‘রুট সিলেকশন’ পর্যায়ে রাজশাহী-কলকাতা রেল যোগাযোগ

চিকিৎসাসেবা ও ভ্রমণসহ বিভিন্ন কারণে মানুষকে এখনো যেতে হচ্ছে ভারতে। বিশেষ করে, বহুসংখ্যক অসুস্থ মানুষ চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই যাচ্ছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে। ভারতের মালদহ বা মুর্শিদাবাদ হয়েই রেলপথে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছিলো রাজশাহী।

কিন্তু ১৯৪৭ সালের বিভক্তির পর সেই যোগাযোগ ব্যবস্থাটি বন্ধ হয়ে যায়। তাই ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতার পর এবার আলোচনায় এসেছে রাজশাহী-কলকাতা যাত্রীবাহী ট্রেনসার্ভিস। এ ব্যাপারে প্রথম প্রস্তাবনাটি ছিলো রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশার। এ অ লের মানুষের যাতায়াত সুবিধার কথা চিন্তা করে সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত যাত্রীবাহী একটি ট্রেন চালুর প্রস্তাব করেন। তিনি ২০১৭ সালে ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পাঠান ভারত সরকারের কাছে।

মূলত তার প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে ভারত। আগামী মাসে এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে আশা করা হচ্ছে। এর আগে গত ৩০ অক্টোবর রেলভবনে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাসের সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকও করেছেন।
ওই বৈঠকে জানানো হয়, বর্তমানে দুইটি ট্রেন দিয়ে বাংলাদেশ-ভারত রেলপথ যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা রুটে চলাচল করছে মৈত্রী এক্সপ্রেস, আর খুলনা-কলকাতা রুটে চলছে বন্ধন এক্সপ্রেস।
আরও পড়ুন: ওমানের সুলতান কাবুস আর নেই

এখন রাজশাহী-কলকাতা রুটে আরও একটি ট্রেন সার্ভিস চালু হলে- এটি উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। দেশের শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরবঙ্গের অনেক ফসল রাজশাহী হয়ে রেলপথে ভারতের বাজারে ঢুকতে পারবে। আমদানি-রফতানির জন্য উন্মোচিত হবে নতুন ক্ষেত্র।

ওই বৈঠকে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে রাজশাহী থেকে মালদহ হয়ে কলকাতা পর্যন্ত একটি আন্তঃদেশীয় ট্রেন চালু করার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করা হয়। উভয়পক্ষের আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, বাংলাদেশ এবং ভারতের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রæপ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এছাড়া যমুনা নদীর পশ্চিমপাড়ে ভারতের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত একটি আইসিডি (ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো) নির্মাণের বিষয়েও আলোচনা হয়।

এর আওতায় সিরাজগঞ্জ বাজারে ছোট্ট পরিসরে আইসিডি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। ভারত থেকে ২০টি লোকোমোটিভ সরবরাহ বিষয়ে বলা হয়, কারিগরি দল পরিদর্শন করে বিভিন্ন শর্তাবলী ঠিক করে ইঞ্জিনগুলো দ্রæত আনার বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।

এদিকে ঢাকা-কলকাতা ও খুলনা-কলকাতা দু’টি মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন গেলে সীমান্ত দিয়ে চলাচল করলেও রাজশাহী-কলকাতার ট্রেনটির রুট হবে ভিন্ন। বহুল প্রত্যাশিত ও প্রস্তাবিত রাজশাহী-কলকাতা ট্রেনটি যাবে মালদাহের সিঙ্গাবাদ সীমান্ত দিয়ে। এক্ষেত্রে দূরত্ব ও রেলপথে থাকা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথাও বিশেষ বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। রাজশাহীর মানুষের ভারত যাতায়াতের প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতের সিঙ্গাবাদ, মালদাহ, ফারাক্কা, কাটোয়া, খাগড়াঘাট হয়ে কলকাতার হাওড়ায় রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা আছে।

তাই রাজশাহী-কলকাতা ট্রেন চালুর খবরে এরই মধ্যে রাজশাহীসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর অধিবাসীদের মধ্যে আশার স ার হয়েছে। রহনপুর রেলবন্দর দিয়ে বর্তমানে ভারতের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেন যোগাযোগ চালু রয়েছে। এজন্য দু’দেশের রেলপথও সংস্কার করা হয়েছে। নেপালের রুট দিয়ে বাংলাদেশ থেকে সারও আমদানি করেছে। তবে, তৃতীয় এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর রেলস্টেশন চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস সুবিধা চালু করতে হবে। বর্তমানে রহনপুরে কাস্টমস কার্যালয় থাকলেও তাদের নিজস্ব ভবন নেই। রহনপুর রেলবন্দর চত্বরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস স্টেশন নির্মাণ করার জন্য রেলওয়ের যথেষ্ট জায়গা রয়েছে। সে জায়গাতে এসব কার্যালয় খোলার ব্যাপারেও এখন সম্ভাবনা যাচাই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: ট্রাকের ধাক্কায় পিকআপ চালক নিহত, আহত ২

জানতে চাইলে রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রাজশাহীর মানুষের ভারত যাতায়াতের পথ সুগম করা এবং রাজশাহীর সঙ্গে ভারতে যোগাযোগের নতুন মেলবন্ধন তৈরিতে তিনি এই প্রস্তাবনাটি করেছিলেন। এর মধ্যে দিয়ে এখানকার অর্থনীতির চাকায় গতি আসবে। তার প্রস্তাবনার ব্যাপারে ভারত সাড়া দিয়েছে। এরই মধ্যে ভারতের রেলপথ বিভাগ প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। আগামী মাসে তিনিও আবার বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে কথা বলবেন। তখন এর উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে বলেও আশা করেন বাদশা।

রাজশাহীর সদর আসনের এই সংসদ সদস্য মনে করেন, তৃতীয় এই ট্রেন সার্ভিস চালু হলে ভারতের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্ব পাবে রাজশাহী। তখন রাজশাহী ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে। তাছাড়া রাজশাহী অ লের ভারতগামী বহু মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে। এসব চিন্তা থেকেই তিনি ট্রেনটি চালুর জন্য ভারত সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন।

এছাড়া রাজশাহী-কলকাতা চালুর ‘রুট সিলেকশন’ নিয়ে ডিসেম্বরেই রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমা ল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) মিহির কান্তি গুহ।

তিনি বলেন, কোথাও ট্রেন চালুর উদ্যোগ নিলে তার প্রথম ধাপই হচ্ছে ‘রুট সিলেকশন’। এরপর কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, র‌্যাক নির্ধারণ ও সময়সূচিসহ অন্যান্য বিষয়গুলো পর্যায়ক্রমে চ‚ড়ান্ত করা হয়। তবে, মালদাহ হয়ে ট্রেন চলাচল করলে অন্তত সাড়ে সাত ঘণ্টা সময় বেশি লাগবে বলেও তিনি রেলমন্ত্রীকে জানান।

এই রুটের ম্যাপও রেলমন্ত্রীর কাছে প্রদর্শন করা হয়েছে। যদিও এই রুট দিয়ে এখন মালবাহী ট্রেন চলাচল করছে। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেন ও মালবাহী ট্রেনের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী ভারত হাইকমিশনারসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শিগগিরিই কথা বলবেন। এরপরই ‘রুট সিলেকশন’ চ‚ড়ান্ত হবে। এরপর অনুমোদনসহ অন্য বিষয়গুলো চ‚ড়ান্ত হবে বলেও উল্লেখ করেন পশ্চিমা ল রেলওয়ের মহা-ব্যবস্থাপক।

দেশদর্পণ/এমআরআর/এসজে