জিপিএস বন্ধ হয়ে গেলে সমস্যার সম্মুখীন হবে বিশ্ব

গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস ব্যবহার করা যায় এমন ডিভাইস আমাদের হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটা যদি কাজ না করে তাহলে সামনে এগুনোর সড়ক বন্ধ হতে পারে অথবা গাড়ি চালকদের ধীরগতিতে চালিয়ে যেতে হবে রাস্তায় থাকা সাইনগুলো দেখার জন্য বা বারবার মানচিত্র দেখার জন্য।

আবার ট্রেনে যাতায়াতের বিষয় থাকলে তো ইনফরমেশন বোর্ডে পরবর্তী ট্রেন আসার সম্ভাব্য সময় সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাওয়া যাবে না। ট্যাক্সির জন্য এখন একটি ফোনই যথেষ্ট, উবার অ্যাপই তার প্রমাণ। কিন্তু জিপিএস ছাড়া জরুরি সেবাগুলোও চালানো কঠিন হবে। বিবিসি বাংলা

কারণ অপারেটররা ফোন কে করেছেন তার অবস্থান নির্ণয় করতে পারবে না বা নিকটবর্তী অ্যাম্বুলেন্স বা পুলিশের গাড়ির হদিস পাবে না। কারখানাগুলোও স্থবির হয়ে যেতে পারে কারণ তাদের ইনপুট সময়মত আসবে না। কৃষিকাজ, নির্মাণকাজ, মাছ ধরা কিংবা জরিপ কাজ- এ পাঁচটি খাতে যুক্তরাজ্য সরকারের রিপোর্ট অনুযায়ী পাঁচ দিন জিপিএস না থাকার সময় ক্ষতি প্রায় এক বিলিয়ন ডলার। জিপিএস চব্বিশটি স্যাটেলাইটের সমন্বয়ে করা একটি পদ্ধতি।

এগুলোর সঙ্গে ঘড়ির সময় মেলানো বা সিন্ক্রোনাইজ করা। যখন আপনার স্মার্ট ফোন জিপিএস ব্যবহার করে আপনার অবস্থান ম্যাপে খুঁজে বের করে, তখন এটা আসলে কোনো একটি স্যাটেলাইট থেকে সিগন্যাল গ্রহণ করে এবং সিগন্যাল পাঠানোর সময়ের ভিত্তিতে হিসাব করে। স্যাটেলাইটের ঘড়িতে একটি এক মুহূর্তের হেরফের হয় তাহলে আপনি হয়ত আপনাকেই দুই/তিনশ’ কিলোমিটার দূরে হারিয়ে ফেলবেন।

তাই আপনি যদি সময়ের ভিত্তিতে সঠিক তথ্য চান তাহলে জিপিএসই আসলে সেই জায়গা। এক সেকেন্ডের এক লাখ ভাগের এক ভাগের হেরফেরেও ঘটাতে পারে বড় বিপত্তি। ব্যাংক পেমেন্ট, স্টক মার্কেট, বিদ্যুতের গ্রিড, ডিজিটাল টেলিভিশন সবই নির্ভর করে বিভিন্ন জায়গায় সময়ের ওপর। জিপিএস এগুলোতে কাজ করতে ব্যর্থ হলে এর পরিণতি কতটা ব্যাপক হবে তা আসলে এখন কেউ ধারণাও করতে পারে না। জিপিএসকে এখন বলা হয় অদৃশ্য সেবা।

এর ডলার মূল্য নিরূপণ অসম্ভব। লেখক গ্রেগ মিলনার বলেছেন, কিভাবে জিপিএস বিশ্বকে পরিবর্তন করল? মানুষের শরীরের রেসপিরেটরি সিস্টেমের জন্য অক্সিজেন যতটা মূল্যবান, বিশ্বের জন্য জিপিএস সে রকম? যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনী প্রথমে এর সমর্থন দিয়েছিল কারণ এটা বোমা হামলা চালাতে সহায়তা করে। এমনকি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নিশ্চিত হতে এটা সহায়তা করে।

প্রথম জিপিএস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয় ১৯৭৮ সালে যদিও ১৯৯০ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে সন্দেহযুক্ত ছিল না। অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম যেখানে চালানো হয়েছিল যেখানে ১৬ ফুট দূরেও তেমন দেখা যেত না। জিপিএস ব্যবহার করেই সৈন্যরা মাইন স্থাপনের জায়গা, পানির উৎস খোঁজা এবং একে অন্যের পথে বাধা না হওয়ার কাজ করেছিল। এটা অবশ্যই জীবন রক্ষাকারী এবং সৈন্যরা তাদের পরিবারকে নিজের পয়সা খরচ করে ডিভাইস কিনতে বলেছিল।

প্রশ্ন হচ্ছে সামরিক কারণে জিপিএস গুরুত্বপূর্ণ হলেও যুক্তরাষ্ট্র কেন অন্যদের এটি ব্যবহারের সুবিধা দিতে রাজি হলো? বাস্তবতা হচ্ছে, তাদের আসলে কিছু করার ছিল না। তারা স্যাটেলাইটের দুটি সিগন্যাল পেতে চেয়েছিল-একটি তাদের নিজেদের ব্যবহারের জন্য আর অন্যটি কম সক্ষমতার, সিভিলিয়ানদের জন্য।

কিন্তু কোম্পানিগুলো পরেরটিতেই দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যা অর্থনীতিকেও চাঙ্গা করে তোলে। ২০০০ সালে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হাই গ্রেড সিগন্যালকে অন্যদের জন্য সহজলভ্য করেন। বস্তুতপক্ষে জিপিএস একমাত্র গ্লোবাল নেভিগ্যাশনাল স্যাটেলাইট সিস্টেম নয়। রাশিয়ারও এ ধরনের একটি পদ্ধতি আছে যার নাম গেøানাস। যদিও এটা খুব একটা ভালো মানের নয়। চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নেরও নিজস্ব প্রকল্প আছে। জাপান ও ভারতও এগুলো নিয়ে কাজ করছে।

আরো পড়ুন :
একটি কাঁকড়ার দাম ৩৯ লাখ টাকা!
ঢাবিতে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ভর্তি হতে পারছে না মোহাদ্দেস আলী

এসব বিকল্প স্যাটেলাইট জিপিএসের সমস্যা নিরসনে সহায়তা করতে পারে। তবে এটি সামরিক সংঘাতও বাড়াতে পারে। এমনকি কল্পনা করতে পারেন একটি স্পেস ওয়ারের। স্যাটেলাইট পরিচালনায় ভূমি ভিত্তিক বিকল্পও আছে। এর প্রধানটির নাম ইলোরান। কিন্তু এটি সারা বিশ্বে কাজ করে না। তবে মানুষ চায় এগুলোর উদ্বেগজনক কাজে ব্যবহার কিভাবে কমানো যায়।

০৯ নভেম্বর, ২০১৯  at ১৬:৩৭:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মাক/এজে