“বেঁচে থাকাটাই এই বছরের বড় চ্যালেঞ্জ!!”- তাতে আমার কি?

সামনে ঈদ! আমাদের বৈশাখ চলে গেলো বেশ নীরবে তাতে ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তাদের খুব বেশী ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু ঈদ নীরবে চলে গেলে হবেনা, কারণ এর সাথে বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ব্যবসা জড়িত! বিশেষ করে পোশাক শিল্প! এমনিতেই বৈদেশিক বাজারে অন্য বছরের মতো ব্যবসা নেই, ফলে শ্রমিক শোষণও এই বছর তেমন করা হয়নি হয়তো, তাই ব্যাংক ব্যালেন্সটা এই বছর কম ঠেকছে! সেটা এই ঈদে পুষিয়ে নিতেই হবে!

সামনে ঈদ! এবার আর বন্ধ থাকবেনা কিছু! গার্মেন্টস কারখানাগুলোতে কাজ চলছে দেদারসে!

দেশের অভ্যন্তরীণ এই বড় বাজার ধরতেই হবে যেভাবেই হউক, মরে গেলে গেলো, তবুও ধরতেই হবে| আমার ব্যবসাই আমার ধর্ম, আমার স্বপ্ন, আমার জীবন!

শ্রমিক পোশাক বানাতে গিয়ে আক্রান্ত হবে, কেউ কেউ মারা যাবে…। যাক! তাতে আমার কি?

শপিং মল খুলে দেয়া হচ্ছে, পোশাক ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আক্রান্ত হবে, কেউ কেউ নতুন কাপড় পড়ে মারা যাবে! যাক, তাতে আমার কি?

এতে পুলিশ বাহিনীর উপর চাপ তৈরি হবে, রোজায় কষ্ট করে জনগণের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খেতে হবে পুলিশ ভাই বোনদের| হলে হউক! কিছু পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হবে, কেউ কেউ মারা যাবে! যাক! তাতে আমার কি?

এই যে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা লাখ ছাড়িয়ে যাবে ততদিনে, তারা যাবেন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে… এতো রোগীর একসাথে চিকিৎসা দেবার মতো ব্যবস্থা আমাদের নেই, যন্ত্রপাতিও নেই! তখন দলে দলে মানুষ মারা যেতে পারে| যাক! তাতে আমার কি?

এর ফলে চিকিৎসা পেশায় যারা আছেন, তাঁদের কাছে করোনা রোগীর সংখ্যা এতোটাই বাড়বে তখন স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই মারা যেতে থাকবে হয়তো! যাক! তাতে আমার কি?

এতোসব মানুষ মারা গেলে, সমাজে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হবে| দেশের জনগণের কাছে, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ইমেজ নষ্ট হবে… হলে হউক! তাতে আমার কি?

তবুও তো আমার ব্যবসা হবে, ব্যক্তি আমিতো আর্থিক ভাবে লাভবান হবো! অন্যদের কার কি হল তাতে আমার কি?

ওহে ব্যবসায়ী জাতি, এই বছরটা বেঁচে থাকতে পারলে আগামী বছর দ্বিগুণ ব্যবসা করা যাবে! বেঁচে থাকাটাই এই বছরের বড় চ্যালেঞ্জ!! সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করুন!

লেখক: রাশেদা রওনক খান
শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।