শবযাত্রা ই শেষ যাত্রা ! কিন্তু !

অশ্রু বা রক্ত দিয়ে লিখলেও কি ইন্সপেক্টর রাজু আহমেদ এর সন্তানদের চোখে র পানি কমবে? দশ বিশ জন পাশে দাঁড়ালে কি শোক থামবে?কিছু তেই হবে না ।এ মৃত্যু, এ যে বিয়োগ, এ যে শেষ হয়ে যাওয়া।ইতিম করে যাওয়া, একা করে যাওয়া, বিধবা করে দেওয়া। পুত্রশোকে পিতার ঘারে র ভার মাতার বুকে ঝড়।

CTTC তে চাকুরি। পুলিশের মেধাবী অফিসার। কিন্তু মে মাসের দুই তারিখ হতে কোভিড আক্রান্ত। আজ মারা গেল।কপাল ,ভাগ্য।প্লাজমা থেরাপির কথা মনে সাহস সঞ্চার হয়েছিল। আবার ইভারমেকটিন, ডক্সিসাইক্লিন কোন ঔষধে ই কাজ হল না।ভেন্টিলেটার, অক্সিজেন কোন টাতেই কাজ হয়নি রাজুর শরীরের করোনা থামাতে।পরিপূর্ণ পুলিশ অফিসার তৈরি করতে যে সময় লাগে তার অসময়ে ধাক্কা।

চব্বিশ ঘন্টা ডিউটি করতে যেয়ে নিয়মিত, সুষম খাবার খেয়ে ইমিউনিটি ধরে রাখা পুলিশে সম্ভব না।আর পিপিই, বা লেগ গার্ড, বুলেট প্রুফ ইত্যাদি সরঞ্জাম পরে মানব সেবায় কাজ করলে কোন কোন সময় ভাইরাস লাগবেই।
এই করোনার মধ্যেই পুলিশ কিন্তু খুন, ধর্ষণ ,সহ সকল অপরাধের আসামি ধরছে।কিন্তু সচেতন মানুষ গুলোর বাজারে যাওয়া বন্ধ করতে সহকর্মী দের সহমরন দেখতে হচ্ছে।

রাজু আহমেদ অ সাধারন ব্যক্তিত্বের অধিকারী। করোনা য় শহীদ হলেন বলে নয়।তার সাথে পরিচয় মিশনের কোন এক পরীক্ষায়।অ সম্ভব ধীর স্থির তিনি।শান্ত প্রকৃতির। পাশাপাশি পরীক্ষা দেওয়ার পর শুধুমাত্র পরিচয় হওয়ার কারনে দীর্ঘদিন যোগাযোগ রেখেছেন। কিন্তু রোহিংগা এলাকায় থাকায় সংবাদ নেওয়া হয়নি।হয়ে ও উঠল না।আর হয়ত দরকার পড়বেও না।বা ফোন করলেও তো শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিচ্ছবি। কয়দিন। এক দুই দিন পাশে থাকব বা সবাই থাকবে।কিন্তু যে সন্তান তাঁর বাবা র সাথে স্কুলে গেছে তার কি হবে।কালকে মুসলিম খুশি র ঈদ।কি খুশির অবশিষ্ট রইল তার সন্তানদের।সাদা শাড়ি র উপহার তার স্ত্রী র জন্য। শাঁখা র চুরিতে করোনা ভাইরাস লেগে রইল।

পিতার পায়ে সালাম দেওয়ার অপারগতায় উল্টো ঘাড়ে শবদেহের ভারী ভার। জানি না কি ভাবে নিশ্বাস নিবেন তাঁর গর্ভে ধরা রত্নগর্ভা। সহকর্মী রা মর্মাহত।

মৃত্যু ই পৃথিবীর নির্মম ঘটনা। কেউ রুখতে পারেনি।সত্যিই সত্য ইহার ফলাফল। কিন্তু মানুষের আড্ডা, বাজার, আর চা বাজি ঠেকাতে গিয়ে রাজু র জীবন মৃত্যু দিয়ে শেষ হল,সন্তান দের ইতিম হয়ে নিজ হাতের তালুতে তাকাতে হল,বাবা র ঘাড়ে পরিমাপহীন ওজন আর মাতৃত্বের মা হলেন অনুভূতিহীন।

এ বিয়োগে বাইরে ঘোরা সুপুরুষ দের ক্ষনিক শান্তি। কিন্তু রাজুর পরিবারের হিসাব পুরো ই উল্টো। সব কেটে নতুন করে শুরু করতে হবে।

সে নিজেই মারা গেল।তার স্ত্রী সন্তানদের সবই গেল,পুরোটাই গেল ।যার গেল পুরোটাই গেল ,মেরামত করার কিছু ই থাকল না।শেষ যাত্রা য় শেষ হয়ে ই গেলেন সহকর্মী রাজু আহমেদ। শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

লেখক-