চট্টগ্রামে সীমিত নয়, পুরোদমে চলছে পোশাক কারখানা : বাড়ছে করোনা শঙ্কা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সাধারণ ছুটির মধ্যে সীমিত আকারে পোশাক কারখানা খোলার অনুমতি দিলেও চট্টগ্রামের অধিকাংশ কারখানা চলছে পুরোদমে। গার্মেন্টস খোলার কারণে আগামী ৭ থেকে ১৪ দিন পরে চট্টগ্রামে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামের সাগরিকা শিল্প এলাকায় বিএসএ গ্রুপের ৩টি পোশাক কারখানায় মোট ৬ হাজার শ্রমিক কাজ করে। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) এই ৩ কারখানায় ৯০ শতাংশের বেশি শ্রমিক উপস্থিত ছিল। স্বাভাবিক সময়েও এই কারখানাগুলোতে প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ শ্রমিক অনুপস্থিত থাকে।

কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হলেও বিএসএ গার্মেন্টসের মতো অনেক কারখানা রীতিমতো পরিবহন দিয়ে কর্মীদের কারখানায় নিয়ে আসছে। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের উপস্থিতিতে এই শ্রমঘন শিল্পে চাইলেও সামাজিক দূরত্ব অক্ষুণ্ণ রেখে উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়া সম্ভব কিনা সেটা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেকে। আবার এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আরো পড়ুন :
অনলাইনে প্রতিনিয়ত সাড়া জাগানো ক্লাস নিচ্ছেন প্রভাষক নাহিদ নেওয়াজ
চৌগাছার নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুড়ান্ত এমপিওর তালিকা ঘোষণা
চৌগাছার নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুড়ান্ত এমপিওর তালিকা ঘোষণা

শ্রমিক উপস্থিতি বেশি প্রসঙ্গে বিএসএ গ্রুপের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এই গ্রুপের অধিকাংশ শ্রমিক হালিশহর, সিটিগেইট, আকবরশাহ এলাকার। তাই শ্রমিকদের আসতে সমস্যা হয় না। এ ছাড়া বেশকিছু শ্রমিক আসে গোসাইলডাঙ্গা থেকে। তাদের বাস দিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশিত সুরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের শিল্প পুলিশের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেলায় বুধবার (২৯ এপ্রিল) ১ হাজার ২২৯ শিল্প কারখানার মধ্যে চালু ছিল ৬০৫ টি। এরমধ্যে তৈরি পোশাক কারখানা ৩৬৬টি। বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানা ১৪৮টি। এ ছাড়া বিকেএমইএ সদস্য ৪৮ ও বিটিএমইএ’র ১০ কারখানা চালু ছিল। আর দুই ইপিজেডে সবমিলিয়ে চালু ছিল ১৪২ কারখানা।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) চট্টগ্রামে চালু ছিল ৩৩৮ কারখানা। অর্থাৎ প্রতিদিনই খুলছে নতুন নতুন কারখানা। বিশেষ অনুমতি নিয়ে জরুরি শিপমেন্টের জন্য সীমিত পরিসরে খোলার কথা বলা হলেও অধিকাংশ কারখানা পূর্ণোদ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এই সুযোগে যারা ইতিমধ্যে দীর্ঘমেয়াদে লে-অফ ঘোষণা করেছে এমন অনেক কারখানা শ্রমিকদের এনে সীমিত আকারে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।

চট্টগ্রাম ইপিজেড সূত্র জানায়, এই ইপিজেডে বুধবারও (২৯ এপ্রিল) ১০১ কারখানা খোলা ছিল। এইসব কারখানায় প্রায় ৫১ হাজার শ্রমিক আজ উৎপাদন প্রক্রিয়া চালিয়ে গেছেন। যদিও শিল্প পুলিশের হিসাবে সিইপিজেডে চালু কারখানা ১৩৯ টি।

উল্লেখ্য যে গত ২৬ এপ্রিল সিইপিজেড গেইটে বিকালে ছুটির সময় বিপুল শ্রমিকের সমাগমের ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সমালোচনার মুখে পরদিন থেকে ইপিজেডে প্রবেশ ও ছুটির সময় কারখানাভেদে আলাদা করে দেওয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে সিইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক খুরশিদ আলম বলেন, ‘কারখানাগুলোকে গ্রুপ ভাগ করে অফিস শুরু ও ছুটির সময় আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে চাপ অনেকটাই কমে গেছে। এ ছাড়া কারখানায় প্রবেশের সময় হাতধোয়া, মাস্ক পরিধান ও থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে জ্বর মাপা ও কারখানার অভ্যন্তরে সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করার জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।’

সিইপিজেডের আশেপাশের শ্রমিক মূলত স্টিলমিল বাজার থেকে শুরু করে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত এলাকায় অবস্থান করা শ্রমিকদের নিয়ে ইপিজেডের কারখানাগুলোকে উৎপাদন কাজ চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কয়েকটি কারখানা গ্রামের বাড়ি থেকে শ্রমিকদের আনার জন্য চাপ দিয়েছে শোনার পর তাদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। যদিও নির্দিষ্ট করে দেওয়া এলাকার বাইরে থেকেও প্রচুর শ্রমিক ইপিজেডে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

শ্রমিকের উপস্থিতি বেশি প্রসঙ্গে বিজিএমইএ পরিচালক মোহাম্মদ আতিক বলেন, ‘চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ শ্রমিক কাজ করছে। শহরের কারখানায় শ্রমিক বেশি উপস্থিতির কারণ এই শ্রমিকরা বেশিরভাগ কারখানার আশেপাশেই বাস করে। এ ছাড়া ছুটির মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে খুব বেশি শ্রমিক গ্রামের বাড়িতে যায়নি। এরপরেও বিজিএমইএ’র ৪ পরিচালকের নেতৃত্বে ৪টি কমিটি করা হয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য।’

এদিকে পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের এমন উপস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।

করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আব্দুর রব মাসুম তার ফেসবুক লাইভে গত ৩ দিনের চট্টগ্রামে কভিড-১৯ এর সংক্রমণের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘গত সোমবার চট্টগ্রামে ১০০ নমুনা পরীক্ষায় ১১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের নমুনা ছিল ৩৫ টি। এই ৩৫ টি নমুনায় চট্টগ্রাম জেলায় করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৯ জন। মঙ্গলবার ৬ জন এবং গতকাল বুধবার ৫ জন। শনাক্তের হার প্রায় ২৫ শতাংশ। যদি নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা আরও বেশি হতো নিশ্চিতভাবে আরো বেশি সংখ্যক রোগী পাওয়া যেতো। গার্মেন্টস খোলার কারণে আগামী ৭ থেকে ১৪ দিন পরে চট্টগ্রামে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা করছি।’

এপ্রিল ৩০, ২০২০ at ১৬:৪২:৪২ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আক/এমএম/এএডি