‘সোলাইমানিকে হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করে ইসরায়েল’

ইরানের রেভ্যুলেশনারি গার্ড কর্পস-এর কুদস ফোর্সের প্রধান লেফটেন্যান্ট কাসেম সোলামানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেছে ইসরায়েল। ঘটনার সপ্তাহখানেক পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে সে কথা স্বীকার করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের সদর দপ্তর থেকে সন্ত্রাসী হামলা পরিচালনা করা হয় এবং এতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করা হয়।

এনবিসি’র রিপোর্ট অনুসারে, জেনারেল সোলাইমানি যে বিমানে করে বাগদাদে যাবেন তার সময়সূচি সিরিয়ার দামেস্ক বিমানবন্দর থেকে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে জানিয়ে দেয়া হয়। জেনারেল সোলাইমানি ইরাকের প্রধানমন্ত্রী আদিল আব্দুল মাহদির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য বাগদাদ যান।

এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত দুই ব্যক্তি এবং একজন মার্কিন সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা ৩ জানুয়ারি জেনারেল সোলাইমানির ফ্লাইটের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিশ্চিত করে।

চ্যাম উইংস এয়ারলাইন্সের এয়ারবাস এ-৩২০ বাগদাদ বিমানবন্দরে অবতরণ করলে সেখানে অবস্থান করা মার্কিন গোয়েন্দারা সেন্ট্রাল কমান্ডকে জেনারেল সোলাইমানির গন্তব্য নিশ্চিত করে। এরপরই আমেরিকার তিনটি ড্রোন আকাশে অবস্থান নেয়। ইরাকে মার্কিন বাহিনীর একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় সেখানে এসব ড্রোনকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ ছিল না। প্রতিটি ড্রোনে চারটি করে হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছিল।
আরও পড়ুন: ইউক্রেনের ভূপাতিত বিমানের সব অজানা তথ্য

জেনারেল সোলাইমানিকে বহন করা বিমান অবতরণ করলে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিমানের সিঁড়ির কয়েক ধাপ উপরে ওঠেন ইরাকের পপুলার মোবিলাইজেশন ইউনিট বা হাশদ আশ-শাবির সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আবু মাহদি আল-মুহান্দিস।

বিষয়টি আমেরিকার কয়েকজন কর্মকর্তা দেখেন। ভার্জিনিয়ার সদর দপ্তর থেকে সিআইএ’র পরিচালক জিনা হাস্পেল বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন। মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার অন্য একটি স্থান থেকে বিষয়টি দেখছিলেন। হোয়াইট হাউস থেকেও বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার ব্যবস্থা করা হয় তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে সময় সেখানে ছিলেন না, তিনি ছেলেন ফ্লোরিডাতে।

এনবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, দুই কমান্ডার চার দরজার একটি গাড়িতে ওঠেন এবং বাকি লোকজন ওঠেন মিনিভ্যানে। গাড়িগুলো বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করলে মার্কিন ড্রোন সেগুলোকে অনুসরণ করতে থাকে। এসময় গোয়েন্দা সিগন্যাল বিশেষজ্ঞরা সেলফোনের মাধ্যমে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করেন। এনবিসি’র রিপোর্টে বলা হয়েছে, কাতারে অবস্থিত মার্কিন সেন্টাল কমান্ডের তরফ থেকে গাড়ির ভেতরে অবস্থানকারী লোকজনের পরিচয় সম্পর্কে তাদের আর কোনো সন্দেহ ছিল না।
আরও পড়ুন: ভুল করে ইউক্রেনের বিমানে হামলা চালায় সেনাবাহিনী, স্বীকারোক্তি ইরানের

এসময় যারা অভিযান পর্যবেক্ষণ করছিলেন তারা আকস্মিকভাবেই দেখতে পান যে, গাড়িগুলো আগুনের কুণ্ডলিতে পরিণত হয়েছে। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং তার সঙ্গীদের হত্যার জন্য মোট চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়।

মার্কিন কর্মকর্তারা এনবিসি টেলিভিশনকে জানিয়েছেন, যে ড্রোন থেকে জেনারেল কাসেম সোলাইমানি এবং তার সঙ্গীদের ওপর হামলা চালানো হয় সেই ড্রোনের শব্দ বন্ধ ছিল না; তবে বাগদাদের মতো শহুরে পরিবেশে সহজেই তা বোঝা যায় নি। মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, কয়েকদিন ধরে তারা ইরানি কমান্ডারের গতিবিধি অনুসরণ করছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার ইরাকের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, বাগদাদ বিমানবন্দরের কারা আমেরিকার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করেছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া, সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাও চ্যাম এয়ারলাইন্সের দুইজন কর্মীর ব্যাপারে তদন্ত করছে। চ্যাম উইংস এয়ারলাইন্স হচ্ছে একটি বেসরকারি বাণিজ্যিক এয়ারলাইন্স যার সদরদপ্তর দামেস্কে অবস্থিত।

জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ছিলেন বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের কাছে অত্যন্ত সম্মানিত একজন কমান্ডার। তিনি সিরিয়া ও ইরাকে উগ্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দায়েশকে নির্মূল করার ব্যাপারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সূত্র: পার্সটুডে

দেশদর্পণ/এসজে