২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে উপজেলার সেরা হয়েছে পিতৃহারা আসিব হোসেন মুবিন। সে ১০৮৭ নম্বর পেয়ে শ্রেষ্ঠ হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রধান শিক্ষক, মা ও ভাইয়ের উৎসাহে মুবিন লেখাপড়ায় মনোযোগী হয় এবং ছেলেকে চিকিৎসক করার বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য সে কঠোর পরিশ্রম ও সাধনা করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে।
মুবিন যশোরের মণিরামপুর উপজেলার হরিহরনগর ইউনিয়নের তাজপুর গ্রামের মৃত আমজাত হোসেন ও আসমা বেগমের ছেলে। দুই ভাইয়ের মধ্যে মুবিন ছোট। ২০১৬ সালে ৭ম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তার পিতা আমজাত হোসেন ষ্ট্রোক জনিত রোগে মারা যান। এসময় স্বামী হারা মা আসমা বেগমের পক্ষে লেখাপড়া চালানো দুরুহ ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। মুবিনের লেখাপড়া যখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তখন ঝিকরগাছা বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ সহ কয়েকজন শিক্ষক তাদের বাড়িতে যান এবং আসিব হোসেন মুবিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ তাকে নিজের বাড়িতে রেখে লেখাপড়া করাতে থাকেন। ২০১৭ সালে জেএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে জিপিএ-৫ পাওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করে। ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে সে তার নানার বাড়ি জাফরনগর গ্রামে চলে যায়। সেই জায়গা থেকে প্রতিদিন বাসে করে এসে ঝিকরগাছা বিএম স্কুলে ক্লাস করে। ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে গোল্ডেন প্লাস সহ ১০৮৭ নম্বর পেয়ে উপজেলার সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। মুবিন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়ও জিপিএ-৫ সহ ট্যানেলপুলে বৃত্তিপ্রাপ্ত হয়েছিল।
আসিব হোসেন মুবিন জানায়, আমার এ সাফল্যের জন্য আমার প্রধান শিক্ষক সহ শিক্ষকমন্ডলী, মা, ভাই, নানা-নানী, মামা-মামীর কাছে চিরঋণী হয়ে থাকবো। আমার বাবার খুব ইচ্ছা ছিল, আমি লেখাপড়া শিখে চিকিৎসক হয়ে দেশ, জাতি ও এলাকার সাধারণ মানুষের সেবা করব। আমার বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আমি শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন।
আসিব হোসেন মুবিনের মাতা আসমা বেগম জানান, মুবিনের বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি দিশেহারা হয়ে পড়ি। কি করব কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন বিএম স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ কয়েকজন শিক্ষক আমার বাড়িতে এসে আমাকে সাহস দেন এবং মুবিনের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন। মুবিনের ফলাফল শোনার পর আমি আনন্দে অঝরে কেঁদেছি। আমার আনন্দের কথা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারবো। সে যাতে আদর্শ মানুষ হতে পারে সে জন্য সকলে দোয়া করবেন।
বিএম হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান, নিজের পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে মুবিন এ সাফল্য অর্জন করেছে। তার সাফল্যে আমরা শিক্ষকমন্ডলী ও পরিচালনা পরিষদ ব্যাপকভাবে খুশি। বিদ্যালয়ের এ সাফল্য ধরে রাখার জন্য সকল শিক্ষকমন্ডলী নিরর্লসভাবে কাজ করবে বলে আমি আশাবাদী।
এদিকে ঝিকরগাছা বি.এম হাই স্কুল এবারও অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। বিদ্যালয় থেকে ২৯ জন শিক্ষার্থী গোল্ডেন সহ ৭৯ জন এ প্লাস পেয়েছে। এছাড়া ৮৫ জন এ গ্রেড, ২৫ জন এ মাইনাস সহ মোট ২০৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ২০৫ জন পাশ করেছে। মোট পাশের হার ৯৯ %।
জুন ০১, ২০২০ at ১৯:১০:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএ/আরএইচ