ইউএনও ওয়াহিদার ওপর হামলা : গ্রেফতার দুজনই যুবলীগের

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর গভীর রাতে হামলার ঘটনায় দু’জনকে শুক্রবার ভোরে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার দুজন হলেন- আসাদুল ইসলাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীর আলম (৪২)।

হাকিমপুর থানার ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম ঘোড়াঘাট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে কমিটি ভেঙে দিয়ে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটিতে তিনি আহ্বায়ক হন। আর আসাদুল ইসলাম আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজীসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে।

ওসি ফেরদৌস ওয়াহিদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে হাকিমপুর, বিরামপুর ও ঘোড়াঘাট থানা এবং র‌্যাব রংপুর-১৩ এর একটি দল যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে শুক্রবার ভোর ৪টা ৫০মিনিটের দিকে হিলির কালিগঞ্জ এলাকা থেকে আসাদুল ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। আসাদুল ইসলাম ঘোড়াঘাট উপজেলার সাগরপুর গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে।

এছাড়া জাহাঙ্গীর (৪২) নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি ঘোড়াঘাটের রাণীগঞ্জ এলাকায় বলে জানান ওসি।

ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিরুল ইসলাম জানান, ওয়াহিদা খানমের ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘোড়াঘাট থানায় এজাহার দায়ের করেছেন ইউএনওর ভাই মো. শেখ ফরিদ উদ্দিন। এজাহারে অজ্ঞাত ৪-৫ জনকে আসামি করেন তিনি।

এদিকে অস্ত্রোপচার শেষে ৭২ ঘণ্টার নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন দিনাজপুরের ওয়াহিদা খানম। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত চলে তার অপারেশন। অস্ত্রোপচার শেষে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল হক জানান, অস্ত্রোপচার সফল হলেও এখনও পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন ওয়াহিদা খানম। তাকে ৭২ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

এর আগে বৃহস্পতিবার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন ওয়াহিদা খানমের শরীরের ডান অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে। ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল হক সন্ধ্যায় গণমাধ্যমকে বলেন, ইউএনওর মাথার খুলির হাড় ভেঙে মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে। তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। শরীরের ডান অংশ প্যারালাইজড হয়ে গেছে।

বুধবার দিবাগত ৩টার দিকে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার অভিযানে অংশ নেয় দু’জন। তবে হামলাকারীরা কারা এবং কী উদ্দেশ্যে তারা হামলা চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

ঘোড়াঘাট ইউএনওর বাসভবনের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, হামলায় অংশ নেয়া দুজনের মধ্যে একজন ছিল মুখোশ ও অন্যজন পিপিই (পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট) পরা। রাতে তারা এক এক করে বাড়িতে প্রবেশ করে এবং ঘটনার পর একই সঙ্গে বের হয়ে যায়।

ভৌগলিক অবস্থানের দিক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ক্যাম্পাস ও ঘোড়াঘাট থানার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার হওয়ায় দুস্কৃতকারীরা নির্বিঘ্নে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে বৃহস্পতিবার রাতে এমন কথা নিশ্চিত করেন, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার ওয়াদুদ ভুইয়া ও পুলিশের রংপুর জোনের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য্য।

উল্লেখ্য, বুধবার দিবাগত রাতে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবাকে নিজের সরকারি বাসভবনে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তাদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় রংপুর মেডিকেল হাসপাতাল থেকে বেলা ১২টা ৪৭ মিনিটে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে একটি হেলিকপ্টার ওয়াহিদা খানমকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

আহত নির্বাহী কর্মকতার নাম ওয়াহিদা খানমের বাবার নাম ওমর আলী। নওগাঁ থেকে মাঝে মাঝে মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবা। ওয়াহিদা খানমের স্বামী রংপুরের পীরগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

ঘোড়াঘাট থানা পুলিশের ওসি আমিরুল ইসলাম জানান, ঠিক কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তা জানা যায়নি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদা খানমের স্বামী রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।

০৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১২:৪৬:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/মাক/এমএআর