কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ ক্লু লেস মার্ডার রহস্য উদঘাটনে আরও একটি সফলতা অর্জন করলো। তিন মাস পর চিলমারীর নৈশপ্রহরী এরশাদুল হকের হত্যা ও চুরির ঘটনার মুল আসামীদের মধ্যে চার জনকে গ্রেফতার করার কথা জানা যায়।
তিন মাস পুর্বে চিলমারী থানার জোড়গাছ নতুন বাজারে সংঘটিত দোকান চুরি ও নৈশপ্রহরী হত্যার ঘটনা মারাত্মক চা ল্যের সৃষ্টি করে। উল্লেখ্য গত ৫ জানুয়ারী ২০২০ খ্রীষ্টাব্দে জোড়গাছ নয়াবাজারে গভীর রাতে নৈশপ্রহরী এরশাদুল হক (৫৫) কে শ্বাসরোধে হত্যা করে তিনটি দোকান চুরি করে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তিন দোকান মিলে নগদ অর্থ সহ প্রায় ২৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায় বলে দোকানিরা অভিযোগ করে।
পু্লশি সূত্রে জানা যায়, ক্লু লেস জোড়গাছ হত্যা ও তিনটি দোকানে সংঘবদ্ধ চুরি ঘটনাটি স্থানীয় ব্যবসায়ী মহল সহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। এ ঘটনার সময় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জেলার বাহিরে অবস্থান করছিলেন।
আরও পড়ুন: জীবননগরে মানছে না হোম কোয়ারেন্টাইন
এমতাবস্থায় জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম ঢাকার সফর সংক্ষিপ্ত করে সরাসরি কুড়িগ্রাম এসেই চিলমারী জোড়গাছ নতুন বাজার দোকান ভিজিট সহ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে মতামত বিনিময় করেন। মৃত এরশাদুল হকের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। দৃঢ়তার সাথে বলেন, এরশাদ পুলিশের ছায়া পুলিশ হিসেবে মানুষের সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তায় নিষ্ঠার সাথে কাজ করায়, দূর্বৃত্তরা তাকে হত্য করে। চিলমারী থানার অফিসার ইনচার্জকে ঘটনাস্থল থেকে যা যা আলামত হিসেবে জব্দ তালিকায় নেয়া হয়েছে, তা তালা চাবি থেকে সকল তথ্যাদি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল মাহমুদ হাসানের কাছে দিতে বলেন। এএসপি আল মাহমুদ হাসান এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খানের নির্দেশনায় তদন্ত কার্যক্রম করছিলেন।
৬ জানুয়ারী চিলমারী থানাধীন জোড়গাছ বাজারে খুনসহ ডাকাতি মামলাটি তদন্তকালে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম’র প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উলিপুর সার্কেল আল মাহমুদ হাসানের নেতৃত্বে ডিবি কুড়িগ্রাম তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় মামলার ঘটনার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা হয়। আটককৃত আসামীরা হলেন জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ সোনাকুড়া নিবাসী আঃ ছালাম, কুড়িগ্রাম ফুলবাড়ি থানার খড়িবাড়ির রেজাউল হক ওরফে ভুট্টু, চিলমারী থানার সাতঘড়িয়া পাড়া এলাকার মোকসেদ আলী ও খয়রাত হোসেন, খেওয়ার চর, রৌমারী, কুড়িগ্রাম।
চিলমারী থানা অফিসার ইনচার্জ আমিনুর রহমান বলেন, এসপি স্যারের দিক নির্দেশনা ও তড়িৎ যোগাযোগ স্থাপন, প্রযুক্তির সহায়তা প্রভৃতি সাপোর্ট গুলো নিয়ে গত তিন মাসের নিরলস তদন্ত শেষে চারদিন আগে ২৭ মার্চ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল মাহমুদ হাসান স্যারের নেতৃত্বে চিলমারী, ফুলবাড়ী এবং জামালপুর জেলায় অভিযান পরিচালনা করে আন্ত:জেলা ডাকাত দলের চারজন সদস্যকে গ্রেফতার করেন।
আরও পড়ুন: ক্রিকেট খেলায় বাঁধা দেওয়ায় যুবককে মারপিট
গ্রেফতারকৃতদের অধিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ও মামলার সুষ্ঠ তদন্তের স্বার্থে বিজ্ঞ আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পুলিশ রিমান্ডে থাকাকালীন তারা এই ডাকাতির সাথে মোট ১১ জন জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে একজন ইতিপুর্বে অন্য মামলায় গ্রেফতার হয়ে ময়মনসিংহ জেলে আটক রয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ধৃত আসামীদের তিনজন গতকাল ও আজ বিজ্ঞ আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানানো হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান বিপিএম জানান, ঘটনার আকস্মিকতায় ও হত্যা সহ চুরি বা ডাকাতির ঘটনায় দোকানের তালা খোলা ও তালা ভেঙ্গে ফেলা এবং বড় চুরি সংঘটিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে নৈশপ্রহরীকে হত্যার বিষয়টি তদন্তকার্যক্রম ভিন্নদিকে নিয়ে কাজ শুরু করার পরামর্শ দেয়া হয়।
ফেব্রæয়ারীর শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রমের পরেও চা ল্যকর ক্লু লেস এই মামলার তদন্ত কাজ, আসামী শনাক্ত ও গ্রেফতার সহ রুটিন ওয়ার্ক গুলো চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশ কুড়িগ্রাম।
দেশদর্পণ/এজিএল/এসজে