যস্ত বলে সময় ক্ষেপন করেন। অবশেষ তার মোবাইলে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিপ্ট করেননি।

অবশেষে মোবাইলে কথা হয় নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এ এস এম ইবনুল হাসান ইভেন এর সাথে। পলাশে ভুলে ভরা ওয়েব পোর্টাল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, সরকার জনগনের জন্য অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য ওয়েব পোর্টাল করেছেন। আর এটি ভুল থাকার কথা নয়। ভুল হলে জনগনের ভোগান্তি হবে। এমনটি হয়ে থাকলে খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন।

জুন ,১৬.২০২১ at ১৯:৫৮:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/আইএফ/এসআর