বাবুনগরীর নেতৃত্বে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা

বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নেতৃত্বেই হেফাজতে ইসলামের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন হতে যাচ্ছে। নতুন কমিটি গঠনের সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল একটি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রোববার (২৫ এপ্রিল) রাত ১১টায় ফেসবুক লাইভে এসে হেফাজতে ইসলামের কার্যকরী কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন সংগঠনটির আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী। তবে কী কারণে কমিটি ভেঙে দিয়েছেন তা তিনি তার বক্তব্যে বলেননি। এদিকে কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি বিলুপ্তির কয়েক ঘন্টার মাথায় উপদেষ্টা পরিষদের পরামর্শে হেফাজতে ইসলামের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক কমিটির পাঁচ সদস্যের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।

এতে পুনরায় প্রধান উপদেষ্টা পদে আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, আমীর পদে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী এবং মহাসচিব পদে আল্লামা নুরুল ইসলাম জিহাদি দায়িত্ব পেয়েছেন। এছাড়া মাওলানা সালাহ উদ্দীন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এ কমিটির মাধ্যমেই আপাতত হেফাজতে ইসলামের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হবে বলে রবিবার মধ্যরাতে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ঘোষণা দেন মহাসচিব নূরুল ইসলাম জিহাদি। এ সময় আগামী কিছুদিনের মধ্যে হেফাজতের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তিনি।

নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পৃক্ত দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত নেতাদের সংগঠন থেকে বাদ দেওয়ার জন্য একটি মহলের চাপে পড়ে হেফাজতের কমিটি ভেঙে দিতে বাধ্য হয়েছেন জুনায়েদ বাবুনগরী। মূলত নিজের ও সংগঠনের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে তিনি কমিটি ভেঙ্গে দিতে বাধ্য হন।

দায়িত্বশীল সূত্রটি আরো জানায়, বাবুনগরী প্রথমে কমিটি ভেঙে না দেওয়ার পক্ষে অবস্থান নেন। হেফাজত নেতাদের চলমান গ্রেপ্তার অভিযানে জুনায়েদ বাবুনগরীকেও নজরদারীতে রাখা হয়। তখন বাবুনগরীকে মাইনাস করে আহমদ শফি পন্থী নেতাদের হেফাজতের নেতৃত্বে নিয়ে আনতে একটি মহল চেষ্টা করে। কিন্তু আরেকটি মহল এতে বাধ সাধে। তারা বাবুনগরীর পক্ষে অবস্থান নেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলে। এর মধ্যে ১৪ দলের শরীক একটি দলের চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্য বাবুনগরীর হাতে হেফাজতের নিয়ন্ত্রণ রাখার পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। তার অনুরোধে শেষ মুহূর্তে কমিটি ভেঙে দিতে সম্মত হন জুনায়েদ বাবুনগরী।

হেফাজতের বিলুপ্ত হওয়া কমিটির যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির রাজনীতি সংবাদকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কমিটি ভেঙে না দেওয়া ছাড়া হেফাজত আমিরের সামনে আর কোনো পথ ছিল না। রোববার (২৫ এপ্রিল) রাতে ফেসবুক লাইভে বাবুনগরী যখন হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেন, তখন হাটহাজারী দারুল উলূম মাদ্রাসার সামনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য অবস্থান নিয়েছিলেন। বাবুনগরী কমিটি ভেঙে দেওয়ার ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখান থেকে চলে আসেন।

দায়িত্বশীল সূত্রটি জানায়, বিভিন্ন মামলায় হেফাজতের যেসব নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা নতুন কমিটিতে স্থান পাবেন না। ভেঙে দেওয়া কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত ও বিতর্কিত যেসব নেতা রয়েছেন তারা আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পাবেন না। হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব নাছির উদ্দিন মুনির, ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস ও মুফতি হারুন ইজাহারসহ অনেকে বাদ পড়বেন। যেসব আলেমরা কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নেই কেবল তাদের নিয়ে হেফাজতের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হবে।

এপ্রিল ২৬, ২০২১ at ১৪:১৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএম/এমআরএইস