স্বর্ণকার দোকানে অগ্নি সংযোগ সিসি ক্যামেরা দেখে আটক ১

লক্ষ্মীপুরে অনন্ত অলংকার এন্ড জুয়েলার্স নামে একটি স্বর্ণকার দোকানে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। দোকানটির সিসিটিভি ক্যামেরায় অগ্নি সংযোগের পুরো ঘটনাটি ধরা পড়েছে।

শনিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের ওই স্বর্ণকার দোকানে অগ্নি সংযোগ করেন উৎপল কর (৪১) নামে এক ব্যক্তি। তিনি ওই দোকানের কর্মচারী। রাতে খবর পেয়ে অভিযুক্ত উৎপলকে আটক করেছে পুলিশ।

এর আগে সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র আবু তাহের ও স্থানীয় কমিশনার উত্তম দত্ত। তারা সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর কর্মচারী উৎপল কর কে পুলিশে সোপর্দ করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন না নেভানো গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটনার আশঙ্কা ছিল বলে ধারণা করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, আটককৃত উৎপল কর লক্ষ্মীপুর পৌরসভার শাখারীপাড়ার বাসিন্দা মৃত শিরোমনি করের ছেলে। স্বর্ণকার দোকানটির মহাজন পরশ কর্মকার একই এলাকার বাসিন্দা মৃত মনোরঞ্জন কর্মকারের ছেলে। প্রায় দুই বছর যাবত পরশের দোকানে কাজ করছে উৎপল।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, দুপুর ১২টা ৪৩ মিনিটের দিকে অনন্ত অলংকার এন্ড জুয়েলার্সের মহাজন পরশ কর্মকার দোকানের কর্মচারী গিরি সেন (৩৮)কে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন। তার পাশেই সিগারেট টানতে টানতে পাঁয়চারি করছিলেন আরেক কর্মচারী উৎপল কর। কিছুক্ষণ পর গিরি সেন কাজ করার জন্য দোকানের অন্য কক্ষে চলে যান। এরপর সিগারেটের বাকি অংশ মহাজন পরশ কর্মকারকে দিয়ে কাজে লেগে যান উৎপল কর। তার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলে পাশের কক্ষে চলে যান মহাজন।

আরো পড়ুন:
চিলমারীর আমতলা চরে স্কুল না থাকায় দুই শতাধিক শিশুর ভবিষ্যত অনিশ্চিত!
চুয়াডাঙ্গায় ৭টি ভারতীয় গরু আটক করেছে বিজিবি

এরপর ২/৩ মিনিটের মধ্যেই অগ্নি সংযোগের ঘটনাটি ঘটে। কর্মচারী উৎপল কর লাইটার দিয়ে একটি পকেট গ্যাস সিলিন্ডারে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর দোকানের কিছু কাগজপত্রাদিতে আগুন ছড়িয়ে দেন। মুহুর্তেই ধোঁয়ায় সাদা হয়ে যায় পুরো দোকানঘর। টের পেয়ে দোকানটির মহাজন পরশ কর্মকার, কর্মচারী গিরি সেনসহ অন্যান্যরা ছুটে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, অনন্ত অলংকার এন্ড জুয়েলার্সের পাশেই গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান। সময় মতো আগুন নেভানো না গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা ছিল। তাছাড়া সিসিটিভি ক্যামেরা না থাকলে ঘটনার রহস্য এত সহজে উদঘাটন করা সম্ভব হতো না।

মহাজন পরশ কর্মকার বলেন, ‘উৎপল যখন ব্যবসায়ে মার খেয়ে যখন পথে পথে ঘুরছিল, তখন আমি তাকে কাজ দেই। তার সঙ্গে আমার খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তার কাছ থেকে আমি কিছু টাকা পাই, এ নিয়ে কখনও কোনো ঝামেলা হয়নি। সম্প্রতি জায়গা জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে আমার প্রতিবেশী একটি পক্ষের দায়ের করা মামলায় আমি ৪২ দিন কারাগারে ছিলাম। তখন আমার দোকানের দায়-দায়িত্ব উৎপলের হাতেই ছিল।’

পরশ কর্মকারের ধারণা, ‘তার অনুপস্থিতিতে তার প্রতিপক্ষের সঙ্গে আঁতাত করেছিল কর্মচারী উৎপল। এরপর অগ্নি সংযোগের ঘটনাটি ঘটিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে।’

এদিকে স্থানীয় কমিশনার উত্তম দত্ত জানান, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নিশ্চিত হওয়ার পর দোকানের কর্মচারী উৎপল করকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, মহাজন পরশ কর্মকারের অনুপস্থিতিতে দোকানের কিছু স্বর্ণ ও টাকা এদিক সেদিক করেছিল উৎপল। সেই হিসাব ঢাকা দিতেই ঘটনাটি ঘটানো হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত উৎপল করের মুটোফোনে কল দিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্মীপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) প্রেমানন্দ বলেন, স্বর্ণকার দোকানে অগ্নি সংযোগের ঘটনায় উৎপল কর নামে একজনকে আটক করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

অক্টোবর ২৭, ২০১৯ at ১৩:৩০:৩০ (GMT+06)
দেশদর্পণ/আহা/আক/মোআকা/এএএম