শিশু তোফাজ্জল হত্যা: রিমান্ড শেষে আটক ৭জনকে জেল হাজতে প্রেরন

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে আলোচিত ৭বছরের শিশু তোফাজ্জল অপরহরণ ও নৃশংস ভাবে হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহভাজন সাত আসামিকে রাসেল মিয়া ও শিউলি বেগমের ৫দিন এবং ফুফা সেজাউল কবির ও তার বাবা কালা মিয়া, হাবিবুর রহমান হবি মিয়া, চাচা সালমান মিয়া, লোকমান মিয়ার ৫জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩দিনের রিমান্ড শেষে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের সবাইকে জেলহাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন।

বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জ আদালতে থাকা ইন্সপেক্টর (ওসি) মোঃ আশেক সুজা মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। নিহত তোফাজ্জল তাহিরপুর উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বাশঁতলা গ্রামের মাদ্রাসার ছাত্র ও জুবায়েল হোসেনের ছেলে।

এই হত্যা কান্ডের সাথে রাসেল নিজে জরিত বলে গত মঙ্গলবার বিকালে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শুভদীপ পালের আদালতে ১৬৪ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রাসেল মিয়া উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাঁশতলা গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে।

এদিকে তর্দন্তে ১০দিন পেরিয়ে যাবারপর এই ঘটনায় রাসেল ছাড়া আর কে বা কারা জড়িত ছিল আর অপহরণের পর তোফাজ্জলকে কোথায়-কখন হত্যাকান্ড ঘটানো হয়, কেন-কাদেরকে ফাঁসানোর জন্য এঅবুঝ নিষ্পাপ শিশুকে নৃশংস কায়দায় হত্যা করা হয়েছে এমনকি তর্দন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে মামলার তদন্তকারি অফিসার তাহিরপুর থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, রাসেল জরিত সে স্বীকার করেছে। স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী তদর্ন্তকাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এর বেশী কিছু বলা যাবে না। আমাদের এসপি স্যার এই বিষয়ে সাংবাদিক সম্মলেনের মাধ্যমে বিস্তারিত সব জানাবেন।

এদিকে, পুলিশের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের সময় রাসেল মিয়া স্বীকারোক্তি দিয়ে বলেছে, শুক্রবার(১০জানুয়ারী)রাতে তার খাটেই শুয়েছিল তোফাজ্জল(৭)। সে নিজে খাটে শুবার সময় হঠাৎ করে বিছানার উপর পড়লে তোফাজ্জল চিৎকার দিয়ে ওঠে। তখন তোফাজ্জল যাতে চিৎকার না দেয় এজন্য সে তাকে (তোফাজ্জলকে)বালিশ চাপা দেয়। এক পর্যায়ে তোফাজ্জল শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাওয়ার পর কোন কিছু না বুঝে এই হত্যার দোষ অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর জন্য তোফাজ্জলের চোখ উপড়ে ফেলে, পা ভেঙে মৃতদেহ সিমেন্টের বস্তায় বস্তাবন্দি করে রাখে এমনটাই জানান ঐ পুলিশ কর্মকর্তা।

নিহতের পিতা জুবায়ের হোসেন বলেন,শুনেছি রাসেল স্বীকার করেছে সে জরিত। সেসহ যে বা যারাই আমার অবুঝ শিশু পুত্র অপহরণ করে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকুক তাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। যাতে ভবিষ্যতে আমার সন্তানের মত আর কোন শিশুকে এমন বর্বর নৃংশস হত্যাকান্ডের শিকার হতে না হয়।

তাহিরপুর থানার ওসি আতিকুর রহমান জানান,আমরা রাসেলের স্বীকারোক্তি অনুয়ায়ী পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান স্যারের নির্দেশনার যাচাই বাছাই করছি। তদর্ন্তের স্বার্থে এর বেশী কিছু বলা যাবে না।

উল্লেখ্য, গত ৮ই জানুয়ারী বিকালে নিখোঁজের পর ১১ই জানুয়ারী শনিবার ভোরে রাতে শিশুর চোখ উপড়ে ফেলা পা ভাঙা অবস্থায় সিমেন্টের বস্তাবন্দি অবস্থায় তোফাজ্জলের লাশ হাবিবুর রহমান হবি মিয়ার ছেলে রাসেলের বাড়ীর পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়। লাশ পাবার পর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহ সকালে ও সন্ধ্যায় দুই দফায় ৭জনকে আটক করে পুলিশ। এরপর নিহত শিশুর পিতা বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করে।

দুপুরে রিমান্ড শুনানির মধ্যেই সোমবার (১৩ই জানুয়ারী) বিকালে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোঃ মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশের একটি চৌকস টিম খুন হওয়া তোফাজ্জলের বাড়ী গিয়ে রাসেল মিয়ার শোবার ঘরের খাটের পাশের ছোট ওয়ারড্রব থেকে একটি রক্তভেজা লুঙ্গি, চিঠির বাকী অংশ খাতা ও দুটি বালিশের কাভার উদ্ধার করে। এদিকে ঐদিনই আটক ৭জনের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

দেশদর্পণ/জেএভি/এসজে