সংসদীয় আসন কুড়িগ্রাম-৪ আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী,দলীয় সিদ্ধান্তে কোনঠাসা বিএনপি

চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত কুড়িগ্রাম-৪ সংসদীয় আসন এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্গ হিসেবে পরিচিত ছিল। এখন সে অবস্থা আর নেই। দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে আসন টিতে আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক ও ভোটের শক্তি অনেকটাই বেড়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীলীগের নেতারা দৌড়ঝাঁপ করতে শুরু করেছেন। নির্বাচন কে ঘিরে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দলটির নেতাদের মাঝে। জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশিরাও মাঠে রয়েছেন। তবে এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তের কারণে মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা আছেন দোটানায়।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশি দের গণসংযোগ খুব বেশি চোখে না পড়লেও তারা বিভিন্ন ইস্যু, উৎসব কে ঘিরে পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড, ডিজিটাল ব্যানারে ছেয়ে দিয়েছেন নির্বাচনী এলাকায়। নির্বাচনী এলাকা চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এ আসনে আ,লীগের বর্তমান প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন (এমপি)ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন, রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আকবর হোসেন হিরো, রৌমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসী, রাজীবপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শফিউল আলম, রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক ও সহ-সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ ফজলুল হক মনি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর আলম, চিলমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ রহিমুজ্জামান সুমন,অ্যাডভোকেট মাছুম ইকবাল, রৌমারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি চর বন্ধু হাজী মুরাদ লতিফ, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামীলীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, রংপুর আইন কলেজের অধ্যক্ষ মো: সাজাদুর রহমান তাতা, ডা: ফারুকুল ইসলাম প্রমুখ।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামীলীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর অভিযোগ গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেন বিজয়ী হয়ে গণশিক্ষা ও প্রাথমিক মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিমন্ত্রী’র দায়িত্ব পাওয়ার পর ৩উপজেলাতেই তিনি দলকে সু-সংগঠিত করতে পারেন নি, দলের ভিতর রয়েছে অন্তর্দ্ব›দ্ব। এছাড়া  নেতা কর্মীদেও মূল্যায়ন,পাওয়া না পাওয়ার হিসেব নিকেশ, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন উপজেলায় নৌকা প্রার্থী হেরে যাওয়ায়  ক্ষোভ রয়েছে নেতা কর্মীদের মাঝে। এ ধরনের নানান কারণে  নৌকা মার্কার প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। তবে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে থাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তারা আরও বলেন যোগ্য কোন প্রার্থী নৌকা নিয়ে নির্বাচন করলে এ আসন আবারো আওয়ামীলীগের দখলে থাকবে।
অপর দিকে জাতীয়পার্টির দুর্গ বলে পরিচিতি হলেও এ আসনে তা আর নেই। বর্তমানে এ অঞ্চলে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। দলের নেতা কর্মীরা জানান, মহাজোট হলেও এখানকার আওয়ামীলীগ তাদের কোনো মূল্যায়নই করেন না। তবে দলের অনেক নেতা-কর্মীবলেন, নেতৃত্বের পুনর্বিন্যাস করা গেলে জাতীয় পার্টির এই দুর্গ আগামী নির্বাচনে পুনরুদ্ধার করবে। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসাবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে চিলমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সহ-অধ্যাপক মোঃ রুকুনুজ্জামানশাহিন, রৌমারী উপজেলা জাতীয়পার্টির সাধারন সম্পাদক এ,কে,এম সাইফুল রহমান,দাঁত ভাঙ্গা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান কেএম ফজলুল হক মন্ডল,রৌমারী সদর ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (লন্ডনী)।
আসন টিতে এর আগে জামায়াতের প্রার্থী থাকলেও গত নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসাবে ছিলেন মোঃ আজিজুর রহমান। বিএনপি’র নেতারা মনে করেন জোট থাকালে বিএনপি ছাড়া জামায়াতকে আসনটি ছেড়ে দিলে তা হবে আত্মঘাতী। এই আসনের ৩ উপজেলার মধ্যেই বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে। দীর্ঘদিন থেকে দলটিতে গ্রæপিংয়ের কারণে এসব এলাকায় সরকার বিরোধী আন্দোলনে দেখা মিলছেনা দলীয় নেতা কর্মীদের। অধিকাংশ অঙ্গ সংগঠনের মেয়াদ উত্তীর্ণ। একাধিক কমিটি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীদের মধ্যে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, রৌমারী উপজেলা বিএনপি সভাপতি আজিজুর রহমান, চিলমারী উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল বারী সরকার, নয়ারহাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সহ-অধ্যাপক আবু হানিফা, রাজিবপুর উপজেলা সভাপতি অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান, জাতীয়তাবাদী মহিলা দল কেন্দ্রীয় কমিটি’র সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মমতাজ হোসেন লিপি প্রমুখ।
জাতীয়পার্টি(জেপি)র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন সাবেক এমপি রুহুল আমিন। এ ছাড়াও যে কোনো দলীয় মার্কা নিয়ে নির্বাচন করতে পারেন সাবেক এমপি মো: গোলাম হাবিব।
কুড়িগ্রাম-৪ আসনে  মোট ভোটারের সংখ্যা ৩ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শত ৮৮ জন ,যার মধ্যে ১ লাখ ৬৮ হাজার ২শত ১২ জন পুরুষ ও ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫ শত ৭৬ জন মহিলা ভোটার । মোট  ১৫ টি ইউনিয়নে কেন্দ্র রয়েছে ১৩০ টি বুথের সংখ্যা ৭৯৮টি।
দেশদর্পণ/সুশা/ফহ/ইর