ইতালি আবারও লকডাউন

চীনের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ইতালি। প্রতিদিন করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে ইউরোপের দেশটিতে মৃ্ত্যুর সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে কয়েকটি অঞ্চলে আবার নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে। সংকট কাটাতে বিভিন্ন গির্জাকে চিকিৎসাসেবার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়াও আবাসিক কিছু কিছু হোটেলকে কোভিড হোটেল বানানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইতালির স্বাস্থ্য বিভাগ। এসব হোটেলকে অস্থায়ী হাসপাতালের আঙ্গিকে গড়ে তোলা হবে।

দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসে রবিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ১১ লাখ ৭৮ হাজার ৫২৯ জন। মোট মারা গেছেন ৪৫ হাজার ২২৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে মৃত্যুবরণ করেছে ৫৪৬ জন।

রবিবার টেস্ট করা হয় এক লাখ ৯৫ হাজার ২৭৫ জনের। এর মধ্যে আক্রান্ত ৩৩ হাজার ৯৭৯ জন। একই সঙ্গে বেড়ে চলেছে দেশটিতে গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা। প্রায় শূন্যে নেমে যাওয়া গুরুতর অসুস্থ রোগীর সংখ্যা বর্তমানে ৩ হাজার ৪২২ জনে দাঁড়িয়েছে।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তের দিক থেকে ইতালিকে তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। যেসব অঞ্চলে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে সেসব অঞ্চলকে রেড জোনের তালিকায় আনা হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা একটু কম, এমন অঞ্চলকে ওরেঞ্জ জোন এবং যেসব অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম, সেসব অঞ্চলকে ইয়েলো জোনের আওতায় আনা হয়েছে।

বর্তমানে রেড জোনের তালিকাভুক্ত মিলানের বিভাগীয় অঞ্চল লোম্বারদিয়া, পিয়েমন্তে, আলত আদিজে, ভালে দি অস্তা, কালাব্রিয়া, তোসকানা এবং কাম্পানিয়া এই ছয়টি অঞ্চলে জারি করা হয়েছে লকডাউন।

সরকার ঘোষিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী লকডাউনের সময় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া এসব অঞ্চলের কেউ ঘর থেকে বের হতে পারবে না। এছাড়াও এ সময় রেড জোনের তালিকাভুক্ত অঞ্চল থেকে কেউ ইয়েলো বা ওরেঞ্জ জোনে যেতে ও আসতে পারবে না। তবে শুধুমাত্র চাকরি, শিক্ষা ও চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রমাণসহ অন্য অঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। তবে, এসব অঞ্চলে মুদি দোকান ও ফার্মেসিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দোকান খোলা থাকবে। বাচ্চাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হয়েছে। রেস্টুরেন্ট চালু থাকবে, কিন্তু কেউ যেতে পারবে না। শুধুমাত্র অনলাইন এবং ফোনের মাধ্যমে খাবার অর্ডার করে বাসায় আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

করোনা আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় হলুদ অঞ্চলের এরিয়া দিনে দিনে কমছে। অন্যদিকে বাড়ছে কমলা এবং লাল অঞ্চলের এরিয়া।

এদিকে আমেরিকান কোম্পানি ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিন জানুয়ারিতেই চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের জন্য আমদানি করছে সরকার।

এদিকে ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্যানুযায়ী, সোমবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৯ হাজার ১০৩ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৩ লাখ ২৪ হাজার ৩১৭ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৩ কোটি ৮১ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৪ জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনায় এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১ কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৩৭৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৮৩২ জনের।

দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে এখন পর্যন্ত সংক্রমিত হয়েছেন ৮৮ লাখ ৪৫ হাজার ৬১৭ জন এবং মারা গেছে ১ লাখ ৩০ হাজার ১০৯ জন।

তৃতীয় অবস্থানে থাকা লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলে এখন পর্যন্ত করোনায় ৫৮ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩ জনের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮১১ জনের।

চতুর্থ অবস্থানে থাকা ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ১৯ লাখ ৮১ হাজার ৮২৭ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ৪৪ হাজার ৫৪৮ জন।

পঞ্চম স্থানে উঠে আসা রাশিয়ায় করোনায় সংক্রমণের সংখ্যা ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৮২৫ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩৩ হাজার ১৮৬ জনের।

১৬ নভেম্বর, ২০২০ at ১৩:৩৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাক/এমএআর