যে ভাবনার গভীরে যাওয়া হয়নি

বাসায় ৪টা সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে। এই লকডাউনে বাসায় বসে সিসিটিভিতে রাস্তায় মানুষের আনাগোনা দেখি। কিছুদিন ধরে আমার চিন্তার জগতে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কারণ আমার পবিত্র ধর্মগ্রন্থে মহাপবিত্র স্রষ্টা বারংবার বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই চিন্তাশীলদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’

এই বাক্য অনেকবার পড়েছি, কিন্তু এ নিয়ে ভাবনার গভীরে যাওয়া হয়নি কখনোই। এতো গভীরভাবে ভেবে দেখিনি। গত ক’দিন ধরে কিছু বিষয় ভাবনায় আসছে। ভাবছিও। যেমন-

১. যে সিসিটিভিতে আমি রাস্তার মানুষের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছি, তা এই পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদান দিয়েই তৈরি। তাহলে কী এমন কোনো মহাশক্তিধর সিসিটিভি আছে, যা সমগ্র বিশ্ব-ব্রহ্মান্ড পর্যবেক্ষণ করছে? ‘নিশ্চয়ই তিনি সব দেখেন।’

২. আমি আমার এক মৃত বন্ধুর বিয়ের ডিভিডি খুব আবেগ নিয়ে দেখছিলাম। সে নাই, কিন্তু তার অতীত কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি। সেই আবেগ পরক্ষণেই ভয়ে পরিণত হলো, যখন ভাবলাম- এমন কোনো মহাশক্তিশালী ডিভিডি কী থাকা সম্ভব যা সমগ্র সৃষ্টির কার্যাবলী রেকর্ড করছে, আর সেটা পরে প্লে করা হবে?। ‘সেদিন সবকিছু প্রকাশ হয়ে পড়বে, তোমার পালনকর্তার আদেশ অনুযায়ী।’

৩. মা যখন বাচ্চা প্রসব করে, তখন সেই বাচ্চার পুষ্টিগুণ অনুযায়ী মায়ের বুকে দুধই কেন আসে?কোকাকোলা, স্প্রাইট, বিয়ার কেন আসে না? কার পরিকল্পনা?। এগুলো মাথায় কাজ করে না! ‘মানুষ সৃষ্টিগতভাবেই দুর্বল।’

৪. পৃথিবীতে আমাকে জিজ্ঞেস করে পাঠানো হয়নি, আবার আমাকে বিদায়ও নিতে হবে আমার ইচ্ছা ছাড়াই। কেন? কার ইচ্ছামতো পৃথিবীতে আসলাম আর বিদায় নেব?। ‘আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের পালনকর্তার কাছে। মানুষের অধিপতির কাছে। মানুষের প্রকৃত মাবুদের কাছে।’

৫. বৃষ্টির পানি টাক মাথায় পড়লে চুল গজায় না, কিন্তু মৃত জমিতে পড়লে ঠিকই হরেক রকম ফসল জন্মে। কি আছে এতে? কার নির্দেশে এমন হয়?। ‘আর যিনি আসমান থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা দ্বারা মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করেন। এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।’

৬. উট তার উদরে পানি ধরে রাখতে পারে, যা মরুভূমিতে প্রয়োজনমতো কাজে লাগায়। মানুষ কেন পারে না? উটকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করলো কে?। মাথা কাজ করে না! ‘তারা উটের দিকে কী তাকিয়ে দেখে না, কীভাবে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’

৭. সমুদ্রের অনেক গভীরে যেখানে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে না, সেখানে কিছু মাছ আছে যাদের শরীরে বিদ্যুৎ তথা আলো তৈরি হয়। এতো গভীরে পানির চাপেও তারা মারা যায় না, অথচ এই চাপে লোহাও বেঁকে যায়। কে এদের এভাবে সৃষ্টি করলো?। ‘তিনি যা ইচ্ছা তাই সৃষ্টি করেন।’

৮. মানুষের এক জিহবা এতো স্বাদ কিভাবে বোঝে? কে প্রোগ্রাম করলো? কেমন করে সম্ভব?।

৯. খাদ্যহজম প্রক্রিয়া এতো নিখুঁত কিভাবে? যেমন- শর্করা হয় মুখবিবরে, এর জন্য আলাদা এনজাইম। আবার আমিষ হয় পাকস্থলীতে, তার জন্য আলাদা এনজাইম। আবার ফিল্টার হিসেবে কিডনি, অপাচ্য নির্গমনের পথ। কে সেই মহা বিজ্ঞানময় সত্ত্বা? ইশারা কী বোঝেন?।

১০. মানুষের শ্রবণ ও দর্শন মেকানিজম যে কি জটিল তা ভাবা যায় না। কে এতো নিখুঁতভাবে সবকিছু ডিজাইন করলো?।

১১. বিজ্ঞান শুধু দুটো প্রশ্ন নিয়ে কাজ করে। কি এবং কিভাবে। কেন’র কোনো উত্তর বিজ্ঞানের কাছে নাই। যেমন- কি হলো? ভূমিকম্প। কিভাবে হলো? টেক্টোনিক প্লেটের সঞ্চালনের কারণে। টেক্টোনিক প্লেট কেন সরে গেল? উত্তর নাই!

এভাবে আরো অনেক বিষয় আছে চিন্তা করার, যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়-

ALLAH is the only explanation of all physical phenomena in this universe.

‘আমিই তোমাদের সৃষ্টি করেছি, তারপরও তোমরা কেন বিশ্বাস করছো না?’।

লেখক : সুলতানা করীম, সমাজকর্মী।

মে ১২, ২০২০ at ১৯:৪৫:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এসআর/এএডি