ভালবাসলেই ভ্যালেন্টাইন, সেলিব্রেট করলেই ভ্যালেন্টাইনস ডে

আজ বিশ্ব ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইনস ডে। সারা বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি । পৃথিবীর আদিমতম সর্ম্পকের নাম ভালোবাসা। একে ঘিরে পৃথিবীতে যত গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাস রচিত হয়েছে, আর কোনো বিষয় নিয়ে তা করা হয়নি। এমনকি ভালোবাসার জন্য কেউ সাম্রাজ্য ত্যাগ করেছেন, কেউ জীবন দিয়েছেন। সেই ভালোবাসাকে চিরসজীব করে রাখতে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে এসেছে ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’ বা ‘বিশ্ব ভালোবাসা দিবস’।

সকাল থেকে জোড়ায় জোড়ায় আবার কেউ কেউ দল বেঁধে ঘুরতে বের হয়েছেন। তবে কম-বেশি সবার হাতেই রয়েছে ফুল। অনেকে একসঙ্গে উপভোগ করেছেন ক্যাম্পাসের নানা দৃশ্য, বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজিত নানা অনুষ্ঠান। ভালোবাসার প্রিয় মানুষটির সঙ্গে ভ্যালেনটাইনের স্মৃতি ফ্রেমে বন্দী করে রাখতে ক্যামেরা বা মোবাইল ফোনে সেলফি ওঠানোর ধুম দেখা যায় সর্বত্র। বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন ভঙ্গিতে প্রিয় মানুষটির সঙ্গে একই ফ্রেমে বন্দী হতে ভুল করছেন না কেউই। বিশেষ এই দিনে, স্থান, ব্যক্তিভেদে রয়েছে ভালোবাসার রকমফের। কি প্রাচ্য, কি পাশ্চাত্য কবিতা, গান আর পংক্তিমালায় অব্যক্ত ভালোবাসা প্রকাশের পথ খুঁজে নেয় শ্বাশত প্রেম।

তবে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরনো। এ নিয়ে একাধিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি যে গল্পটি প্রচলিত সেটি হচ্ছে, দুটি প্রাচীন রোমান প্রথা থেকে এ উৎসবের সূত্রপাত। এক খ্রিস্টান পাদ্রী ও চিকিৎসক ফাদার সেন্ট ভ্যালেনটাইনের নামানুসারে দিনটির নাম ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ করা হয়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি খ্রিস্টানবিরোধী রোমান সম্রাট গথিকাস যুদ্ধে আহত সেনাদের চিকিৎসার অপরাধে সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে মৃত্যদন্ড দেন। মৃত্যুর আগে ফাদার ভ্যালেনটাইন তার আদরের একমাত্র মেয়েকে একটি ছোট্ট চিঠি লেখেন, যেখানে তিনি নাম সই করেছিলেন ‘ফ্রম ইওর ভ্যালেনটাইন’। সেন্ট ভ্যালেনটাইনের মেয়ে এবং তার প্রেমিক মিলে পরের বছর থেকে বাবার মৃত্যুর দিনটিকে ভ্যালেনটাইনস ডে হিসেবে পালন করা শুরু করেন। মানুষকে সেবার অপরাধে মৃত্যদন্ডে দন্ডিত সেন্ট ভ্যালেনটাইনকে ভালোবেসে দিনটি বিশেষভাবে পালন করার রীতি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে রোমের রাজা পপ জেলুসিয়াস এই দিনটিকে ভ্যালেন্টাইন দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন।

আমাদের দেশে ১৯৯৪ সাল থেকে দিবসটি বেশ ঘটা করে পালিত হয়ে আসছে। এদিন শুধু প্রেম বিনিময় নয়, প্রেমিক প্রেমিকাদের মধ্যে গোপণে বিয়ের হিড়িকও পড়ে। দেশের বিভিন্ন উদ্যান, বইমেলা, কফিশপ, ফাস্টফুড শপ, লং ড্রাইভ, অথবা নির্জন গৃহকোণে একান্ত নিভৃতে কাটান প্রেমকাতুর তরুণ-তরুণীরা। দিনটি যে শুধু তরুণ-তরুণীদের তা নয়, পিতামাতা-সন্তানদের ভালবাসাও বড়মাত্রায় উদ্ভাসিত করে। যাঁরা একটু বিজ্ঞ তাঁরা বলেন, প্রেমের কোন দিন থাকে না, ভালবাসলেই ভ্যালেন্টাইন, সেলিব্রেট করলেই ভ্যালেন্টাইনস ডে।

আমাদের দেশে ভালোবাসা দিবস পালনকে ঘিরে থাকে বসন্তের বাড়তি ছোঁয়া। বসন্তের সাথে একাকার হয়ে বাংলাদেশে আজো উৎসবমুখর থাকবে চারদিক। দিবসটি পালনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ নানা স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। পত্র পত্রিকা ছাড়াও টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়াগুলোয় বিশেষ আয়োজন রাখা হয়েছে।

 

লেখক-
রাসেল আহমেদ, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক।
ইমেইল: [email protected]