ওয়ার্ড আ’লীগের ভুয়া উপদেষ্টা সেজে মনোনয়ন হাতিয়ে নিলেন মিন্টু

চট্টগ্রাম মহানগরের চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে চসিক নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আ’লীগের দলীয় মনোনয়ন ভাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড থেকে আ’লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুর বিরুদ্ধে।

মিন্টুকে কৌশলী, সুবিধাবাদী ও অরাজনৈতিক ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করে কাউন্সিলর পদে তার মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে চকবাজার ওয়ার্ড আ’লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তার পরিবর্তে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিও করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে মিন্টুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে চকবাজার ওয়ার্ড আ’লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে
মিন্টুর পরিবর্তে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত যে কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবী জানান নেতৃবৃন্দরা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চকবাজার থানা আ’লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাফর আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর পদে চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে অরাজনৈতিক ব্যক্তি সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে আ’ লীগ থেকে দলীয় সমর্থন দেওয়ায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিব্রতবোধ করছে।’
আরও পড়ুন: দলীয় কোন্দলে আ’লীগের সাবেক এমপির আত্মহত্যার হুমকি

ভুয়া রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে মিন্টু আ’লীগের মনোনয়ন নিয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, ‘কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রকাশিত তালিকার মাধ্যমে জানতে পারি, সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু নিজেকে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা উল্লেখ করে মনোনয়ন চেয়েছেন। অথচ এযাবৎকালে চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের কোনো উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করা হয়নি। তিনি আ’ লীগের রাজনীতিতে কখনো জড়িত ছিলেন না। এমনকি দলের সাধারণ সদস্যও ছিলেন না কখনো।’

মিন্টুকে কৌশলী নেতা দাবি আখ্যা দিয়ে জাফর আহমদ চৌধুরী আরো বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হবার পর কাউন্সিলর হিসেবে ৭৭ সালে আত্মপ্রকাশ ঘটে এ প্রার্থীর। তিনি এতটা কৌশলী, কখনো রাজনীতিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন নি। যখন যার ক্ষমতা ছিল, সেই দলের সাথে সখ্যতা রেখে চলেছেন। যেন ক্ষমতার পালাবদলে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারেন। আজ তিনি আ’লীগের উপদেষ্টা বলে মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য দিয়ে দলীয় সমর্থন আদায় করেছেন, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জ্বার বিষয়।’

এমন একজন ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরূপ মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কখনো জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করেনি, তাকে প্রার্থী হিসেবে দলীয় সমর্থন দেওয়া দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি করেছে। লক্ষ্য করবেন, ১৯৮১ সালের পর দীর্ঘ ৩০ বছরের অধিক সময় ধরে চকবাজার এলাকাটি জামায়াত-শিবির নিয়ন্ত্রিত ছিল। এখান থেকেই সারাদেশে শিবির পরিচালিত হতো। এ এলাকায় আ’ লীগের রাজনীতি করাটা ছিল খুবই কঠিন। জামায়াত-শিবির অধিপত্য বিস্তার করা দীর্ঘ ৩০ বছরের মধ্যে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু কাউন্সিলর হিসেবে কিভাবে বহাল তবিয়তে ছিলেন? কখনো নির্যাতন, হামলা মামলার শিকার হয়েছেন এমন কোন নজির নেই।’
আরও পড়ুন: করোনা প্রতিরোধের পথ সংকুচিত হচ্ছে!

মিন্টুকে জিয়ার আস্থাভাজন হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৭৫ সালে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রতিবাদ তো দূরের কথা, উল্টো মেজর জিয়াউর রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট হন তিনি। যা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজ মুখেই বলেছেন। সেই ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যে ব্যাপক প্রচারিত হয়েছে।’

এ সময় মিন্টুর মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবিও জানান তারা। বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে চকবাজার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টুকে দেওয়া দলীয় সমর্থন প্রত্যাহারের প্রার্থনা করছি। সেই সাথে একজন পরীক্ষিত দুর্দিনের কর্মীকে মূল্যায়নের অনুরোধ জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চকবাজার থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক খালেক চৌধুরী, চকবাজার ওয়ার্ড আ’ লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক রমজু, চকবাজার থানা আ’ লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মো. শাহেদুল আজম শাকিল, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোস্তাক আহমদ টিটু, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন ফরহাদ, চকবাজার ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা কায়সার আহমেদ, যুবলীগ নেতা এসএম হিরু, এসএম সালাউদ্দিন, ছাত্রলীগ নেতা রাসেল, সাজিত, চিন্ময়, রাব্বি প্রমুখ।

দেশদর্পণ/এমএম/এসজে