সরকারি ধান সংগ্রহের তালিকার প্রবাসি ও মৃত ব্যক্তির নাম!

মাগুরা শ্রীপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানজিলুর রহমান ও গুদাম কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয় কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তানজিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম তার নিজস্ব কিছু প্রভাবশালী লোকজনের সাথে সিন্ডিকেট করে প্রকৃত আমন চাষীদের বাদ দিয়ে কৃষক তালিকা তৈরী করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, সরকার প্রান্তিক চাষিদের কথা বিবেচনা করে প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকে আমন ধান সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়।চলতি মৌসুমে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় কৃষকদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৩০৩ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।লক্ষ্য পূরণে যোগ্য কৃষক নির্বাচনের জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর লটারির আয়োজন করেন।যাতে করে প্রকৃত চাষিরা তাদের ন্যায্য মূল্য পান। কিন্তু সরকারের সেই নির্দেশনা এখানে অনেকটাই মানা হচ্ছে না। সরকারী সেই নির্দেশনার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে সংশ্লিষ্টরা তাদের মতো করে কর্ম পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রান্তিক কৃষকদের অভিযোগ, মূল তালিকায় শ্রীপুর উপজেলার মোট ৮ ইউনিয়ন থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, মধ্যম এবং বড় চার প্রকারের ১ হাজার ১০৪ জন কৃষকের নাম প্রকাশ করা হয়। যেখানে আমতৈল গ্রামের বদর উদ্দিন মোল্যার ছেলে মালেক মোল্যা ৪ বছর আগে মারা গেলেও তার নাম রয়েছে।

একইভাবে ওই গ্রামের ইজাহার বিশ্বাসের ছেলে খবির হোসেন ১০ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে থাকেন। তালিকায় তার নামও জুড়ে দিয়েছেন ওই এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ। এমনিভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমিহীন, কাঁচাবাজারের দোকানদার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন, কৃষক নয় এমন অসংখ্য ভূয়া নাম সংযোজন করে তাদের বিপরীতে ধানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: আবাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে পথশিশুদের মাঝে খাবার বিতরণ

সরকারের আমন ধান সংগ্রহের নামে মাগুরার শ্রীপুরে শুরু হয়েছে হরিলুট।এমনকি কৃষক তালিকায় মৃত ব্যক্তির নামও রয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস এবং খাদ্য বিভাগের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের একটি অংশ মিলে গড়ে তোলা সিন্ডিকেটের কারণে স্থানীয় কৃষকরা খাদ্য গুদামে ধান দেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।যার পুরো সুবিধা নিচ্ছে ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা।

চলতি মৌসুমে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলায় কৃষকদের কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৩০৩ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।লক্ষ্য পূরণে যোগ্য কৃষক নির্বাচনের জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর লটারির আয়োজন করেন।

আর সিন্ডিকেট বাণিজ্যের শুরু সেখান থেকেই।উপজেলা প্রশাসন ঘোষিত তালিকা এবং স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে সে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ঘোষিত তালিকায় দেখা গেছে,শ্রীপুর উপজেলার মোট ৮ ইউনিয়ন থেকে ক্ষুদ্র, প্রান্তিক, মধ্যম এবং বড় চার প্রকারের ১ হাজার ১০৪ জন কৃষকের নাম প্রকাশ করা হয়।যেখানে আমতৈল গ্রামের বদর উদ্দিন মোল্যার ছেলে মালেক মোল্যা ৪ বছর আগে মারা গেলেও তার নাম রয়েছে।

একইভাবে ওই গ্রামের ইজাহার বিশ্বাসের ছেলে খবির হোসেন ১০ বছর ধরে মালয়েশিয়াতে থাকেন।তালিকায় তার নামও জুড়ে দিয়েছেন ওই এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ।

এমনিভাবে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভূমিহীন, কাঁচাবাজারের দোকানদার, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, ভূমিহীন, কৃষক নয় এমন অসংখ্য ভূয়া নাম সংযোজন করে তাদের বিপরীতে ধানের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

শ্রীপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতিমণ আমন ধান ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।অথচ সরকার সেখানে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিমণ ধান ১ হাজার ৪০ টাকা দরে কেনার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে কৃষকরা উৎসাহবোধ করলেও গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের কারণে তারা সেই সুবিধা থেকে একেবারেই বঞ্চিত হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: রুয়েট ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের অভিযোগে শীর্ষনেতাদের বিরুদ্ধে মামলা

সিন্ডিকেটের অন্যতম অংশিদার স্থানীয় কতিপয় রাজনৈতিক নেতা তাদের গুদামের গেট থেকেই ফিরিয়ে দিচ্ছেন।আবার কেউ গুদাম পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আদ্রতা-ময়েশ্চারের গল্প শুনিয়ে তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।

শ্রীপুরের গয়েশপুর, শ্রীকোল, সব্দালপুরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের শত শত সাধারণ কৃষক জানান, গুদাম নিয়ন্ত্রণ করছে সিরাজুল ইসলাম টোকন মেম্বার। তার সঙ্গে থাকেন গয়েশপুরের আওয়ামী লীগ নেতা মন্নু মিয়াসহ বেশকিছু সাঙ্গপাঙ্গ।তারা কোনোভাবেই ধান নিয়ে ঢুকতে দিচ্ছেন না।এ সব বিষয়ে গুদাম কর্মকর্তাদের জানিয়েও কিছু হয় না।

শ্রীপুর উপজেলার অনেক কৃষক তাদের এমন বঞ্চনার অভিযোগ জানালেও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানজিলুর রহমান, গুদাম কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সরকার কৃষকদের উত্থাপিত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তানজিলুর রহমান বলেন, এখানে কোনো সিন্ডিকেট নেই।নির্বাচিত কৃষকদের কাছ থেকেই ধান কেনা হচ্ছে। আর দ্রুত গুদামজাত করার স্বার্থে পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য কৃষকদের সরকারি বস্তা দেয়া হলেও কোনো ব্যবসায়ীকে দেয়া হচ্ছে না।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াছিন কবীর বলেন, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের নাম নির্বাচনের পর লটারির মাধ্যমে নির্বাচন করা হয়েছে।কিন্তু সংগৃহীত নামের মধ্যে মৃত, প্রবাসী কিংবা কৃষক নয় এমন ব্যক্তিদের নাম থাকার কথা নয়।তাছাড়া নির্বাচিত কৃষকরা ধান দিতে পারছেন না এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

দেশদর্পণ/এমএম/এসজে