ডাক্তার আসিবার পর ……..

মনটা খুবই খারাপ। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নে তেমন কর্মব্যস্ততা নেই। তবে রোহিঙ্গা বিষয়ে ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ করতে হয়। তা দেড় বছর হল। করোনার সংক্রামকে বিচিত্র অভিজ্ঞতা ! মন আরো খারাপ !

ছুটি বন্ধ। বাসা থেকে রায়ানটা ফোন করে বলল আব্বু লক ডাউন চলে আস। স্ত্রী সন্তান এরাই থাকে। বাড়ীতে বাবা মা খোঁজ খবর নিচ্ছে। সে কারনে মন স্থির নেই।

শিবগঞ্জের ভদ্রলোকের স্ত্রী ফোন করে ডাক্তার তো দুরে থাক বিধবা হয়ে স্বামীর লাশ দাফন করতে পারে নাই।মৃতের কোন রক্তের স্বজন আসে নাই।

এ জন্য মনটা মরে গেল, চোখ টা ভিজে গেল।

দেশে ঈদ, পূজা, বন্যা, খরা, মহামারী, নির্বাচন, মেলা সব সময় ই ছুটি বন্ধের নির্দেশনা। সব সময় আমাদের ডিউটি। সারা বছরই হর্তাকর্তা ! এ বড়ই সৌভাগ্য। কে না চায়। সে গৌরবে কান্না টা আরো বেশি হচ্ছে !

করোনার মধ্যে কাজ হল সরাসরি নির্দেশনা বিশেষ করে কোয়ারেন্টাইনের আদেশ মানে না। সে পুলিশকে মানাতে হবে।

কি আর করা পিপিই ছাড়াই পুলিশ করে যাচ্ছে।

কোয়ারেন্টাইনে থাকবে না। কিন্তু জ্বরে কেউ মারা গেলে জানাযা করতে দেবে না। আবার নিজের এলাকায় হাসপাতাল করতে দিবে না।

তার অর্থ কি? সাহস না অহংকার? নাকি ধারনা শুধু তাদেরই করোনা হবে যাদের কবর দিতে বাঁধা দিলে কেউ কিছু বলবে না?

সভ্যতার সচেতন সমাজ এবং সবচেয়ে মুসলিম বেশির দেশে করোনা সন্দেহে মৃত মানুষের জানাযা, কবর দিতে হয় পুলিশের ! পুলিশের মধ্যস্থতায়। এই কারনে কান্নার শব্দ বুক থেকে আসছে।

এবং শিবগঞ্জের ঐ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তার পর ডাক্তার এসেছে। তাঁর স্ত্রী তো ফোন করে তেমন সাড়া না পেয়ে সমাজ, সভ্যতাকে তেমন অপরাধী ও করে নাই।
কেউ ফোন ধরে নাই। এ কারনে কান্না থামছে না।

আর মৃত্যুর আগে করোনা নিশ্চিত হয় নাই। তাতে জোজোর ভয়। আর পুলিশ তো শত রকমের লাশ টানে।তাদের তো এত অহং বোধ নেই।

তাতে নিজের বিদ্যাবুদ্ধি হারিয়ে যাচ্ছে ।

তাঁরা কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তার চেম্বারে 383 নং সিরিয়াল। মরে গেলে ও আগে সিরিয়াল পায় না।

যাক ডাক্তার আসিবার পরে মৃত্যু হলেও তার করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে। যদি পজিটিভ হয় তাহলে ঐ ব্যক্তি যাদের সাথে দেখা হয়েছিল সবার চিকিৎসা করা যাবে।

এতক্ষণে কান্না থেমে যাওয়ার সুযোগ পেলাম ।

করোনার মহামারীতে সরাসরি পদক্ষেপ যদি আমরা মেনে চলি ইনশাল্লাহ ভাল থাকব। আসুন সবাই সবার জায়গা থেকে কাজ করে সরকার তথা নিজেকে সহোযগিতা করি।

কিন্তু আমাদের সবাইকে সহনশীল হতে হবে। নিজের করে চিন্তা করতে হবে। ফোন করলে ধরতে হবে।ইন্টারনেটে তো করোনা সংক্রামক নয়। অসুস্থ সময়ে ফোনেও শান্তনা পাওয়া যায় ।

লেখক- ইমাউল হক, পিপিএম
পুলিশ পরিদর্শক ।