নাইক্ষ্যংছড়িতে বইতে শুরু করেছে শীতল হাওয়া

বান্দরবানের নাইক্ষংছড়ির পাহাড়ী এলাকজুড়ে অনুভূত হচ্ছে শীতের আমেজ। নাইক্ষ্যংছড়ি খাল ও বাঁকখালী নদীবেষ্টিত আর পহাড় পাদদেশে হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়িতে বরাবরই শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়।হেমন্তের শুরুতেই শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে।

ভোর হতেই কুয়াশা আর শীতের চাদরে ঢাকা পড়ছে মেঘ। মধ্যরাত থেকে কুয়াশা পড়া শুরু হয়ে চলে সকাল পর্যন্ত। শীত আর কুয়াশাকে মোকাবিলা করে টিকে থাকার লড়াইয়ে লোকজনও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। অন্যান্য উপজেলার তুলনায় এই উপজেলার গ্রামাঞ্চলের পাহাড়ী এলাকাতে শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে নিম্নআয়ের লোকজন।

এদিকে এবারের শীত মৌসুমে করোনার প্রভাব বাড়তে পারে। তাই লোকজনের মাঝে আতঙ্ক ও ভীতি বিরাজ করছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ওপর দিয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি খাল, ঘুমধুমের রেজুখাল, পাশ্ববর্তী রামুর বাকঁখালী নদী ছাড়াও ছোট-বড় আরও ৪/৫টি নদী প্রবাহিত হয়েছে। এসব নদীবেষ্টিত এলাকার মধ্যে পাহাড়ী পদদেশে রয়েছে। সেখানেও রয়েছে হাজার মানুষের বসবাস । এসব নিম্নআয়ের মানুষ গুলো পাহাড়ী জনপদে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলা করে জীবন কাটায়। প্রচন্ড শীতে খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুনের তাপ দিয়ে শীত নিবারণ করতে হয় তাদের।

কুয়াশার ছাদরের ভেতর দিয়ে হাট-বাজারে আসতে হয় বেচা-কেনা করতে। কোন প্রকার আবহাওয়ার তাপমাত্রার তথ্য জানতে এই উপজেলার আবহাওয়া অফিস নেই।

এ সময় মানুষের কষ্ট বেড়ে যায়। ভারী কুয়াশায় কর্মজীবী ও দিনমজুররা কাজে বের হতে পারে না। পরিবারে দেখা দেয় অভাব-অনটন। শীত মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

এই এলাকায় শীতের তীব্রতার কারণে প্রচন্ড ঠান্ডায় বৃদ্ধ ও শিশুদের কষ্ট বেড়ে যায়। শ্বাসকষ্ট, কাশি, হাঁপানিসহ নানারকম শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায় এ সময়। শীতজনিত কারণে মৃতু্যর সংখ্যাও কম নয় এখানে। গত ৪/৫ বছরে দেখা গেছে, শীত ও অতিরিক্ত ঠান্ডা সহ্য করতে না পেরে অর্ধ শতাধিক মানুষের মৃতু্য হয়েছে। যার মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যাই বেশি।

এবার অসময়ে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশী হওয়ায় নাইক্ষ্যংছড়িতে শীতের প্রকোপও বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শীত মোকাবিলায় উপজেলা সদরের ইউনিয়ন গুলোতে প্রস্তুতি থাকলেও প্রত্যন্ত গ্রাম ও পাহাড়ঞ্চলের লোকজনের প্রস্তুতি নেই। বাকঁখালী নদীবেষ্টিত পাহড়ীঞ্চলের মাওলানা নুরুল ইসলাম,ঘুমধুম রেজু এলাকার অনুময় চাকমা, নাইক্ষ্যংছড়ি ধুংরী পাড়ার বাসিন্দা মংশৈ অং মারমা জানান, গরম কাপড়ের অভাবে খড়কুটো আর লাকড়ি জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করেন তারা। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় সাহায্যের আশায় থাকেন। কিন্তু সরকারিভাবে কম্বল দেওয়া হলেও অধিকাংশ পাহাড়ীরা তা পায় না। পাহাড়ীঞ্চলবেষ্টিত দৌছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আল্ হাজ্ব হাবীব উল্লাহ জানান, অন্য এলাকার তুলনায় পাহাড়ী এলাকা গুলোতে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। এসব এলাকার মানুষদের তালিকা করা আছে। শীত নিবারণের জন্য সাধ্যমতো সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রাপ্ত সহায়তা বিতরণ করা হবে। এ ছাড়াও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র নিয়ে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম নিয়ে স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টি,এস ডা. আবু জাফর মো,ছলিম জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে শীতের মাত্রা বেশি হবে। একইসঙ্গে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকায় এবার শীতের প্রস্তুতি বেশি নেওয়া হয়েছে। পুরো শীতকালে পাহাড়ীঞ্চলসহ প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য মেডিকেল টিম নিয়োজিত করা হবে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫ ইউনিয়নের কমিনিউটি ক্লিনিক গুলো।

উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি জানান, করোনা ও শীতকে মাথায় রেখে উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুতি নিয়েছে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ, ত্রাণ সহায়তা প্রদানসহ শীতে ক্ষতিগ্রস্তদের বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করা হবে। তাছাড়া শীতে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি পালনে সচেতনতামূলক প্রচারণা, মাক্স বিতরণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করবে উপজেলা প্রশাসন।

১৯ নভেম্বর, ২০২০ at ১৪:৩৩:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএকে/এমএআর