শেষ পর্যন্ত কি যুদ্ধে জড়াবে চীন-ভারত?

সীমান্ত বিরোধী নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাতে জড়িয়ে গেল চীন এবং ভারত। লাদাখ সীমান্তে সোমবার রাতের ঘটনায় নিজেদের এক কর্নেলসহ ২০ সেনা নিহতের কথা স্বীকার করেছে ভারতের সেনাবাহিনী।

অন্যদিকে চীনের সেনারাও হতাহত হয়েছেন বলে দেশটির কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক এমন ইঙ্গিত দিলেও সরকারের পক্ষ থেকে কিছু এখনো বলা হয়নি।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চীনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মাহমুদ আলি বিবিসি বাংলাকে বলেন, চীন এবং ভারত দুটি দেশই গত বছর দশেক ধরে তাদের সীমান্ত এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে। চীন এটা করেছে তিব্বতে। আর ভারত করেছে দক্ষিণের অরুণাচল প্রদেশে এবং লাদাখ অঞ্চলে।

দুটি দেশই এসব জায়গায় রাস্তাঘাট করেছে, বিমান ঘাঁটি বানিয়েছে। রাডার স্টেশন বসিয়েছে। সৈন্য সমাবেশ বৃদ্ধি করেছে। দু’পক্ষই বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েন করেছে।

আরও পড়ুন :
যে আট পণ্যের বাতিল হলো লাইসেন্স
যে ৪০ এমপির সংসদে যাওয়া মানা

এছাড়া সেখানে সামরিক মহড়াও দিয়েছে দুই দেশ। কাজেই একটা যুদ্ধংদেহী মনোভাব সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দেখা যাচ্ছে।

এর পাশাপাশি চীন এবং ভারত দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী একটি মনোভাব জোরালো হয়ে উঠেছে। দুটি দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো দেখলে, বিশেষ করে ভারতে, এটা বেশ চোখে পড়বে। সেখানে চীনকে একটি বৈরি দেশ হিসেবে চিহ্নিত করে অনেক কথা বলা হচ্ছে।

চীনের সংবাদমাধ্যমগুলোতে অবশ্য ভারত অতটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। কিন্তু তারপরও যখনই ভারত সম্পর্কে কথা উঠছে, সেখানে জাতীয়তাবাদী একটা মনোভাব বেশ স্পষ্ট। সুতরাং এটা বলা যায়, রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিকভাবে যে বৈশ্বিক মেরুকরণ, সেখানে চীন এবং ভারতের মধ্যে একটা দ্বন্দ্ব রয়েছে।

দুই দেশেই একটা জাতীয়তাবাদী আকাঙ্ক্ষা বা চিন্তাধারা বেশ জোরদার হয়ে উঠেছে।

যেসব সীমান্ত এলাকায় দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনী সামনাসামনি মোতায়েন আছে, সেখানে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে। কাজেই সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ জটিল।

দুটি দেশেরই স্বার্থ হচ্ছে যুদ্ধে না জড়ানো। কারণ যুদ্ধ হলে ক্ষয়ক্ষতি বেশ ব্যাপক হবে। দুটি দেশেরই ক্ষতি হবে। কাজেই দুই দেশই শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাইছে।

আরও পড়ুন :
নিষ্পাপ প্রেমে পুলিশি রাজনীতি!
২ মাস পিছিয়ে গেল অস্কার আসর

চীন এবং ভারত উভয়েরই পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। দুই দেশের সংঘাতে যদি ক্রমবর্ধমান হারে ভয়ংকর সমরাস্ত্রের ব্যবহার হতে থাকে, দুই দেশই আসলে পরস্পরকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।

ড. মাহমুদ আলি বলেন, আমার ধারণা কোন দেশই সেরকম ব্যাপকতর কোনো সংঘাতে জড়াতে চায় না। কারণ শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধের ফল কী দাঁড়াবে সেটা কেউই এখন পর্যন্ত বলতে পারে না।

দ্বিতীয়ত, ভারত এবং চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক এখন ব্যাপক আকার নিয়েছে। বিশ্বব্যাপী একটা অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কোনো দেশই এরকম একটা সম্পর্ক ক্ষুণ্ণ করতে চাইবে না।

তৃতীয়ত, যুদ্ধ যদি খুব বেশি ছড়িয়ে পড়ে, সেটা যে ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনতে পারে সেটা দুপক্ষই বোঝেন। কারণ দুটি দেশই পারমাণবিক শক্তিধর। কাজেই তাদের চেষ্টা থাকবে উত্তেজনা কমিয়ে আনার।

জুন ১৭, ২০২০ at ১০:২০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/দেরু/এমএআর