দেশে পাঁচ রকম করোনাভাইরাসের সন্ধান

যখন করোনার ছোবলে বিপর্যস্ত গোটা পৃথিবী তখনই দেশে ৫ ধরনের স্বতন্ত্র করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর)। রোববার (০৬ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীতে ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে বিসিএসআইআর।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশে ৫ ধরনের স্বতন্ত্র করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা বিশ্বের আর কোথাও পাওয়া যায়নি। দেশের ৭৩৭টি পয়েন্টে জিনের রূপ পরিবর্তনের হারও যেকোন দেশের তুলনায় বেশি। তবে দ্রুতগতির রূপ পরিবর্তনে কতোটা লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে সেটি জানতে বিশ্বব্যাপী গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।

দেশের আটটি বিভাগে কোভিড-১৯ এর ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়। যে কোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশে কোভিড ১৯ ভাইরাসটি অনেক দ্রুতগতিতে এর রূপ পরিবর্তন করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। সারাবিশ্বে রূপ পরিবর্তনের হার ৭ দশমিক ২ শতাংশ যেখানে বাংলাদেশে সেই হার ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। এছাড়াও দেশে কোভিড ১৯ এর জিনগত ৫টি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট পাওয়া গেছে।

দ্রুতগতির রুপ পরিবর্তনে ভাইরাস ক্রমশ দুর্বল বা প্রবল শক্তিশালী হবার আশঙ্কা রয়েছে। তবে লাভ ক্ষতি কি হচ্ছে সেটি জানতে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. মুশতাক ইবনে আয়ুব। তিনি বলেন, ‘দ্রুত গতিতে জিন পরিবর্তন করলে হয় দুর্বল হয়ে পড়বে নতুবা আরো শক্তিশালী হবে।’

জিনোম সিকোয়েন্সিং এর দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশের জন্য কার্যকরী টিকা পেতে বিশ্বের প্রায় ৫০টি কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে জিনোম সিকোয়েন্সিং এর তথ্য সরবরাহ করার কথা জানিয়েছে বিসিএসআইআর এর জিনোমিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি।

বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আফতাব আলী শেখ জানান, করোনা ভাইরাস ডিজিজ-১৯ সংক্ষেপে (কোভিড-১৯) জিনগত বৈচিত্র পর্যবেক্ষণ করার জন্য সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের সর্বমোট ২৬৩টি জিনোম সিকোয়েন্সিং ও ডাটা বিশ্লেষণ করা হয়। এ নমুনা চলতি বছরের ৭ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়। নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে আন্তর্জাতিক ডাটাবেজ গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটা (জিআইএসএআইডি)-তে প্রকাশ করা হয় বলে জানানো হয় সভায়।

বিসিএসআইআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘চলমান বৈশ্বিক কোভিড-১৯ মহামারীতে সারাবিশ্বের বিজ্ঞানীরা সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের উৎস, গতি প্রকৃতি ও বিস্তার নির্ণয়ের পাশাপাশি এ ভাইরাসের ওষুধ ও ভ্যাকসিনের ওপর গবেষণা করছেন। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশেও সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং করার প্রকল্প গ্রহণ করেছিল। জিনোম সিকোয়েন্সিং ল্যাবরেটরি বাংলাদেশের আটটি বিভাগের সর্বমোট ৩০০টি-ভাইরাস পূর্ণাঙ্গ জিনোম সিকোয়েন্সিং করার প্রকল্প গ্রহণ করেন। গবেষণালব্ধ ফল রিসার্চ পেপার আকারে আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হবে। একই সঙ্গে চীন, ইউএসএ ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের প্রায় ৫০টি কোভিড-১৯ টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

দেশে করোনা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, ২৬ আগস্ট তা তিন লাখ পেরিয়ে যায়। এর মধ্যে এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৬ সেপ্টেম্বর সেই সংখ্যা ৪ হাজার ৪৭৯ জনে। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে ১৫তম স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।

এদিকে সম্প্রতি ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, ভাইরাসটি শরীর থেকে চলে গেছে কি না, তা জানার জন্য রোগীকে পুনরায় পরীক্ষা করার আগে এক মাসের বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে।

গবেষণায় বলা হয়েছে, পরীক্ষায় প্রতি পাঁচজনের নেগেটিভ ফলের মধ্যে অন্তত একজনের ফলস নেগেটিভ আসছে। এর অর্থ হচ্ছে— নেগেটিভ ফল পাওয়ার পর অনেকেই নিজেদের অজান্তে ভাইরাসটির বিস্তার ঘটাচ্ছেন।

এমনকি করোনা নেগেটিভ পরীক্ষার পরও অনেক রোগী বলছেন, শরীরে ব্যথা, ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলা, বিষণ্নতার মতো উপসর্গগুলো দীর্ঘ কয়েক মাস ধরে স্থায়ী হচ্ছে।

চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে সিএনএনের ক্রিস কুমোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডা. উইলিয়াম লি বলেন, আমরা ধারণা করছি— দীর্ঘমেয়াদি এই ক্ষতি রক্তনালীর সমস্যার কারণে হতে পারে। অর্থাৎ ভাইরাসটি শরীর থেকে চলে যাওয়ার পরও ক্ষতিকর পদচিহ্ন রেখে যাচ্ছে। তিনি বলেন, গবেষকরা দেখেছেন যে, ভাইরাসটি শরীরের রক্তনালীর ক্ষতি করছে; যা পুরো শরীরকে সংযুক্ত করে।

০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১২:০৪:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাক/এমএআর