আবার দেখা হবে কুয়াকাটায়

১৫ তারিখে আমরা ২৫ জন কুয়াকাটার উদ্দেশ্য রাত প্রায় ৯ টায় যাত্রা শুরু করি।কারোর ছিল এটা প্রথম কুয়াকাটা ভ্রমণ আবার কেউ এর আগেও এসেছে। তাতে কি, স্যার, বন্ধুূদের সাথে তো কেউ এভাবে আসে নি।যাওয়ার পথে আমরা ফরিদপুরে রাতের খাবারের জন্য যাত্রা বিরতি করি। পথে দেখলাম মুজিব বর্ষ উপলক্ষে সারা ফরিদপুর শহর আলোকসজ্জায় সজ্জিত। বাসের ভেতরে কোন সময় ঘুমাচ্ছি আবার কোন সময় বন্ধুদের সাথে গল্প করছি। পেছনে বসেছিল মনোয়ার, আলিম, রিয়াজরা। থেকে থেকে ওরা মজার মজার কথা বলছে আর বাসের সবাই হাসছে। যদিও আমাদের ভাড়া করা বাস ছিল না কিন্তু বাসের কেউ আমাদের আনন্দে বাধা দেয় নি। রাতে কখন ফেরিঘাটে পৌছালাম সেটা মনেছিল না তবে কিছু সময় বসে থাকতে হয়েছিল।

ভেবেছিলাম ফেরি পার হতে অনেক সময় লাগবে কিন্তু না, অল্প সময়ে ফেরি পার হলাম। আমরা ফজরের আজানের সময় কুয়াকাটায় পৌছালাম। বাস হোটেলের খানিক আগে আমাদের নামিয়েদিয়েছিল। তারপর কিছুদূর হাটতে হাটতে হোটেলে আসলাম। হোটেলের নাম ছিল বিশ্বাস সি প্যালেস। হোটেলে এসে স্যার- ম্যামরা আমাদের ১ ঘন্টা সময় দিয়েছিল বিশ্রাম নেওয়ার জন্য। আমরা বিশ্রাম নিয়ে কুয়াকাটা মিশন শুরু করলাম।কুয়াকাটার চৌরাস্তা মোড়ে বৈশাখী হোটেলে সকালের নাস্তা খেলাম।

এরপর দিনালো স্যার আমাদের জন্য থ্রি হুইলার ঠিক করলেন। থ্রি হুইলার আমরা পুরো ১ দিনের জন্য ঠিক করলাম। প্রথমে গেলাম মিশ্রীপাড়া বৌদ্ধ মন্দিরে।সেখান থেকে রাখাইন পল্লী। সেখানে আমরা সবাই কেনাকেটা করলাম। তারপর কুয়াকাটা জাতীয় উদ্যান এলাকায় গেলাম। সেখানে আমরা ২০ মিনিট পর্যন্ত ছিলাম। এরপর দুপুরের দিকে আমরা আবার হোটেলের দিকে ফিরলাম। আমি, রাদ, হাফিজ সহ আরো অনেকে সমুদ্রে নামলাম। যদিও আমি সাগরের ধারে ছিলাম।পানিতে অনেক সময় ধরে গোসল করলাম। তারপর আমরা সবাই আবার বৈশাখী হোটেলে দুপুরের খাবার খেলাম। খাবারের তালিকায় রুপচাদা সহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ছিল।আমি রুপচাদা মাছ নিয়েছিলাম। পুরের খাবারের পর সবাই মিলে বিকালে লেবুর চরে গিয়েছিলাম।

চলার পথে আকাশে সূর্য্য ডোবার দৃশ্য অসম্ভব মন জুগিয়েছিল। সন্ধ্যার একটু পর আবার হোটেলের দিকে রওনা দিই। হোটেলে আসার পথে তানজীর স্যার সহ কয়েক বন্ধু শুটকি ক্রয় করে।হোটেলে আসার পর যে যার মতো রুমে চলে গিয়েছিল। আমি, রাদ, শাহীন মিলে এক রুমে ছিলাম। রাদ তো এসে এক ঘুম দিয়ে দিয়েছিল। ক্লান্ত শরীর আমার তাও ঘুম আসে না আমার। একবার বারান্দায় একবার বন্ধুদের ঘরে যাওয়া আসা করতে থাকি। রাত ৯ টার পর বৈশাখী হোটেল থেকে রাতের খাবার কিনে একসাথে খাওয়া- দাওয়া করি। এমন সময় ফুরকান এসে বললো কাল সকালে সাগরের মধ্য দিয়ে চর দেখতে যাবে। শুনেই তো ভয় লাগা শুরু। সাঁতার পারি না এজন্য ভয় লাগছিল।

পরদিন খুব সকালে উঠে পরিপাটি হয়ে একাই গেলাম সাগরের ধারে। সকালে সূর্যের উদয় খানিকটা দেখলাম। এরপর ৮ টা বা ৮.৩০ টার দিকে সবাই বের হলাম চর বিজয়ের উদ্দেশ্য। প্রথমে নৌকায় করে ট্রলারের কাছে যেতে হয়েছে। তারপর ট্রলারে উঠতে হয়েছে। আমি ট্রলারের ভেতরে বসেছিলাম। আর দিনালো স্যার, মনোয়ার, আলিম উপরে বসেছিল। যদিও পরে নিচে এসেছিল। আমাদের সাথে শারমিন ম্যাম বসেছিল। চর বিজয়ে যেতে প্রায় ২ ঘন্টা লেগেছিল। চর বিজয়ে পৌছানোর পর আবার নৌকায় করে চরে যেতে হয়েছিল। চারিপাশে পানি আর মাঝখানে চর। আমার আগে জানা ছিল না যে সাগরের মাঝে এভাবে চর জেগে ওঠে। চর বিজয়ে লাল লাল কাকড়া দেখলাম। তানভীর নামে এক বন্ধু নিজ হাতে কাকড়া ধরেছিল। কাকড়ার দিকে যেতে না যেতে কাকড়া চলে যাচ্ছিল। চর বিজয়ে সাগরের মধ্য দিনালো স্যার সহ অনেক বন্ধুরা নেমেছিল। ওরা আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল আমি দৌড় দিয়েছিলাম। তারপর আবার হোটেলের দিকে রওনা দিলাম। দুপুরে খাবার খেতে খেতে বিকাল হয়ে গিয়েছিল।বিকালের দিকে আমি একটু আবার ঘুরতে গিয়েছিলাম। দেখলাম ২০০ বছর আগে রাখাইনদের নৌকা।

ঐ দিন ছিল শুক্রবার, সমুদ্র সৈকতে লোকে পরিপূর্ণ। আমি সূর্য চলে যাওয়ার দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। নিজ চোখে না দেখলে বর্ণনা করা সম্ভব না। সন্ধ্যার কিছু আগে হোটেলে এসে যশোরে ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে থাকি। হোটেল ছেড়ে আসতে খুব খারাপ লাগছিল। ঠিক সাতটার দিকে আমাদের বাস যশোরের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করে। কিন্তু শহরে এতো গাড়ীর চাপ ছিল যে ১ কি: মি: যেতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগেছিল। এমনকি ফেরিঘাটে ৬ ঘন্টা বসে থাকতে হয়েছিল। পরদিন সকাল ৭ টায় আমরা যশোর পৌঁছায়।
আবার দেখা হবে কুয়াকাটায়।

দেশদর্পণ/এফএফ/এসজে